চ্যাম্পিয়ন: তিরিশ বছর পরে বাংলা পারল না রঞ্জি জিততে। সেখানে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাজকোটে শুক্রবার ট্রফি তুলল পুজারাদের সৌরাষ্ট্র। প্রথম ইনিংসের রানে এগিয়ে থাকায়। ছবি: পিটিআই
বাংলার ডাগ-আউটের পাশেই রাখা ছিল রঞ্জি ট্রফি। কিন্তু এই দূরত্ব তিরিশ বছরের। ১৩ বছর পরে ফাইনালে ওঠার সুযোগ পেয়েও স্বপ্নপূরণ হল না। রানার্স তকমা নিয়েই আজ, শনিবার শহরে ফিরছেন ঋদ্ধিমান সাহা, অনুষ্টুপ মজুমদার, মনোজ তিওয়ারিরা।
৭১ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিন শেষ করেছিল বাংলা। অনুষ্টুপ মজুমদার ও অর্ণব নন্দীর জুটি রঞ্জি জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছিল শিবিরে। প়ঞ্চম দিন সাবলীল ভাবেই শুরু করেন অনুষ্টুপরা। পরিকল্পনা ছিল, প্রথম এক ঘণ্টা ঝুঁকিহীন ব্যাট করার। জয়দেব উনাদকাট ও চেতন সাকারিয়াকে সমীহ করেই এগোচ্ছিলেন দু’জনে। দিনের ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বল আছড়ে পড়ে অনুষ্টুপের প্যাডে। রক্তের স্বাদ পাওয়া উনাদকাটের আবেদন যেন জীবন ফিরে পাওয়ার চিৎকার। সেখানেই শেষ বাংলার রঞ্জি জয়ের সম্ভাবনা। অনুষ্টুপ জানতেন, এই সিদ্ধান্ত থেকে তাঁকে ফেরানো সম্ভব নয়। তবুও দলের স্বার্থে ডিআরএস চেয়ে দেখেন।
অনুষ্টুপের পাশে দাঁড়ানো উনাদকাটের দৃষ্টিও তখন সিগনালের দিকে। দুই শিবিরের দুই অভিজ্ঞ সৈনিক তাঁদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। লাল আলো জ্বলতেই উৎসব শুরু হয় বিপক্ষ শিবিরে। এসসিএ স্টেডিয়ামের বাইশ গজ ছেড়ে প্যাভিলিয়নের উদ্দেশ্যে রওনা দেন অনুষ্টুপ। এই যাত্রার দূরত্ব কোনও অঙ্কে বাঁধা সম্ভব নয়। এ যেন রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পথে নেমে আসার যাত্রা। কোচ অরুণ লাল মাথা নিচু করে বসে পড়লেন। হয়তো ইঙ্গিত পেয়েছিলেন
কোনও ঝড়ের।
ক্রিজে আসেন আকাশ দীপ। কর্নাটকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনের মুহূর্তে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল গুরুত্বপূর্ণ ৪৪ রান। ফাইনালে তাই অর্ণবের সঙ্গে ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখনও বাকি ৬৫ রান। প্রেসবক্স প্রান্ত থেকে চিতার গতিতে ধেয়ে আসছেন উনাদকাট। প্রথম বল ডিফেন্ড করেন আকাশ। পরের বল অনায়াসে ছেড়ে দিয়ে ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন। উইকেটরক্ষক অভি বারোট স্টাম্প লক্ষ্য করে ছুড়লেন বল। অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট। অভির তখন মাথায় হাত। তবুও ক্রিজের ভিতরে ঢুকলেন না আকাশ। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উনাদকাট ফিরতি বল ধরেই ছুড়ে দিলেন স্টাম্পে। কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি? কী ভাবছিলেন? কোচ অরুণ লাল বলছিলেন, ‘‘প্রথম বার রঞ্জি ট্রফি খেলছে। আর প্রথম বারেই ফাইনাল। ও হয়তো প্রচণ্ড চাপে পড়ে গিয়েছিল।’’ কিন্তু রঞ্জির ফাইনালে স্কুল ক্রিকেটের মানের আউট কি মেনে নেওয়া যায়?
মুকেশ কুমারও চেষ্টায় ব্যর্থ। এক দিক থেকে অর্ণব দাঁড়িয়ে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন। অন্য দিক থেকে হারাচ্ছে উইকেট। ঈশান পোড়েলকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ বার করা কঠিন। তরুণ পেসার একেবারেই ব্যাটিংয়ে সাবলীল নন। তাই ওভারের প্রথম চার বল অর্ণব খেলে শেষ দু’টি বল খেলানোর পরিকল্পনা ছিল ঈশানকে। সে ভাবেই শুরু হয় জুটি। দিনের ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ-পয়েন্টে ঠেলে রান নিয়ে ফেলেন অর্ণব। চারটি বল বাঁচিয়ে দিতে পারলে স্ট্রাইক ফিরে পেতেন শেষ ভরসা। ওভারের শেষ বল আছড়ে পড়ে ঈশানের প্যাডে। শুরু হয় উৎসব। আঁধার নেমে আসে বাংলা শিবিরে। দু’হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে চেয়ারে বসে পড়েন রণদেব বসু। কান্নায় ভেঙে পড়েন আকাশ দীপ। মনোজ তিওয়ারি, ঋদ্ধিমান সাহারা কী ভাবে নিজেদের সান্ত্বনা দেবেন? তাঁরা যদি আরও কিছুটা সময় ক্রিজে কাটাতে পারতেন, তা হলে ১৩ বছর আগের সেই মুহূর্তের পুনরাবৃত্তি ঘটত না বাংলা শিবিরে। পঞ্চম দিন, মাত্র ৮৩ মিনিটেই শেষ রঞ্জি জয়ের স্বপ্ন। সেমিফাইনালে গুজরাতকে এক স্পেলে শেষ করে দেওয়া উনাদকাট বাংলার বিরুদ্ধেও একই রকম আগ্রাসী। শেষ দিনের সকালে একটি স্পেলেই বিপক্ষ শিবিরের সব স্বপ্ন চুরমার করে দিলেন। এ দিন তাঁর পরিসংখ্যান ৭-৩-১২-২। ৬৭ উইকেট নিয়ে শেষ করলেন রঞ্জি মরসুম। বলছিলেন, ‘‘সকালে বল করতে গিয়ে ভাবছিলাম, মরসুমের সেরা ডেলিভারি করতে হবে। জানতাম একটি উইকেট পেলেই ওরা আর দাঁড়াতে পারবে না। সেই পরিকল্পনাই কাজে দিয়েছে।’’
৪৪ রানে পিছিয়ে থেকে শেষ হয় বাংলার প্রথম ইনিংস। নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য ব্যাট করতে নামতে হয় সৌরাষ্ট্রকে। ৩৪ ওভার খেলানোর পরে ম্যাচ ড্র ঘোষণা করেন আম্পায়ার। স্বাধীনতার পরে প্রথম রঞ্জি জয়ের স্বাদ পাওয়া সৌরাষ্ট্রে তখন অকাল হোলি। বাজি ফাটছে, উৎসব চলছে। অভাব শুধু সমর্থকদের। করোনা আতঙ্কে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই ইতিহাসের সাক্ষী চেতেশ্বর পুজারা, উনাদকাটেরা। মরসুম শেষ হয়ে গেল, কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরনকে ছন্দে ফেরানো গেল না। ফাইনালে তাঁর আউট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একেবারেই আত্মবিশ্বাসী দেখায়নি। প্রত্যেক ম্যাচে মিডল অর্ডার রান করবে, এই আশা নিয়ে কয়েকটি ম্যাচ হয়তো জেতা যায়। কিন্তু ফাইনাল নয়। তবে এ বারের রঞ্জি ট্রফি শেষে গত বারের মতো হতাশা নেই। আছে বেশ কিছু প্রাপ্তির ইঙ্গিত। বাংলা পেয়েছে শাহবাজ আহমেদের মতো এক অলরাউন্ডরকে। অশোক ডিন্ডার পরিবর্ত হিসেবে উঠে এসেছেন আকাশ দীপ। হারিয়ে যাওয়া অনুষ্টুপ ও সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ফিরে পেয়েছেন ছন্দ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy