ভরসা: অভিজিতের দিকে তাকিয়ে ভারত। ফাইল চিত্র
কলম্বিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে নাগালের মধ্যে পেয়েও ভারতের হার। নিজেদের পাড়ার ছেলে অভিজিৎ সরকারের ভারতীয় ফুটবলের নায়ক হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া। সব মিলিয়ে সোমবার রাতের ম্যাচের পরে বিষণ্ণ হুগলির ব্যান্ডেলের হেমন্ত বসু কলোনি।
অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে ব্যান্ডেলের অনামী পাড়াটি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ এই পাড়ার ছেলে অভিজিৎ সরকার ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসা। দলের ১০ নম্বর জার্সির মালিক এই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকছে গোটা দেশ। বিশ্বকাপের গোড়া থেকেই তাঁর বাবা-মা থেকে শুরু করে পাড়াপড়শি বা বন্ধুবান্ধব— সকলের একটাই প্রার্থনা, অভিজিৎ যেন গোল পায়। যেমনটা হয়েছিল মাস কয়েক আগে ইতালির একটি দলের বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কলম্বিয়া, দু’টি ম্যাচেই গোলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল সে। সোমবার রাতে কলম্বিয়া ম্যাচে তো সামনে ছিল শুধুই গোলরক্ষক। একক প্রচেষ্টায় গোলের সুযোগ তৈরি করেও পারল না।
আরও পড়ুন: কর্নারের ঠিক আগেই প্ল্যান বদলেছিলাম: জিকসন
জিটি রোডের ধার দিয়ে পিচ রাস্তা ছেড়ে ইটের রাস্তা। তারই পাশে অভিজিতদের এক কামরার বাড়ি। মঙ্গলবারের পড়ন্ত বিকেলে স্থানীয় উন্নয়ন সমিতির মাঠের সামনে সিমেন্টের লম্বাটে চাঁইয়ের উপর বসে অভিজিৎকে নিয়েই আলোচনা করছিলেন পাড়ার কয়েকজন। পাশের মাঠে ফুটবল খেলছিল ছোটরা। পাড়ার চারপাশে লাগানো অভিজিতের ছবি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে প্রতিপক্ষ দেশগুলি অনেক এগিয়ে। শক্তি এবং স্কিলেও অনেক তফাত। তবু প্রথম দু’টি ম্যাচেই প্রথম একাদশে জায়গা করে নেওয়া অভিজিৎ-কে নিয়ে গর্বই করছে তাঁর পাড়া। শুধু একটাই আক্ষেপ, পাড়ার ছেলের ওই শটটা যদি কলম্বিয়ার জালে জড়িয়ে যেত! তাহলেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ত ব্যান্ডেলের ছেলের নাম।
এক স্থানীয় বাসিন্দা আফশোস করছিলেন, ‘‘বলতে পারেন, অভিজিতের মতো আমরাও ইতিহাসের সামনে থেকে ফিরে এলাম। তবে আমরা হতাশ নই।’’ তিনি জানালেন, বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই অভিজিতের ছবি এবং জাতীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে গোটা পাড়া। মঙ্গলবার নতুন করে আরও ফ্লেক্স এবং ব্যানার টাঙানো হয়েছে। পাড়ার ছেলের এই সাফল্য স্থানীয় ছেলেপুলেরা নতুন করে ফুটবল মাঠে আসছে।
শুধুই ব্যানার-ফ্লেক্স নয়, উত্তম দাস নামে হেমন্ত কলোনির এক বাসিন্দা তো তারাপীঠে গিয়ে অভিজিতের নামে পুজোও দিয়ে এসেছেন। বন্ধুরা পুজোও দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচে খেলা দেখার জন্য বড় পর্দা টাঙানো হয়েছিল। সোমবার ঝড়বৃষ্টির কারণে অনেকটা সময় এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। তাই অনেকে ইন্টারনেটে খেলা দেখেছেন। কেউ ছুটেছেন বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে।
অভিজিতের বাবা হরেন সরকার নিজে ফুটবল খেলতেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলে গোলটা করলে খুব ভাল লাগত। ওকে বলতে চাই একটাই কথা— চালিয়ে যা। ও পারবে।’’ মা অলকাদেবী ফুটবল বলতে শুধু গোলই বোঝেন। তাঁর কথায়, ‘‘খারাপ লাগছে ঠিকই। আশা করব, পরের দিন ঠিক গোল পাবে।’’ শুধু পাড়ার ছেলে-বুড়োরাই নয়, অভিজিতের জন্য ফুটবল দেখতে শুরু করেছে মেয়েরাও। অভিজিতের গোলের সুযোগ নষ্ট নিয়ে মঙ্গলবারও আফশোস করছিলেন এক গৃহবধূ। অভিজিতের সৌজন্যে তিনি জীবনে প্রথমবার টিভিতে ফুটবল দেখা শুরু করেছেন। আপাতত, ঘানা ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে হেমন্ত বসু কলোনি। মহল্লায় একটাই প্রার্থনা, এ বার যেন শটটা গোলে ঢোকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy