নজরে: অভিমন্যু ও ঋদ্ধিমান। ক্যারিবিয়ান সফরের দৌড়ে। ফাইল চিত্র
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে ঋষভ পন্থের যাত্রা কি এখান থেকেই শুরু হতে চলেছে?
টেস্টে তৃতীয় ওপেনার কে হবেন? দিদির বাংলা বনাম মোদীর গুজরাতের লড়াইয়ে জিতবে কে?
ওয়ান ডে-তে নতুন প্রজন্মের মিডল অর্ডার কেমন হতে চলেছে?
স্পিনের দেশ ভারতে যে ফাস্ট বোলিংয়ের জোয়ার শুরু হয়েছে, এ বার তাতে কোন কোন নতুন মুখ উঠে আসতে দেখা যাবে?
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হারের পরে প্রথম নির্বাচনী বৈঠক। আর আরব সাগরের পারে একাধিক প্রশ্নের ঢেউয়ে উথালপাথাল হতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট মহল। যার মধ্যে অবশ্যই সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, ধোনিকে নিয়ে ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করা। আপাতত টেরিটোরিয়াল আর্মির ডেরায় সময় কাটাতে যাচ্ছেন ধোনি। আনন্দবাজারে আগেই লেখা হয়েছে, তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তবে অবসর নিয়ে মনের ইচ্ছার কথা এখনও নির্বাচকদের বা টিমকে খোলাখুলি জানাননি ধোনি। আগামী দু’বছরে দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে ভারত। সেখানে তরুণ এবং তাজা রক্ত দরকার। কারও কারও মনে হচ্ছে, নতুন প্রজন্মের দল গড়া হলে আটত্রিশ বছরের ধোনির পক্ষে ভবিষ্যতে জায়গা পাওয়া কঠিন।
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচনী বৈঠক, যেখানে বোর্ড সচিব আর সভার মুখ্য পরিচালক থাকছেন না। এত দিন ধোনির মতো সুপারস্টারদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বোর্ড বড় ভূমিকা নিয়ে এসেছে। সেটা এখনও নেপথ্যে হতে পারে কিন্তু সভায় বসে বোর্ড প্রতিনিধির প্রভাব বিস্তার করার দিন শেষ। আহ্বায়কের ভূমিকায় থাকবেন নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু এখানেও পাল্টা প্রশ্ন উঠছে যে, এম এস কে প্রসাদের মতো ছ’টি টেস্ট এবং সতেরোটি ওয়ান ডে খেলার ন্যূনতম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কারও হাতে আহ্বায়কের দায়িত্ব ছাড়া কতটা যুক্তিযুক্ত? কেন আরও বেশি টেস্ট খেলা কেউ চেয়ারম্যান হবেন না?
সব মিলিয়ে আরব সাগরের পারে বদলের হাওয়া। বাংলার ক্রিকেট মহলও এই পরিবর্তনের আবহে রবিবারের সভার দিকে অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে। একে তো টেস্টে দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে ঋদ্ধিমান সাহার প্রত্যাবর্তনের আশায় রয়েছেন বঙ্গ ক্রিকেটের সমর্থকেরা। সঙ্গে প্রবল কৌতূহল তৈরি হয়েছে অভিমন্যু ঈশ্বরনকে নিয়ে। বাংলার ওপেনার সাম্প্রতিককালে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে দারুণ সব ইনিংস খেলেছেন। ‘এ’ দলের হয়ে দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর নামের পাশে। অভিমন্যুর সঙ্গে লড়াই গুজরাতের প্রিয়ঙ্ক পঞ্চালের। শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে পঞ্চাল ১৬০ করেছিলেন। সেই ম্যাচেই অভিমন্যু করেন ২৩৩। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৬টি ম্যাচ খেলার পরে তাঁর গড় ৫১.৪২। সঙ্গে গত দু’বছরে টানা রান করে যাওয়া এবং ‘এ’ দলে সুযোগ পেয়ে নিয়মিত ভাবে বড় রান করা, তৃতীয় ওপেনারের দৌড়ে ভাল মতোই ঢুকিয়ে দিয়েছে অভিমন্যুকে।
অন্য দিকে, ২০১৮-তে কেপ টাউনে নববর্ষের টেস্টের পরে আর ভারতের হয়ে খেলেননি ঋদ্ধি। চোটের জন্য এক বছরের উপর বাইরে থাকতে হয়েছে। চৌত্রিশ বছরের ঋদ্ধি জাতীয় দলে ফেরার জন্য লড়ছেন এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফররত ভারতীয় ‘এ’ দলে জায়গা পাওয়াটা অবশ্যই মনোবল বর্ধক। ঋদ্ধি বাইরে থাকার সময় ক্রিকেট আকাশে উদয় ঘটেছে ঋষভ পন্থের। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরি করার পরে কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনিই এখন টেস্টে কোহালিদের এক নম্বর উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ররিবারের বৈঠক এমনকি, তিন ফর্ম্যাটেই এক নম্বর কিপার হিসেবে পন্থের উত্থান দেখতে পারে।
ঋদ্ধির টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তনের রাস্তা কঠিন করে দিতে পারে শক্তিশালী দক্ষিণী লবি। দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশের কে এস ভরতের নাম তুলতে শুরু করে দিয়েছে তারা। কাকতালীয় হয়তো, কিন্তু নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান প্রসাদও অন্ধ্রের। একটা হিসাবও দেওয়া হচ্ছে যে, গত বারো মাসে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে এগারোটি বেসরকারি টেস্ট খেলেছেন ভরত। তিনটি সেঞ্চুরি এবং দু’টি হাফ সেঞ্চুরি-সহ করেছেন ৬৮৬ রান। ৪১টি ক্যাচ, ছ’টি স্টাম্পিং রয়েছে।
দক্ষিণী হাওয়া ঘুরিয়ে ঋদ্ধিকে জাতীয় দলে ফেরাতে হলে অতীতের সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক মলহোত্রের মতো মরিয়া লড়াই করতে হবে পূর্বাঞ্চল নির্বাচক দেবাঙ্গ গাঁধীকে। যদিও ঋদ্ধিকে দিয়েই শেষ হচ্ছে না পূর্বাঞ্চল নির্বাচকের পরীক্ষা। তৃতীয় ওপেনার হিসেবে এম বিজয়কে ফেরানোর কথা কেউ কেউ বলছেন। বিজয়কে ফেরানো হলে সামনে এগনো নয়, পিছিয়েই যাওয়া হবে। এই পর্বে আসল লড়াই দিদির বাংলা বনাম মোদীর গুজরাত। মনে করিয়ে দেওয়া যাক, গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার পরিচালনায় থাকা ব্যক্তি অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ।
অভিমন্যু যখন আছেন, চক্রব্যূহও থাকছে। অস্ট্রেলিয়ায় মাঝপথে কে এল রাহুল এবং এম বিজয়কে বসিয়ে মায়াঙ্ক আগরওয়াল এবং হনুমা বিহারীকে দিয়ে ওপেন করাতে বাধ্য হয়েছিলেন কোহালিরা। এ বার কি মায়াঙ্কের সঙ্গে অভিমন্যু বা প্রিয়ঙ্কের মতো নতুন কাউকে দেখে নেওয়া উচিত? এই প্রশ্ন সভায় উঠতে চলেছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বকাপে পাঁচটি সেঞ্চুরি করা রোহিত শর্মাকে টেস্টেও ওপেনার হিসেবে ভাবা হবে কি না, এ রকম চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে। অভিমন্যুকে সুযোগ পেতে হলে ওপেনারদের নিয়ে তৈরি হওয়া এই চক্রব্যূহ থেকে বেরোতে হবে।
অজিঙ্ক রাহানের থেকে আর কী প্রত্যাশা করা যায়, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। রাহানে টেস্টে সহ-অধিনায়ক কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় শেষ টেস্ট সিরিজে পুরনো ফর্মের ঝলক দেখালেও গত ২৯ ইনিংসে কোনও সেঞ্চুরি পাননি। হ্যাম্পশায়ারের হয়ে এ বছর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়ে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু পরের ১১ ইনিংসে মাত্র এক বারই পঞ্চাশের গণ্ডি পেরিয়েছেন।
আনন্দবাজারে আগেই দেওয়া ইঙ্গিত মতো, ওয়ান ডে-র মিডল অর্ডারের জন্য শুভমন গিল, শ্রেয়স আইয়ার, মণীশ পাণ্ডেরা আলোচনায় থাকছেন। বোলারদের মধ্যে চর্চায় বাঁ হাতি খলিল আহমেদ, নবদীপ সাইনি, দীপক চাহারের মতো তরুণরা। বিশ্বকাপে নেট বোলার হিসেবে ছিলেন এই ত্রয়ী। তাঁদের দেখে যথেষ্টই প্রভাবিত হয়েছিলেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী, বোলিং কোচ বি অরুণ এবং অধিনায়ক বিরাট কোহালি। স্পিনার অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করা রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে থাকতে পারেন পাণ্ড্যদের বড় ভাই ক্রুণাল। সাদা বলের ক্রিকেট থেকে যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ শামির মতো অভিজ্ঞদের বিশ্রাম দিয়ে নতুনদের দেখে নেওয়া হতে পারে।
দল নির্বাচন নিয়ে এই উত্তপ্ত হাওয়ার মাঝেই প্রশ্ন উঠছে, পৃথ্বী শ কোথায়? দাবি, কোমরের পিছন দিকের পেশির চোট গুরুতর আকার ধারণ করায় তাঁকে ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড কেন নীরব? তারা কেন প্রতিভাবান ওপেনারের চোট নিয়ে মেডিক্যাল বুলেটিন দিচ্ছে না? অনেকেই বিস্মিত যে, আইপিএলে চোট লেগে থাকলে এত দিনে সারছে না কেন? নাকি সমস্যা আরও গুরুতর এবং শৃঙ্খলাজনিত? তরুণ প্রতিভার ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেউ মুখ খুলছেন না? যত সময় যাচ্ছে, পৃথ্বীর চোটের কাহিনি মুরলীধরনের দুসরার মতোই রহস্যময়ী হয়ে উঠছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy