বাঙালিকে বিশ্বকাপ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রিচা। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
টিনএজার। বয়স মাত্র ১৬!
আর এই বয়সেই ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ঢুকে পড়ল শিলিগুড়ির রিচা ঘোষ। যাঁকে নিয়ে স্থানীয় ক্রিকেটমহল রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। এই ডানহাতিকে বলা হচ্ছে আগামী দিনের তারকা। স্বয়ং রিচা যদিও অভিভূত নয়। বরং স্বপ্ন সফলের দিনে বাস্তবের মাটিতে পা রাখতেই পছন্দ করছে।
রবিবার দুপুরে চন্দননগরে সিএবি-র চ্যালেঞ্জারে খেলার ফাঁকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেই দিল, “বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন ছিল। চেষ্টা করছিলাম দলে আসার। এসেছি। ভাল লাগছে।” উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া নেই, একেবারেই নিরুত্তাপ গলা। যেন রোজকার রুটিন মেনেই চলছে সবকিছু! বাবা মানবেন্দ্র ঘোষও স্বাভাবিক। মোবাইলে বললেন, “চান্স পেয়েছে ভাল। এটাই লক্ষ্য ছিল। কিন্তু লক্ষ্য একশো শতাংশ পূর্ণ তখনই হবে, যখন ও পারফর্ম করবে। সেটা না হলে নয়।”
ময়দানে রিচার পরিচিতি বিগহিটার হিসেবে। বাংলার মহিলা দলের কোচ শিবশঙ্কর পাল যেমন বলেই দিলেন, “অসাধারণ ট্যালেন্ট। যদি মাথা ঘুরে না যায়, যদি লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারে, তা হলে অনেক দূর যাবে। ওর যা ব্যাটিংয়ের ক্ষমতা, তাতে দেশের অন্যতম সেরা হবে। ও হল বিগহিটার। বড় শট মারতে পারে।” আর তুলে তুলে মারার সেই দক্ষতাই জাতীয় স্তরে চিনিয়েছে রিচাকে।
মহিলাদের চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে এক ম্যাচে ইন্ডিয়া সি দলের বিরুদ্ধে ১৪৯ রান তাড়া করতে নেমে টানটান উত্তেজনার মধ্যে ২৬ বলে ৩৬ করেছিল রিচা। যাতে ছিল চারটি চার ও একটি ছয়। সেই ইনিংসই জাতীয় নির্বাচকদের নোটবুকে নাম তোলে। ইন্ডিয়া সি-র বিরুদ্ধে অন্য ম্যাচে ২৫ রানের ইনিংসও প্রশংসিত হয়েছিল। মিডল অর্ডারে তুলে তুলে মারার ক্ষমতা কাজে আসবে, এই ভাবনাই বিশ্বকাপে জাতীয় দলের দরজা খুলে দিল ষোড়শীর সামনে।
বাংলা মহিলা দলের কোচ শিবশঙ্কর পাল ও সহকারী কোচ চরণজিৎ সিংয়ের সঙ্গে রিচা। রবিবার চন্দননগরে। —নিজস্ব চিত্র।
স্বয়ং রিচা ভালওবাসে গগনে গগনে খেলতে। নিজেই তুলল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির লফটেড শটের কথা। বলল, “ফিনিশার ধোনিকে ভাল লাগে।” নিজেও যে ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করতে পারে, তার নমুনা দেখা গিয়েছে চ্যালেঞ্জার ট্রফিতেই। প্রিয় ব্যাটসম্যান অবশ্য ধোনি নন। নন ওপেনিংয়ে ধুমধাড়াক্কা মারা রোহিত শর্মাও। রিচার আদর্শ এমন একজন ক্রিকেটার যিনি নিজেও কম বয়সে অভিষেক ঘটিয়েছিলেন। অবধারিত ভাবেই তিনি সচিন তেন্ডুলকর। ১৫ বছর বয়সে টেস্টের দুনিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন মুম্বইকর। বঙ্গতনয়া সেখানে ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে নীল রঙা জার্সি গায়ে চাপাতে চলেছেন। রিচার কথায়, “আমার আইডল সচিন। নিয়মিত ভিডিয়ো দেখি ব্যাটিংয়ের। সচিনের নানা শট ভাল লাগে। কভার ড্রাইভ, লফটেড মারার চেষ্টা করি। সচিনের পর থাকছে ধোনি।”
রিচা অবশ্য শুধুই ব্যাটিং করে তা নয়। বরং এমন প্রশ্ন রাখাই যায় যে, রিচা ঠিক কী করে না? ব্যাট হাতে যেমন শুধু মিডল অর্ডারেই নামে না, প্রয়োজনে ওপেনিংও করতে পারে। আবার নতুন বল হাতে মিডিয়াম পেসেও যথেষ্ট দক্ষ। নিয়মিত উইকেটও আসছে। এমনকি উইকেটকিপার হিসেবেও দিব্যি চালিয়ে দিতে পারে। বহুমুখি প্রতিভা কী ভাবে জন্ম নিল? বাবা ফিরে গেলেন শুরুর দিনগুলোয়, “আমি নিজেও খেলতাম। ব্যাটসম্যান-বোলার-কিপার, সবই হতাম। শিলিগুড়িতে আমার সঙ্গেই বাঘাযতীন ক্লাবে চলে আসত ছোট্ট রিচা। দেখলাম, আগ্রহ রয়েছে। সাড়ে চার বছর বয়স থেকে খেলতে শুরু করল। ব্যাটসম্যান-কিপার হিসেবে শুরু করেছিল। পরবর্তীতে বাংলার হয়ে আন্তঃরাজ্য প্রতিযোগিতায় বোলিং শুরু করল।” বোঝা গেল, ব্যাটিং-বোলিং-কিপিং, রিচার থ্রি-ডি ক্রিকেটার হয়ে ওঠা স্বাভাবিকই। জিনেই তো তা রয়েছে।
শিলিগুড়ি থেকে ক্রিকেটীয় পরিকাঠামো মিলবে না, এই উপলব্ধিই রিচাকে নিয়ে এসেছিল কলকাতায়। লড়াইয়ের সেই দিনগুলোর কথা শোনালেন বাবা, “আমার মা অসুস্থ। স্ত্রীকে মায়ের দেখাশুনো করতে হত। তাই রিচাকে আমি নিয়ে আসতাম কলকাতায়, থাকতাম ওর সঙ্গে। এ ভাবেই চলেছি। কঠিন দিন গিয়েছে। নানা রকমের প্রতিকূলতা ছিল। সবই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। এখানে কোনও কিছু চিনতাম না, জানতাম না। সেগুলো জানতে সময়ও লেগেছে।” সিএবি-র সঙ্গে এখন আম্পায়ারিং নিয়ে যুক্ত থাকায় কিছুটা সুবিধা অবশ্য হয়েছে। অহেতুক কোনও হয়রানিতে পড়তে হয়নি। রিচাও তা মেনে নিল, “প্রথমে অসুবিধা তো হচ্ছিলই। তবে বাবা ছিল বলে তেমন সমস্যা হয়নি।”
মহিলা ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন ক্রিকেটার ও নির্বাচক মিঠু মুখোপাধ্যায় জানালেন, ১৩ বছর বয়সে কলকাতায় চলে এসেছিল রিচা। বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক স্তরে সাফল্য সিনিয়র বাংলা দলে পৌঁছে দিয়েছিল। কেমন ক্রিকেটার রিচা? মিঠুর মূল্যায়ন, “ভীষণ ভাল। দুর্দান্ত সম্ভাবনা।” বিগ হিটিং, ওপেনিং বোলিং তো আছেই, শিবশঙ্কর আবার শোনালেন ফিল্ডিংয়ের কথাও। বললেন, “সবকিছু করে ও। টেরিফিক ফিল্ডার। ১৬ বছর বয়সেই এত কিছু। ভাবা যায় না!”
শিবশঙ্করের থেকে রিচা আবার চেষ্টা করছে বোলিংয়ের ধার বাড়াতে। ছাত্রীর কথায়, “হিট দ্য ডেক করে বোলিংয়ে জোর দিয়েছেন কোচ। বলেছেন, লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে। যতটা পারি, সেই চেষ্টাই করছি।” বোলিংয়ে রিচার আদর্শ আবার ঝুলন গোস্বামী। বলল। “ম্যাচ চলছে বলে কথা হয়নি। তবে তাড়াতাড়ি কথা বলব ঝুলনদির সঙ্গে।” চ্যালেঞ্জারে খেলার সময় হরমনপ্রীত, স্মৃতি মন্ধানাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ফলে, জাতীয় দলের আবহের সঙ্গে পরিচিতি ঘটেছে। এ বার প্রতীক্ষা ক্যাঙারুদের দেশে বিশ্বকাপ অভিযানে নামার।
রিচার হাতে কি উঠবে বিশ্বকাপ? বাঙালি কন্যা তা পারলে ভাল। না পারলেও ক্ষতি নেই। ১৬ বছর বয়সির যা প্রতিভা, তাতে আগামী দিনে বিকশিত হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। অন্তত ক্রিকেটমহল তো সেই স্বপ্নই দেখছে!
📢Squad Announcement📢@ImHarmanpreet will lead India's charge at @T20WorldCup #T20WorldCup #TeamIndia pic.twitter.com/QkpyypyJKc
— BCCI Women (@BCCIWomen) January 12, 2020
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy