যুযুধান: ফাইনালে মুখোমুখি নাদাল এবং মেদভেদেভ। ফাইল চিত্র
পাঁচ মাস আগের সেই ছবিটা ভোলা অসম্ভব। ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রাফায়েল নাদাল। যে ছবি দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারেননি, ২০২২-এর জানুয়ারি মাসে সে-ই একই মানুষটার নিজেকে অবিশ্বাস্য উচ্চতায় তুলে ধরতে দরকার হবে আর একটা মাত্র জয়ের। অস্ট্রেলীয় ওপেন ফাইনালে চূর্ণ করতে হবে দানিল মেদভেদেভের রুশ তরুণকে। তা হলেই লেখা হবে নতুন ইতিহাস। পুরুষদের টেনিসে সবচেয়ে বেশি একুশটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক হবেন স্পেনীয় তারকা। রজার ফেডেরার, নোভাক জোকোভিচকে পিছনে ফেলে।
টেনিস মহলে আশঙ্কা একটাই। মেদভেদেভের বয়স মাত্র ২৫। আজ, রবিবার ট্রফির দ্বৈরথে পঁয়ত্রিশের রাফা শেষপর্যন্ত তাঁর সঙ্গে পেরে উঠবেন তো? বিশ্ব ক্রমতালিকাতেও এই মুহূর্তে নাদাল রয়েছেন পাঁচে। সেখানে দানিল দুই নম্বরে। এ হেন সংশয়ের আবহে নাদাল নিজেই কিন্তু অকপট, ‘‘সেরা টেনিসটা খেলতে না পারলে কোনও ভাবেই একুশতম ট্রফিটা পাব না। এটাই একমাত্র অঙ্ক।’’
তিনি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন কি না, তার উত্তর মিলে যাবে রবিবার। কিন্তু টেনিসপ্রেমীদের মনে বারবার করে ফিরে আসছে সেই ছবিটাই। যে ছবি নাদাল স্বয়ং গণমাধ্যমে দিয়েছিলেন গত সেপ্টেম্বর মাসে। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটার ছবি! ঠিক তখনই মেদভেদেভ টেনিসবিশ্বকে চমকে দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তা-ও বিস্বের এক নম্বর তারকা নোভাক জোকোভিচকে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দিয়ে! শুক্রবার স্টেফানোস চিচিপাসকে হারিয়ে উঠে যে কথা মনে করিয়েছেন দানিলও। যে মন্তব্যে অনেকেরই মনে হয়েছে, সেটা আসলে নাকি নাদালকে চাপে ফেলার কৌশল, ‘‘নোভাকের সঙ্গে আমার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালটা রাফা নিশ্চয়ই দেখেছিল। জানি না, ও কাকে সমর্থন করেছিল! আশা করি, রবিবার আমার সঙ্গে নাদালের ফাইনালটা নোভাকও দেখবে।’’
ফ্লাসিং মেডোজ়ে সার্বিয়ান তারকার পাখির চোখ ছিল ২১ নম্বর স্ল্যাম জিতে সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়া। কিন্তু রুশ তারুণ্যের ঝোড়ো টেনিসের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। এ বার কী হয়, সেটাই দেখার। যদিও নাদাল বলে রেখেছেন রেকর্ডের কথা ভেবে এখন আর কোর্টে নামেন না। ‘‘যে কোনও ম্যাচেই নিজের সেরা টেনিস খেলার চেষ্টা করি। রেকর্ডের জন্য আলাদা কৌশল নিয়ে রবিবারও খেলব না। তবে আবার বলছি, সুস্থ ভাবে নিজের খেলা খেলতে পারলেই আমি খুশি। অন্য কিছু নিয়ে ভাবি না,’’ বলেছেন নাদাল। অস্ট্রেলীয় ওপেনে যাঁর খেলাই এ বার নিশ্চিত ছিল না, প্রতিযোগিতার কয়েক সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায়।
রাফা আরও বলেছেন, ‘‘আমি লড়াই পছন্দ করি। হ্যাঁ, এই বয়সেও। হয়তো আমার ডিএনএ-তেই সেটা আছে। আশা করি, ফাইনালেও সে ভাবেই খেলব।’’ তবু কেন ২১ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সুযোগ নিয়ে বেশি ভাবছেন না তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘‘দিনের শেষে খেলতে পারাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তা ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। আসলে আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ। যে জিনিসটা ভালবাসি, সেটা চালিয়ে যেতে পারছি ভেবেই সন্তুষ্ট থাকতে চাই। গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতাই আমার কাছে সব নয়।’’
নাদাল শেষ বার অস্ট্রেলীয় ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হন ২০০৯ সালে। ১৩ বছর আগে। শেষ ফাইনাল খেলেন ২০১৯-এ। সে বার জোকোভিচ তাঁকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। ঘটনাচক্রে এ বারের প্রতিপক্ষকে নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন না নাদাল, ‘‘জিততে না পারলেও দু’বার এখানকার ফাইনালে রজার আর নোভাকের বিরুদ্ধে সেরা টেনিসটাই খেলেছিলাম। আমি ভাগ্যবান যে একবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছি। তবে কখনও ভাবিনি, এত বছর পরে আর একবার মেলবোর্নে ট্রফি ধরার সুযোগ পাব!’’
এ দিকে, মেদভেদেভ মানছেন সর্বকালের সেরাদের একজনের বিরুদ্ধেই তাঁকে ফাইনালে খেলতে হবে, ‘‘রাফার সামনে ২১ নম্বর স্ল্যাম জেতার সুযোগ। বুঝতেই পারছি, কাজটা কতটা কঠিন! তবে আমিও তৈরি। জানি আমাকে সেরা খেলা খেলতে হবে। আশা করি পারবও।’’
অস্ট্রেলীয় ওপেনের আয়োজকরা প্রায় ন’লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন মেদভেদেভকে। সেমিফাইনালে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে বিশ্রী তর্ক করার কারণে। রুশ তারকার অভিযোগ, চিচিপাসকে নাকি তাঁর বাবা (যিনি আবার গ্রিস তারকার কোচও) গ্যালারি থেকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন। অনেকের মনে হচ্ছে, এই শাস্তির ফলে রবিবার আরও তেতে থাকবেন একটি মাত্র গ্র্যান্ড স্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন তারকা। যিনি এর আগে চার বার নাদালের সঙ্গে খেলে তিন বারই হেরেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy