Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

পেস-স্পিন দাপটে তিন দিেনই শেষ আজহারের রাজ্য দল

কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মাঠে তিন দিনে হায়দরাবাদকে ইনিংস ও ৩০৩ রানে হারিয়ে বাংলা প্রমাণ করে দিল, তাদেরও অঙ্কের বাইরে রাখা ভুল।

উচ্ছ্বাস: হ্যাটট্রিকের পরে শাহবাজ। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উচ্ছ্বাস: হ্যাটট্রিকের পরে শাহবাজ। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২০
Share: Save:

বিদর্ভের বিরুদ্ধে দু’দিনে হারের পরে যে সমর্থকেরা ভেবেছিলেন, এই দলের কোনও ভবিষ্যৎ নেই, তাঁদের সমস্ত ভ্রান্তি সম্ভবত দূর হয়ে গেল মঙ্গলবার।

কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মাঠে তিন দিনে হায়দরাবাদকে ইনিংস ও ৩০৩ রানে হারিয়ে বাংলা প্রমাণ করে দিল, তাদেরও অঙ্কের বাইরে রাখা ভুল। বোনাস পয়েন্ট নিয়ে জিতে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন মনোজ তিওয়ারি, আকাশ দীপ, শাহবাজ আহমেদরা। ক্রিকেট এ ভাবেই চমক দেয় প্রতি মুহূর্তে। যে মনোজ তিওয়ারিকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বড় ইনিংস খেলার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন, তাঁর অনবদ্য ৩০৩ রানই পার্থক্য গড়ে দিল ম্যাচে। সঙ্গে উপহার দিল এক নতুন তারকাকে। তিনি শাহবাজ আহমেদ। এ দিন বিপক্ষের প্রথম ইনিংসের ৪৭তম ওভারের প্রথম তিন বলে তিনি ফিরিয়ে দেন জাভেদ আলি (৭২), রবি কিরণ (০) ও মাথায় আঘাত পেয়ে ফিরে আসা সুমন্ত কোল্লাকে (৮)।

হ্যাটট্রিক করে কী ভাবে উৎসব করবেন, বুঝতে পারেননি ২৬ বছর বয়সি অলরাউন্ডার। শূন্যে লাফিয়ে আকাশে হাত ছুড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ততক্ষণে তাঁকে ঘিরে ফেলেন সতীর্থেরা। কিন্তু সীমিত উৎসবেই খুশি থাকতে হয় বাঁ-হাতি স্পিনারকে। তখনও যে বিপক্ষকে দ্বিতীয় বার অলআউট করার কঠিন কাজটি বাকি। দায়িত্ব নেন আকাশ দীপ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে অধিনায়ক তন্ময় আগরওয়াল তাঁর গতিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউ হন। রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন আকাশ। উইকেটের খিদে তাঁর গতি যেন আরও বাড়িয়ে দেয়। তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসা বি রাহুল গতির ভয়ে লেগস্টাম্পে সরে যাচ্ছিলেন। মহম্মদ শামির পরে সম্প্রতি বাংলার কোনও বোলারের গতিতে ভয় পেতে দেখা যায়নি বিপক্ষকে। কিন্তু কল্যাণী অন্য রূপকথার সাক্ষী রইল। প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানে অলআউট হওয়ার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিনের রাজ্য দল অলআউট ১৬১ রানে। ৩৮ রানে চার উইকেট নেন আকাশ। দুই উইকেট শাহবাজের। একটি করে উইকেট মুকেশ কুমার ও অর্ণব নন্দীর।

ভিশন ‘২০২০’-র ব্যাটিং উপদেষ্টা ভিভিএস লক্ষ্মণ যদি ম্যাচ দেখতে আসতেন, তা হলে যেমন বাংলার সাফল্যে খুশি হতেন, তেমনই ভীত হতেন তাঁর রাজ্য দলের ব্যাটিং দেখে। এক সময় ভারতীয় ক্রিকেটকে মহম্মদ আজহারউদ্দিন, লক্ষ্মণের মতো তারকা উপহার দিয়েছে যে দল, এখন তারা রীতিমতো ধুঁকছে।

বাংলার কোচ অরুণ লাল বলেই দিলেন, ‘‘এটাই বাংলার অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ। তরুণ পেস বিভাগ হলেও আকাশ ও মুকেশ প্রমাণ করে দিয়েছে ওরা কতটা ভয়ঙ্কর। দিল্লির বিরুদ্ধে নামার আগে সাত পয়েন্ট পেয়ে আত্মবিশ্বাসী আমরা। ওদের বিরুদ্ধেও এ ভাবেই নিজেদের সেরা ক্রিকেট উপহার দিতে হবে।’’

দিল্লি ম্যাচের আগে বাংলা শিবিরে সুখবর। গোড়ালির চোটে খেলতে আসা হচ্ছে না ইশান্ত শর্মার। তাই ইডেনেই ২৭ জানুয়ারি খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা। এ দিন হায়দরাবাদকে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট ঈশ্বরনদের। বুধবার বাকি ম্যাচগুলো শেষ না হলে বোঝা যাবে না, লিগ তালিকায় তারা কোথায় থাকছে। অরুণ বলছিলেন, ‘‘হিসেব অনুযায়ী ২৬ থেকে ২৭ পয়েন্ট থাকলে কোয়ার্টার ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।’’

কল্যাণী আরও একটি আকর্ষণীয় ঘটনার সাক্ষী রইল। শ্রীবৎস গোস্বামী হাঁটুতে চোট পাওয়ায় হায়দরাবাদের দ্বিতীয় ইনিংসের ৪২ ওভার থেকে উইকেটকিপিং করলেন মনোজ তিওয়ারি। একটি ক্যাচ ও দু’টি রান আউটও করলেন। আগে কখনও কিপিং করেছেন? মনোজের উত্তর, ‘‘বহু বছর আগে বিদর্ভের বিরুদ্ধে ম্যাচে কিপিং করেছিলাম। বলতে পারেন এটাও আমার প্রতিভা।’’

সাত পয়েন্ট পেয়ে দল যখন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। তাঁদের এক সঙ্গে ডেকে নিলেন অনুষ্টুপ মজুমদার। হাডল করে চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘জয় বাংলা!’’ সমর্থকেরাও হয়তো চাইবেন, এই স্লোগান গেয়েই মরসুম শেষ করুক তাদের প্রিয় দল।

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Bengal Cricket Team
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy