উদ্বেগ: বাঙ্গারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তা। ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপ-উত্তর ভারতীয় দলের কোচ নির্বাচন ঘিরে নাড়াচাড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি করে নজর ব্যাটিং কোচের উপরে। প্রাথমিক যা রিপোর্ট, বর্তমান ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারের ভবিষ্যৎ আকাশ খুব উজ্জ্বল না-ও হতে পারে।
ফিল্ডিং কোচের জন্য যেমন জন্টি রোডসের মতো তারকা আবেদন করেছেন, ব্যাটিং কোচের জন্য খুব বড় নাম উৎসাহ দেখাবেন কি না, নিশ্চিত নয়। একটা ব্যাপার হচ্ছে, বড় নামেরা বেশির ভাগই আইপিএলে নয়তো অন্য টি-টোয়েন্টি লিগে যুক্ত হয়ে বসে আছেন। সারা বছর ধরে একটি দেশের কোচিং পদ নেওয়ার চেয়ে দু’মাসের আইপিএলে কাজ করে মোটা টাকা কামিয়ে নেওয়াটা অনেকের কাছেই বেশি আকর্ষণীয় প্রস্তাব। সেই কারণে বিদেশি আবেদনকারীর সংখ্যা খুব বেশি না হলেও অবাক হওয়ার নেই।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, বাঙ্গারের পদের জন্য ভারতীয়দের মধ্যে এগিয়ে থাকতে পারেন আর এক প্রাক্তন ক্রিকেটার বিক্রম রাঠৌর। এমনিতে ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে খুব বড় নাম নন রাঠৌর। খেলেছেন মাত্র ছ’টি টেস্ট এবং সাতটি ওয়ান ডে। টেস্টে সর্বোচ্চ ৪৪, ওয়ান ডে-তে ৫৪। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুবই সফল। ১৪৬ ম্যাচে ১১৪৭৩ রান করেছেন প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি ব্যাটিং গড় রেখে। ৩৩টা সেঞ্চুরি রয়েছে। সর্বোচ্চ ২৫৪। ঘরোয়া ক্রিকেটে বহু ম্যাচ তিনি একার ব্যাটে জিতিয়েছেন পঞ্জাব এবং হিমাচলকে। কোচ হিসেবেও অভিজ্ঞতা রয়েছে। হিমাচল প্রদেশের কোচিং করিয়েছেন, ভারতীয় ‘এ’ দলের ব্যাটিং কোচের পদেও থেকেছেন।
নজরে: কোহালিদের শিবিরে ঢুকে পড়তে পারেন রাঠৌর। ফাইল চিত্র
আবার রাঠৌরকে ঘিরে বিতর্কও হয়েছে। স্বার্থ-সংঘাতের অভিযোগ উঠেছে, কারণ অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরে জাতীয় নির্বাচক আশিস কপূরের আত্মীয় তিনি। প্রাক্তন বোর্ড প্রধান অনুরাগ ঠাকুরেরও আত্মীয়। যা আরও বেশি করে বিতর্কের আগুন উস্কে দিয়েছে। তবে সব জেনেশুনেও প্রভাবশালী মহলে কেউ কেউ বলছেন, ‘‘ভারতীয় কোচিংয়ের সিস্টেম থেকে উঠে এসেছে রাঠৌর। বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কোচিং পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। দেশের অনূর্ধ্ব দলগুলিকে কোচিং করিয়েছে। আমরা কেন নিজেদের সিস্টেম থেকে উঠে আসা কাউকে সুযোগ দেব না?’’
দেশি বিশেষজ্ঞের এই হাওয়ায় হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং বোলিং কোচ বি অরুণ ফেভারিট হিসেবে দৌড়ে থাকবেন। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া নিয়ে কথা উঠলেও শাস্ত্রীর অধীনে ভারতীয় দল সামগ্রিক ভাবে উন্নতি করেছে। ২০১৪-তে তিনি যখন দায়িত্ব নেন, টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ভারত সাত নম্বরে পড়ে ধুঁকছিল। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তখন অধিনায়ক, ডানকান ফ্লেচার হেড কোচ। তিন বছরের মধ্যে ভারত টেস্ট এবং ওয়ান ডে-তে এক নম্বর দল হয়ে ওঠে। মধ্যবর্তী সময়ে ধোনির হাত থেকে অধিনায়কত্বের ব্যাটন চলে গিয়েছে বিরাট কোহালির হাতে। এই মুহূর্তে কোহালির ভারত টেস্ট এবং ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে যথাক্রমে এক এবং দু’নম্বরে। টি-টোয়েন্টিতে তারা নেমে গিয়েছে পাঁচে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফলের দিকে অনেকে তাকিয়ে থাকবেন। হেড কোচ শাস্ত্রী, বোলিং কোচ অরুণ, ব্যাটিং কোচ বাঙ্গার, ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর প্রত্যেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর পর্যন্ত বর্ধিত চুক্তি পেয়েছেন। ক্যারিবিয়ান সফরের পরেই নতুন কোচিং দল বেছে নেওয়া হবে। বিচারকদের আসনেও পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণের তিন সদস্যের ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি আর কোচ বা সহকারীদের বাছবে না। ভারতীয় মহিলা দলের কোচ বেছে নেওয়ার সময় তিন সদস্যের অস্থায়ী কমিটিকে বিচারকের ভার দিয়েছিল সিওএ। কপিল দেব, অংশুমান গায়কোয়াড় এবং প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটার শান্তা রঙ্গস্বামী ছিলেন সেই কমিটিতে। এ দিন সিওএ জানিয়ে দিল, এই তিন জনের কমিটিই কোহালিদের নতুন কোচ নির্বাচন করবে।
ভারতীয় কোচেদের জন্য আশার খবর হচ্ছে, কমিটির সব চেয়ে বড় নাম কপিল দেবের মনোভাব বরাবর দেশি কোচ ঘেঁষা। বিশ্বকাপজয়ী অলরাউন্ডার বিদেশি পেশাদারদের চেয়ে নিজের দেশের বিশেষজ্ঞদের বেশি গুরুত্ব দিতে চাইলে অবাক হওয়ার নেই। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, শাস্ত্রী এবং অরুণ তাঁদের পদের জন্য ফেভারিট। শাস্ত্রীর অধীনে বিশ্বকাপ না এলেও র্যাঙ্কিংয়ে উপরের দিকে থাকার পাশাপাশি কোহালিরা প্রথম বার টেস্ট সিরিজ জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ওয়ান ডে-তে প্রায় পঁচাত্তর থেকে আশি শতাংশ ম্যাচ তাঁরা জিতেছেন। বিদেশে জয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ডে গিয়ে শাসকের মতো খেলে ওয়ান ডে সিরিজ জিতেছে দল। একমাত্র ইংল্যান্ডের কাছে ইংল্যান্ডে এবং দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওয়ান ডে সিরিজ হারের ধাক্কা রয়েছে। শাস্ত্রীর সঙ্গে অধিনায়ক কোহালির সুসম্পর্কের সমীকরণও চট করে ফেলে দেওয়া যাবে না। কেউ চাইবে না সৌরভ-গ্রেগ চ্যাপেল বা কোহালি-কুম্বলের মতো বিতর্কিত ক্যাপ্টেন-কোচ অধ্যায় ফিরে আসুক।
বি অরুণের অধীনে তেমনই ভারতীয় দলের বোলিং বিভাগ বিশ্বের অন্যতম সেরা হয়ে উঠেছে। অনেকে বর্তমান বোলিং বিভাগকে দেশের সর্বকালের সেরা আখ্যাও দিয়েছেন। ভারতীয় ফাস্ট বোলিং বিশ্ব মানের তো হয়ে উঠেইছে, এমনকি, এক ক্যালেন্ডার বর্ষে উইকেট শিকারের দিক থেকে কিংবদন্তি ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণকেও ছাপিয়ে যাওয়ার মতো বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছে। গতি, বাউন্স এবং সুইংয়ে যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবরা ধারাবাহিক ভাবে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছেন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সঙ্গে।
একই ইতিবাচক কথা ব্যাটিং কোচ বাঙ্গারকে নিয়ে বলা যাচ্ছে না। ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে কারণ জন্টি রোডসের মতো তারকা আবেদন করেছেন। তবু কারও কারও মত, ভারতীয় দলের ফিল্ডিং গত তিন-চার বছরে ভীষণ ভাবেই ঊর্ধ্বগামী। রবীন্দ্র জাডেজাকে এখন বিশ্বের সেরা ফিল্ডার বলা হচ্ছে। বিশ্বকাপের সময় সম্প্রচারকারী চ্যানেল দেখিয়েছে, ভারত এক নম্বর ফিল্ডিং দল। অন্দরমহলের কারও কারও মতে, বিচারক ত্রয়ী বড় নামের চেয়েও এই সব তথ্যকে বেশি গুরুত্ব দিতে পারেন।
এখন বিশ্বব্যাপী কোনও দলেই খুব বড় নামকে অন্তর্ভূক্ত করার চল নেই। বড় ক্রিকেটারের চেয়েও বেশি দেখা হচ্ছে কোচিং সিস্টেম থেকে কারা স্নাতক হয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। জন্টি রোডস তাই বড় নাম হয়েও পিছিয়ে থেকে শুরু করলে অবাক হওয়ার নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy