প্রতীকী চিত্র
ফের সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে আইসিসি এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি নতুন কিছু টুর্নামেন্ট চালু করার কথা ভেবেছে। মনে করা হচ্ছে, আরও বেশি অর্থ আনার জন্যই নতুন এই সব টুর্নামেন্ট করার ভাবনা। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড মনে করছে, এর পিছনে দুরভিসন্ধি আছে আইসিসি-র। ভারতীয় ক্রিকেটের সোনার রাজহাঁস আইপিএলের প্রভাব কমানোর নানা অপচেষ্টা আইসিসি চালিয়ে যাচ্ছে বলে ভারতীয় কর্তাদের অভিযোগ।
২০২৩ পর্যন্ত আইসিসি ইভেন্ট সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে যেমন ২০২০ এবং ২০২১-এ পর-পর দু’টো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ভারতে। কিন্তু সেই বিশ্বকাপের পর থেকে ২০২৩ থেকে ২০৩১ পর্যন্ত নতুন টুর্নামেন্ট চালু করার কথা ভাবছে আইসিসি। ‘চ্যাম্পিয়ন্স কাপ’ নাম দিয়ে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে দুই ফর্ম্যাটেই সেরাদের নিয়ে নতুন টুর্নামেন্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৪ এবং ২০২৮ সালে দু’বার টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন্স কাপ হবে। পঞ্চাশ ওভারের ওয়ান ডে ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন্স কাপ হবে ২০২৫ এবং ২০২৯ সালে। এর পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে বিশ্বকাপ যেমন চলছিল, চলবে। ২০২৬ এবং ২০৩০-এ হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০২৭ এবং ২০৩১-এ হবে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ।
কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স বিদায় হয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের নতুন ভারতীয় বোর্ড তৈরি হওয়ার পর থেকেই আইসিসি-র সঙ্গে ভবিষ্যতের ক্রিকেট সূচি নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়েছে। আইসিসি প্রধান হিসেবে শশাঙ্ক মনোহর যে ভারতীয় হয়েও আদৌ ভারতীয় বোর্ডের বন্ধু নন, তা অনেকেই বুঝে গিয়েছেন। সৌরভরা প্রথমেই বলে দিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক সূচি আগে চূড়ান্ত হবে। তার পরে আইসিসি তাদের ইভেন্টের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ভারতীয় বোর্ডে অনেকেই মনে করছেন, আইপিএলের একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে মনোহরের নেতৃত্বে উঠে পড়ে লেগেছেন আইসিসি কর্তারা। সেই কারণে তাঁরা বিশ্ব স্তরে বেশি করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং সাদা বলের ক্রিকেট ঢোকাতে চাইছেন। ভারতে যেমন আইপিএল হয়, তেমনই অস্ট্রেলিয়ায় হয় বিগ ব্যাশ। ইংল্যান্ডেও চালু হচ্ছে ‘হান্ড্রেড বল ক্রিকেট’। প্রত্যেক দলের ইনিংস হবে ১০০ বলের। তিন দেশের কর্তারা একমত, প্রত্যেকের ঘরোয়া ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আইসিসি-র ক্যালেন্ডার মেনে নিলে। ভারতীয় বোর্ডের কর্তারা চটেছেন যে, সূচি নিয়ে আপত্তি তোলার পরেও কী করে আইসিসি নতুন সব টুর্নামেন্ট করার কথা ভাবছে?
ভারতীয় বোর্ড কর্তারা অন্য দুই বড় ক্রিকেট শক্তি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একজোট হয়ে আইসিসি-র বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ এবং সচিব জয় শাহ ইংল্যান্ডে গিয়ে ত্রিশক্তির বৈঠকও করে এসেছেন। তাঁরা আইসিসি-কে পাল্টা প্যাঁচে ফেলার জন্য চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্ট চালু করার কথা বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। তাতে আইসিসি চাপে পড়ে গিয়েছে। নতুন টুর্নামেন্ট নিয়েও যে ভারতীয় বোর্ড তীব্র আপত্তি তুলবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আইসিসি আবার দাবি করছে, গত অক্টোবরেই বোর্ড মিটিংয়ে এই সব প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। সেই সভায় নাকি উপস্থিত ছিলেন সেই সময়কার কার্যনির্বাহী সচিব অমিতাভ চৌধরি।
ভারতীয় বোর্ড অতীতের বৈঠক দেখে বর্তমানের সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ। তাদের পরিষ্কার বক্তব্য, প্রায় প্রত্যেক বছর একটি করে আইসিসি মেগা ইভেন্ট করা যাবে না। কত খেলবে ক্রিকেটারেরা? আর আইপিএলের মতো ঘরোয়া ইভেন্ট ক্ষতির মুখে পড়বে কেন? ভারতীয় কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘বড় দেশগুলি যদি ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে সই করতে রাজি না হয়, আইসিসি কী করে বাধ্য করবে? তখন এই সূচির কোনও মানেই থাকবে না।’’ তার উপর দু’টি দেশ নিজেদের মধ্যে খেলে যে অর্থ তুলতে পারে, সেটাও ধাক্কা খাবে কারণ অতটা সময়ই পাওয়া যাবে না। কেউ কেউ আরও বলছেন, প্রত্যেক বছর হলে বিশ্বকাপের আকর্ষণটাই তো হারিয়ে যাবে। একটি বিশ্বকাপ জেতার পরে সকলে তাকিয়ে থাকে চার বছর পরে আবার বিশ্বকাপ হবে, সেখানে কাপ জিততে হবে। সেই আদি অনন্তকালের ভাবনাটাই তো নষ্ট হয়ে যাবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy