বৃহস্পতিবার হাবাসের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস।
প্রশ্ন: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো জন্মগত লিডার আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলেছেন, আপনিই আটলেটিকো কলকাতা দলের একমাত্র সুপারস্টার। এ তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই পুরস্কার!
হাবাস: ওঁকে ধন্যবাদ। আমি ক্রিকেট খেলাটা বুঝি না। কিন্তু ভারতে যে খেলাটা এক নম্বর, তার সফলতম অধিনায়ক বলছেন এই কথা, এ তো আমার কাছে বিরাট কমপ্লিমেন্ট। উনি জানেন কী অবস্থায় গত বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। নিজে প্লেয়ার ছিলেন বলেই এটাও জানেন, পরপর হার আর চোট-আঘাত সামলে একটা টিমকে জয়ে ফেরানোর কাজটা কত কঠিন। অন্য কেউ না জানলেও উনি জানেন প্রতি বার কোনও টিম চ্যাম্পিয়ন হয় না।
প্র: হারের হ্যাটট্রিক। সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আইএসএলের অন্যতম সেরা টিম মুম্বইকে তাদের মাঠে দুরমুশ করে হারানো। আপনাকে তো সবাই ম্যাজিসিয়ান বলতে শুরু করেছে?
হাবাস: কোচের স্ট্র্যাটেজি কাজে লেগেই গেলে সেটা ম্যাজিক হয় নাকি? হাস্যকর কথাবার্তা! খেলার মাঠে কোনও ছল-চাতুরি চলে না। আমার সাফল্যের রসায়ন হল, নিজের দু’টো অভিজ্ঞ চোখ, ঠিক সময়ে ঠিক ফুটবলার খেলানো আর চূড়ান্ত দায়বদ্ধতা। বিশ্বের বহু ভাল টিমকে কোচিং করিয়েছি। সফল হয়েছি। আমি প্র্যাকটিসে ফুটবলারদের শরীরীভাষা আর নড়াচড়া দেখে বুঝতে পারি কে প্রথম এগারোয় ঢোকার উপযুক্ত। আমি ফুটবলারদের মন পড়তে পারি। টিম নিয়ে চব্বিশ ঘণ্টাই ভাবি। ম্যাজিশিয়ান বলে আমার কৃতিত্বকে খাটো করবেন না প্লিজ।
প্র: কিন্তু গত দেড় বছরে এখানকার কোচিং ক্যারিয়ার বলছে টিমের সবচেয়ে দুঃসময়ে আপনার চওড়া কপাল কাজ করেই!
হাবাস: (রেগে) আবার সেই লাক! কীসের লাক? ভাগ্য কাকে বলে জানেন? ধরুন আজ যুবভারতীতে ম্যাচ আছে। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হল। আমরা মানিয়ে না নিতে পেরে হেরে গেলাম। সেটা ভাগ্য। আমার ক্যাপ্টেন জোসেমি আর মার্কি পস্টিগা এক সঙ্গে চোট পেয়ে বাইরে চলে গেল— সেটা ভাগ্য। কিন্তু ছেলেরা কোচের স্ট্র্যাটেজি মেনে মুম্বইয়ের মতো শক্তিশালী দলকে চার গোল দিল— সেটা লাক? যোগ্যতার কোনও দাম নেই। আমাদের মুম্বই জয়কে আমার ভাগ্য বলে ছোট করা হচ্ছে। আমার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যের, গতবার জিকো, আনেলকা, মাতেরাজ্জি, দেল পিয়েরোদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলাম তার পরেও যে সম্মানটুকু প্রাপ্য ছিল, পেলাম না। কেউ বলছেন ম্যাজিশিয়ান, কেউ বলছেন লাক। আমার এত বছরের কোচিং জ্ঞানের কোনও গুরুত্ব নেই? স্ট্র্যাটেজির কোনও দাম নেই।
প্র: কেন বারবার সম্মান পাচ্ছেন না বলছেন? পাঁচতারা হোটেলের লবিতে, শপিং মলে যেখানেই যাচ্ছেন আপনার সঙ্গে সেলফি তুলতে সবাই প্রায় পাগল! মাঠে তো সমর্থকরা আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে এটিকে-কে জেতানোর জন্য।
হাবাস: এটিকে সমর্থকদের জন্য আমি গর্বিত। ওঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ওঁদের উপর আমার কোনও ক্ষোভ নেই। ওঁদের উদ্দেশ্যে শুধু বলছি, এখন আমাদের শেষ চারটে ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা টিমকে ভালবাসেন তাঁরা সবাই যুবভারতীতে আসুন। এই ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ওদের বলতে চাই, হাবাস ওঁদের মাঠে চাইছেন আগুনে মেজাজে। যা দেখেই বিপক্ষ টিম চাপে পড়ে যাবে।
প্র: কে বা কারা আপনাকে প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছেল না সেটা কিন্তু খোলসা করে বললেন না? টিম ম্যানেজমেন্ট?
হাবাস: টুর্নামেন্ট চলছে। তাই এখন কিছু বলে বিতর্ক তৈরি করতে চাই না। তবে ভারতে এসে একটা জিনিস বুঝলাম, এখানে লোকে বেশি কথা বলে, কাজ কম করে। আমি ঠিক উল্টোটা। কাজ করে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করি। বেশি কথা বলায় বিশ্বাস করি না। তবে এটুকু বলছি, আমি এ বার এখানে খুশি নই।
প্র: তিনটে ম্যাচ হারার পর সাময়িক মুষড়ে পরলেও এক দিনের মধ্যেই দেখছিলাম আপনি নিজের পুরনো মেজাজে। সুনীল-সনি-আনেলকাদের ভোকাট্টা করে দেওয়ার এটাই কি রসায়ন?
হাবাস: আমি তো মনে করি কোচ একটা টিমের আয়না। সে-ই যদি ভেঙে পড়ে, টিমের বাকিদের জেতার মানসিকতারই মৃত্যু হবে। ওরা কার কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাতে চাইবে? দিল্লি ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। হেরে খারাপ লাগছিল। ছেলেরা আমার মুখটা দেখেছিল। সেটা ওরা মুম্বই ম্যাচে দেখতে চায়নি বলেই সেরা ম্যাচ খেলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে নেমেছিল। এই মেজাজটা ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ।
প্র: রবের্তো কার্লোসের মতো কিংবদন্তি ফুটবলার আপনার টিমকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদারদের তালিকায় এ বার রাখেননি! জানেন কি?
হাবাস: সে তো জিকোও গত বার একই কথা বলেছিল। শেষমেশ কে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল? না, না। আমি কার্লোসের কথা নিয়ে কিছু বলব না। নো কমেন্টস। তবে এটা জেনে রাখুন আমাদের টিমকে কার্লোস এখনও ঠিক পড়তে পারেনি। আবার তো ১৪ নভেম্বর দেখা হবে দিল্লিতে। তখন দেখা যাবে! আবার এটাও জানবেন, কোনও দলই সব ম্যাচ জেতে না।
প্র: শনিবার নর্থ-ইস্ট ম্যাচ। ওদের মাঠে গিয়ে হেরেছিলেন। এ বার তা হলে এখানে প্রতিশোধের ম্যাচ?
হাবাস: নিশ্চয়ই। ওদের মাঠে হেরেছি, তার পাল্টা জবাব তো দিতেই হবে এখানে। নর্থ-ইস্ট তার পর কেরল, তার পর দিল্লি। সব ক’টা জিততে হবে। তবে আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবছি। প্রতিটা নব্বই মিনিটের জন্য তৈরি করি আমি দলকে।
প্র: দিল্লির বিরুদ্ধে নর্থ-ইস্টের সিমাওয়ের ফ্রিকিকটা দেখেছিলেন?
হাবাস: আইএসএলে সব ম্যাচের প্রতিটা সেকেন্ডে কী হয়েছে বলে দিতে পারি। সিমাও-কেও দেখেছি। জানি। ভাল ফুটবলার।
প্র: মহম্মদ রফিককে ফেরাতে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলেন! যে ফুটবলারের গোলে গত বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, তাঁকেই এ বার ছেঁটে ফেলেছিলেন কেন?
হাবাস: রফিককে আমি বাদ দিয়েছিলাম কে বলল? ও আমার পছন্দের ফুটবলার ছিল। রফিক, লোবো, রফি সবাইকে আমি রাখতে চেয়েছিলাম। আসলে গত জানুয়ারি-থেকে মে-এই পাঁচ মাস আটলেটিকো মাদ্রিদের সঙ্গে কলকাতার টিমের কর্তাদের কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম না, শেষ পর্যন্ত কী হবে। আমি চুক্তিতে সই করার আগেই চার-পাঁচজন ভারতীয় ফুটবলারকে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আমার সঙ্গে কোনও কথা না বলেই।
প্র: সুশীল সিংহ, নাদং ভুটিয়া, ক্লিফোর্ড মিরান্দা। ভাইচুং ভুটিয়ার বেছে দেওয়া এই সব ফুটবলার কার্যত এখন আপনার টিমের বোঝা! মানেন কী?
হাবাস: ওরা এখন আমার টিমের ফুটবলার। টিমের অঙ্গ। আমি টিমগেমে বিশ্বাসী। সবাই আমার কাছে এখন অপরিহার্য।
প্র: সেমিফাইনাল উঠতে পারবেন?
হাবাস: আমি কেন, সেটা কেউই এখনই বলতে পারবে না। সবে তো সাতটা ম্যাচ হল। এ বারের লড়াইটা কিন্তু অনেক কঠিন। সবাই ব্যালান্সড দল গড়েছে। যা গত বার ছিল না। আবার বলছি আমাদের কাছে শেষ চারটে ম্যাচ প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। কত পয়েন্ট পেলে শেষ চারে যাওয়া যাবে এখনও বুঝতে পারছি না।
প্র: ভারতের জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের চাকরি যায় যায়। ভারতের কোচ হওয়ার ইচ্ছে আছে আপনার?
হাবাস: ও সব নিয়ে এখন ভাবতেই রাজি নই। এখন আমি এটিকের কোচ। ডিসেম্বর পর্যন্ত এটাই আমার ধ্যান-জ্ঞান। তারপর তো চুক্তি শেষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy