প্রতীকী চিত্র
বার্মিংহ্যাম অ্যারিনায় দেশকে ফের গর্বিত করলেন আরও এক ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। এ বার সাফল্যের নায়ক লক্ষ্য সেন। ফাইনালে হেরে গিয়ে রুপো পেলেও তাঁর হাত ধরে রচিত হল নতুন ইতিহাস।
গত এক বছর ধরেই দারুণ ছন্দে রয়েছেন উত্তরাখণ্ডের আলমোরার বাসিন্দা। ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালের সেমিফাইনাল, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ, ইন্ডিয়া ওপেনে চ্যাম্পিয়ন, জার্মান ওপেনে রানার্স হওয়ার পর অল ইংল্যান্ড ওপেনেও অব্যাহত লক্ষ্য সেনের সাফল্য। ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় চমকে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কাছে হারতে হয়েছে তৃতীয় বাছাই ডেনমার্কের অ্যান্ডার্স অ্যান্টনসেনকেও।
ব্যাডমিন্টনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটাই ভারতীয়দের প্রথম সাফল্য নয়। বরং সাফল্যের সেই তালিকায় নবতম সংযোজন লক্ষ্য। এই সুযোগে এক বার দেখে নেওয়া যাক ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের সাফল্যের সেরা সুখ স্মৃতিগুলি।
প্রকাশ পাড়ুকোন (১৯৮০)
১৯৮০ সালে অল ইংল্যান্ড ওপেন চ্যাম্পিয়ন হন প্রকাশ পাড়ুকোন। ব্যাডমিন্টনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সেটাই ছিল কোনও ভারতীয়র প্রথম সাফল্য। পাড়ুকোনের সেই সাফল্যের জেরেই ভারতীয় ব্যাডমিন্টন সমীহ আদায় করে নিয়েছিল বাকি বিশ্বের। দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হতে শুরু করে ব্যাডমিন্টন। বহু খুদে হাতে তুলে নেয় র্যাকেট এবং শাটল কক।
পুল্লেলা গোপীচন্দ (২০০১)
পাড়ুকোনের সেই সাফল্য ব্যাডমিন্টন নিয়ে আগ্রহ তৈরি করলেও বিশ্ব পর্যায়ে ধারাবাহিক সাফল্যের পথ খুলতে পারেনি। দু’দশকের বেশি সময়ের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হয়ে ছিল পুল্লেলা গোপীচন্দের হাত ধরে। বেঙ্গালুরুর পাড়ুকোনের জুতোয় পা গলিয়ে ছিলেন হায়দরাবাদের গোপীচন্দ। ২০০১ সালে তিনিও অল ইংল্যান্ড ওপেন চ্যাম্পিয়ন হন। গোপীচন্দ ব্যাডমিন্টন বিশ্বকে মনে করিয়ে দেন, ভারতকে ভুলে গেলে ভুল হবে।
সাইনা নেহওয়াল (২০০৯)
কয়েক বছর অপেক্ষার পর আবারও আলোচনায় উঠে আসে ভারতের ব্যাডমিন্টন। এবার এক মহিলার হাত ধরে। ২০০৯ সালে সাইনা নেহওয়াল চ্যাম্পিয়ন হন ইন্দোনেশিয়ান ওপেনে। যা অল ইংল্যান্ডের মতো কুলীন না হলেও প্রতিযোগিতার গুরুত্বের নিরিখে সমান। গুরুত্বের দিক থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ঠিক পরেই অল ইংল্যান্ড ওপেন, চিন ওপেনের সঙ্গেই রয়েছে এই প্রতিযোগিতা। সাইনা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন কেবল পুরুষরা নন, ভারতের মহিলারাও পারেন ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব মঞ্চে সাফল্য পেতে।
জ্বালা গুট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পা (২০১১)
সুপার সিরিজে একাধিক সাফল্যের পরেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সাফল্য অধরা ছিল ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের। সেই আক্ষেপও দূর করেন দুই মহিলা। ২০১১ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ডাবলসে ব্রোঞ্জ জেতেন জ্বালা গুট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পা জুটি। হোক না ব্রোঞ্জ, হোক না ডাবলস। ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এটাই ছিল যে ভারতীয়দের প্রথম পদক।
সাইনা নেহওয়াল (২০১২)
ইন্দোনেশিয়ায় সাইনার সাফল্যের পর থেকে আর দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়নি ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের। বিশ্ব পর্যায়ে ধারাবাহিক সাফল্য পেতে শুরু করেন ভারতীয় খেলোয়াড়রা। যদিও অধরা ছিল অলিম্পিক্স। বিশ্বসেরা এই ক্রীড়া যজ্ঞে পদক না জিতলে যেন ঠিক কল্কে পায় না কোনও খেলা। সেই আক্ষেপও মিটিয়ে দেন সাইনা। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক্সে সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন তিনি। অলিম্পিক্স থেকে ব্যাডমিন্টনে এটাই ভারতের প্রথম পদক।
পিভি সিন্ধু (২০১৬)
লন্ডনে সাইনার সাফল্যের রেশ ধরেই পরের রিও অলিম্পিক্স থেকেও পদক আসে ভারতে। এবার দেশকে ব্যাডমিন্টন কোর্টে গর্বিত করেন পিভি সিন্ধু। হায়দরাবাদের বাসিন্দা সিন্ধু সিঙ্গলসে রুপো জেতেন। ব্যাডমিন্টনের বিশ্ব মঞ্চে ভারতীয় মহিলাদের দাপট আরও পোক্ত করেন তিনি।
কিদম্বি শ্রীকান্ত (২০১৭)
গোপীচন্দের পর ভারতের পুরুষ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়রা কি তবে পিছিয়ে পড়ছেন সাইনা, সিন্ধুদের দাপটের সামনে? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ছিল। যে প্রশ্নকে পরের বছরেই কার্যত খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দেন কিদম্বি শ্রীকান্ত। ২০১৭ সালে জেতেন চারটি সুপার সিরিজ। ইন্দোনেশিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, ডেনমার্ক এবং ফরাসি ওপেন জেতেন শ্রীকান্ত। তাঁর আগে কোনও ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় একই বছরে চারটি সুপার সিরিজ জেতার কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। অবশ্য তার আগে ২০১৪ সালে তিনি জেতেন অল ইংল্যান্ড ওপেনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ চিন ওপেন।
পিভি সিন্ধু (২০১৯)
ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যেও ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের অপ্রাপ্তি ছিল আরও একটা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক এলেও সিঙ্গলসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল না কোনও ভারতীয়র। ২০১৯ সালে সেই অপ্রাপ্তি দূর হয় সিন্ধুর হাত ধরেই। তাও একে বারে সোনার সাফল্য। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সিঙ্গলসে সোনা জেতেন তিনি। সিন্ধুই ভারতের প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। অলিম্পিক সিঙ্গলস পদকের রং পরিবর্তন করার পর ভারতীয় ব্যাডমিন্টনকে সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছে দেন।
সাত্বিক সাইরাজ-চিরাগ শেঠি (২০১৯)
এর পরও সম্পূর্ণ হয়নি ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের সাফল্যের বৃত্ত। পুরুষদের ডাবলসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল না ভারতীয়দের। ২০১৯ সালে মেটে সেই আক্ষেপ। তাইল্যান্ড ওপেন চ্যাম্পিয়ন হন সাত্বিক সাইরাজ-চিরাগ শেঠি জুটি। গুরুত্বের দিক থেকে এই প্রতিযোগিতা ইন্ডিয়ান ওপেনের সমতুল।
লক্ষ্য সেন (২০২২)
এ বার পাড়ুকোন, গোপীচন্দের সাফল্য স্পর্শ করেন লক্ষ্য সেন। তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে অল ইংল্যান্ড ওপেনের ফাইনালে ওঠেন। তবে ফাইনালে হেরে গিয়ে রুপো পেলেন তিনি।
বিশ্ব পর্যায়ে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের সাফল্যের বৃত্ত অদূর ভবিষ্যতে পূর্ণ হতেই পারে। অলিম্পিক্স ব্যাডমিন্টনে ভারতের পুরুষ খেলোয়াড়দের এখনও কোনও পদক নেই। অল ইংল্যান্ড ওপেনে লক্ষ্য সেনের এই সাফল্যের পর আশাবাদী হওয়াই যায়। পাড়ুকোন, গোপীচন্দ, শ্রীকান্তরা পারেননি। ২০ বছরের তরুণ কি পারবেন লক্ষ্যভেদ করতে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy