আশাহত: শেষ দিনে ফলো অন করিয়েও জয় অধরা। হতাশ মনোজ তিওয়ারিরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল বাংলাকে। ম্যাচের চতুর্থ দিনের প্রথম দু’ঘণ্টায় অশোক ডিন্ডা ও অনুষ্টুপ মজুমদার বিপক্ষের শিবিরে আতঙ্ক ছড়ালেও বুদবুদের মতোই আশা তৈরি হয়ে মিলিয়ে গেল।
বাংলার ৫১০ রানের জবাবে ২৫৪-৫ স্কোরে দিন শুরু করেছিল মধ্যপ্রদেশ। দিনের তৃতীয় বলেই ডিন্ডার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন অঙ্কিত শর্মা। তাঁর সঙ্গে পার্টটাইম স্পিনার অনুষ্টুপের ঘূর্ণি বিপক্ষের প্রথম ইনিংস ৩৩৫ রানে শেষ করতে সাহায্য করে। ডিন্ডা নেন চার উইকেট। অনুষ্টুপের ঝুলিতে তিন শিকার। ১৭৫ রানে পিছিয়ে থেকে ফলো-অন করার পরে নেমে ৬৯ রানের মধ্যেই তিন উইকেট হারায় মধ্যপ্রদেশ। তখনও দিনের প্রায় ৫০ ওভার খেলা বাকি। বাংলার কাছে ইনিংসে জেতার সুযোগ তৈরি হলেও চোট-আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বাংলা। অশোক ডিন্ডার বাঁ হাঁটুর চোট ম্যাচ জেতার রাস্তায় সব চেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
একেই তিন বোলারে খেলছিলেন মনোজরা। তার উপর প্রধান পেসারের চোট পাওয়া জোরালো ধাক্কা হিসেবে দেখা দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ডিন্ডার পরিবর্তে বোলিং শুরু করেন ঈশান ও অমিত। ২৩তম ওভারে ডিন্ডা বল করতে এলেও দু’টি বল করার পরেই বাঁ হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করেন। কোনও রকমে সেই ওভার শেষ করেই মাঠ ছে়ড়ে বেরিয়ে যান তিনি। ডিন্ডা চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে আর একটিও উইকেট তুলতে পারেননি ঈশান, অমিত, আমির গনিরা। পেসারদের বলে তেমন গতি বা ধারও চোখে পড়েনি।
অধিনায়ক মনোজ যদিও বোলারদের দোষ দিতে নারাজ। তাঁর মতে, পিচ থেকে খুব বেশি সাহায্য উপযুক্ত সাহায্য পাওয়া যায়নি। তাই চতুর্থ বোলার খেলানো হলেও কোনও লাভ হত না। ম্যাচ শেষে মনোজ বলেন, ‘‘পিচে স্পিনাররা কোনও সাহায্য পাচ্ছিল না। চতুর্থ বোলার খেলালেও লাভ হত না।’’ তবে লাঞ্চের পরেই নমন ওঝাকে দুরন্ত ডেলিভারিতে পরাস্ত করেন লেগস্পিনার অনুষ্টুপ। নমনের অফ-মিডল স্টাম্পে বল পড়ে বাইরের দিকে স্পিন করে। এতটাই বলের কাছে চলে গিয়েছিলেন নমন যে, ব্যাট সরানোর উপায় ছিল না। ব্যাটের কানায় লেগে বিবেক সিংহের হাতে ক্যাচ দিয়ে যান বিপক্ষ অধিনায়ক (২)। তার আগেই রজত পাটিদার (১৪)-কে ফেরান অনুষ্টুপ। পার্ট-টাইম বোলার হলেও অনুষ্টুপই একমাত্র বোলার যাঁকে সমীহ করে খেলছিলেন মধ্যপ্রদেশ ব্যাটসম্যানেরা। কিন্তু ঈশান ও অমিতের ছন্নছাড়া বোলিং বিপক্ষের চাপ হাল্কা করে দেয়। দিনের শেষে সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকেন আর্যমান বিড়লা ও শুভম শর্মা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তৃতীয় ম্যাচেই সেঞ্চুরি পেলেন আর্যমান। ১০৩ রানে অপরাজিত তিনি। শুভম অপরাজিত ১০০ রানে। ২৪০-৩ স্কোরে ম্যাচ শেষ করে মধ্যপ্রদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ডিন্ডার পাশাপাশি মাত্র সাত ওভার বল করে মাঠ ছাড়েন ঈশানও। দলীয় সূত্রে খবর, পায়ে ফোস্কা পড়ার কারণে তিনি বল করতে পারেননি। বাংলার দুই প্রধান পেস অস্ত্র ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পরে মনোজ, অভিমন্যু ঈশ্বরন এমনকি কৌশিক ঘোষকেও বল করার দায়িত্ব নিতে হয়। রঞ্জিতে ভাল কিছু করতে হলে গোটা দলের ফিটনেস স্তর যে অনেক উঁচুতে তুলতে হবে, তা পরিষ্কার।
আর চার দিন পরেই (২০ নভেম্বর থেকে) কেরলের বিরুদ্ধে বাংলার ম্যাচ শুরু। তার আগে ডিন্ডা ও ঈশান সুস্থ হবেন কি না, প্রশ্ন থাকছে। মনোজ অবশ্য আশাবাদী, ‘‘আমি নিশ্চিত, পরের ম্যাচে দু’জনকেই পাওয়া যাবে।’’ তবে কেরলের বিরুদ্ধে এ ধরনের পিচে খেলতে চাইবে না বাংলা। ম্যাচ শেষে দেখা গেল মেন্টর অরুণ লাল এবং কোচ সাইরাজ বাহুতুলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলছেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যা ইঙ্গিত, পিচে আরও প্রাণ চাইবে বাংলা শিবির। মনোজও বলে গেলেন, ‘‘পরের ম্যাচে পুরো ছয় পয়েন্ট চাই। এ ধরনের পিচে যা একেবারেই সম্ভব নয়।’’
রঞ্জি ট্রফি মরসুমের প্রথম দু’ম্যাচে বাংলা ছয় পয়েন্ট পেলেও ফিল্ডিং নিয়ে এখনও দুশ্চিন্তা রয়েইছে। তৃতীয় দিন দু’টি ক্যাচ ও একটি স্টাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট হওয়ার পরে চতুর্থ দিনও ক্যাচ পড়ে দু’টি। আর দু’টি ক্ষেত্রেই ভূমিকা ছিল ঈশ্বরনের। ফলে ফিটনেসের সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও উন্নতি না ঘটালে ভুগতে হতে পারে।
এ বারের রঞ্জি ট্রফির নিয়মেও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। এলিট গ্রুপ ‘এ’ ও ‘বি’-তে রয়েছে মোট ১৮টি দল। তার মধ্যে পয়েন্টের বিচারে সেরা পাঁচটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে। ‘সি’ গ্রুপ থেকে দু’টি দল যাবে শেষ আটে। প্লেট গ্রুপ থেকে সুযোগ পাবে একটি দল। বাংলা ‘বি’ গ্রুপে থাকায় তাদের সামনে রাস্তা কঠিন। দ্রুত পয়েন্ট বাড়াতে না পারলে শেষ আটের রাস্তা আরও কঠিন হতে শুরু করবে। দ্বিতীয় ম্যাচের শেষে ‘বি’ গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে ছয় পয়েন্টে রয়েছে বাংলা। দুই গ্রুপের পয়েন্টের বিচারে মনোজেরা এখন চতুর্থ স্থানে। মনোজ মানছেন, পরের ম্যাচ থেকে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে হবে তাঁর দলকে। বললেন, ‘‘তিন পয়েন্টের ম্যাচ খেললে চলবে না। পরের ম্যাচে ছয় পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাতেই হবে।’’
স্কোরকার্ড
বাংলা ৫১০-৯ (ডি.)
মধ্যপ্রদেশ ৩৩৫ ও ২৪০-৩
মধ্যপ্রদেশ (আগের দিন ২৫৪-৫-এর পর প্রথম ইনিংস)
যশ দুবে ক বিবেক বো ডিন্ডা ৩৮
অঙ্কিত শর্মা ক বিবেক বো ডিন্ডা ১৩
মিহির হিরওয়ানি ক বিবেক বো ঈশান ৮
কুলদীপ সেন রান আউট অমিত ১৮
আবেশ খান ন. আ. ১১
ঈশ্বর পাণ্ডে ক ও বো অনুষ্টুপ ১৫
অতিরিক্ত ১৪
মোট ৩৩৫
পতন: ১-২২ (বিড়লা, ১২.৪), ২-৬৫ (দানে, ২৬.৫), ৩-১২৬ (পাটিদার, ৪১.৬), ৪-২১৪ (ওঝা, ৭৪.৪), ৫-২২৩ (শুভম, ৭৬.১), ৬-২৫৮ (অঙ্কিত, ৮৬.৩), ৭-২৭৯ (হিরওয়ানি, ৯১.৪), ৮-৩০২ (দুবে, ৯৬.৫), ৯-৩১৪ (কুলদীপ, ১০২.৫), ১০-৩৩৫ (ঈশ্বর, ১০৫.৫)।
বোলিং: অশোক ডিন্ডা ২৮-৯-৭৮-৪, ঈশান পোড়েল ২৭-৪-৯২-১, বি অমিত ১৭-২-৫৪-০, আমির গনি ২১-১-৫৯-১, অনুষ্টুপ মজুমদার ১১.৫-১-৩৮-৩, মনোজ তিওয়ারি ১-০-৩-০।
মধ্যপ্রদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)
আর্যমান বিড়লা ন. আ. ১০৩
অঙ্কিত দানে ক বিবেক বো গনি ১১
রজত পাটিদার ক সুদীপ বো অনুষ্টুপ ১৪
নমন ওঝা ক বিবেক বো অনুষ্টুপ ২
শুভম শর্মা ন. আ. ১০০
অতিরিক্ত ১০
মোট ২৪০-৩
পতন: ১-২০ (দানে, ১১.৬), ২-৬১ (পাটিদার, ২৪.৩), ৩-৬৯ (ওঝা, ২৬.৩)।
বোলিং: ঈশান পোড়েল ৭-২-১৩-০, বি অমিত ১৪-৩-৪১-০, আমির গনি ২২.২-৫-৫৩-১, অশোক ডিন্ডা ১-১-০-০, অনুষ্টুপ মজুমদার ১০-০-৬০-২, মনোজ তিওয়ারি ৯-০-৪০-০, কৌশিক ঘোষ ১-০-৭-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy