নায়ক: হ্যাটট্রিক করে সতীর্থের সঙ্গে নাচছেন কৃষ্ণ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
রয় কৃষ্ণ যখন হ্যাটট্রিকের গোলটা করলেন, তখন দু’হাত আকাশে তুলে কোমর দুলিয়ে ফেললেন আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসও।
কালো প্যান্ট, সাদা প্যান্টের রাগি চেহারার মেজাজি হাবাসের শনিবাসরীয় রাতে খুশি হওয়ারই কথা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে শেষ চারে ওঠা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ফের লিগ শীর্ষে উঠে গেল তাঁর দল এটিকে। টানা ছয় ম্যাচ অপরাজিত থাকার সঙ্গে শেষ চার ম্যাচে জয়ের মুকুট। লাল-সাদা জার্সির হেডমাস্টার তো গর্বিত হবেনই।
হাবাস যখন নাচছেন, তখন দেখা গেল তার একটু দূরেই এক বঙ্গসন্তান প্রবীর দাসের সঙ্গে নাচছেন এ দিন হ্যাটট্রিক করে নায়ক হয়ে যাওয়া রয় কৃষ্ণও। যিনি সারথি হয়ে পরিচালনা করলেন এটিকে-জয়রথকে।
কৃষ্ণের তিন তিনটি গোল দেখে মনে হল তিনটি রংমশাল বা তুবড়ি। যার স্ফুলিঙ্গ যুবভারতীকে আরও আলোকিত করে দিল। প্রথম গোলটা করলেন জাভি হার্নান্দেসের কর্নার থেকে। মাটিতে বল পড়ার আগেই হাফ ভলি। দ্বিতীয় গোলটা বুদ্ধি আর গতির সংমিশ্রণের ফসল। পেনার কাছ থেকে বল পেয়ে তীব্র গতিতে তিরিশ গজ দৌড়ে ওড়িশা বক্সে ঢোকার সময় কৃষ্ণকে মনে হল ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’। সামনে ওড়িশার স্পেনীয় গোলকিপার ফ্রান্সিসকো রোমান এগিয়ে আসছেন দেখে তাঁর মাথায় উপর দিয়ে বলটা তুলে দিলেন হাবাসের দলের সেরা স্ট্রাইকার। শেষ গোলটা হল জয়েশ রানের পাস থেকে। বিরতির পরে এটিকে ৩-০ করে ফেলল ৬৪ মিনিটের মধ্যেই। দু’মিনিট পরে ব্যবধান কমাল জোসেফ গাম্বোর দল। ম্যানুয়েল ওনুর গোলে। এটিকে কোচ বললেন, ‘‘এই আইএসএলে এটাই সেরা ম্যাচ। পরের দুটি ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলাই লক্ষ্য আমাদের।’’ কৃষ্ণের দু’নম্বর গোলকে ‘অসাধারণ’ বলে দিয়েছেন তিনি।
চার ম্যাচে গোল ছিল না কৃষ্ণের। শুরু হয়েছিল সমালোচনাও। কিন্তু সব হিসাব উল্টে দিয়ে কৃষ্ণ দেখালেন, তিনি যে কোনও সময়ই ‘অবতার’ হয়ে দেখা দিতে পারেন দলে। পরপর দু’ম্যাচে পাঁচ গোল-- শেষ কবে কোন ভারতীয় ফুটবলার এই সাফল্য পেয়েছেন তা খুঁজতে দূরবিন লাগবে। প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে সোনার বুটের অন্যতম দাবিদার হিসাবে নিজেকে তুলে ধরলেন কৃষ্ণ।। তাঁর সব চেয়ে বড় গুণ মাঠের অনেকখানি জায়গা জুড়ে খেলেন। বল পায়ে পড়লেই আগুনে গতিতে ছোটেন। ঠিক সময়ে পৌঁছে যান গোলের কাছে। তিনটি গোলের মধ্যে কোনটি সেরা? ম্যাচের সেরা বললেন, ‘‘সব ক’টিই। সব গোলের সঙ্গেই তো আনন্দ জড়িয়ে থাকে।’’ ভারতে খেলতে আসার পরে প্রথম হ্যাটট্রিক। কাকে উৎসর্গ করছেন? নিজের মডেল বান্ধবীর কথা বেরোয়নি মুখ থেকে। বরং তিনি যে টিম ম্যান তা বোঝাতে বললেন, ‘‘পারিবারিক সমস্যার কারণে ডিফেন্ডার আগুস্তো আজই দেশে ফিরেছে। ওকেই গোল উৎসর্গ করছি। একটু স্বস্তি পাবে ও।’’
ভারতে এখন স্পেনীয় ফুটবলারদের জোয়ার। যা হিসাব পাওয়া যাচ্ছে তাতে আইএসএল, আই লিগ মিলিয়ে জনা তিরিশ স্পেনের ফুটবলার খেলছেন বিভিন্ন ক্লাবে। শুধু কলকাতার তিনটি ক্লাবেই নয়, বিভিন্ন দলে হাবাস, কার্লেস কুদ্রাত, কিবু ভিকুনাদের মতো কোচেদের রমরমা। শনিবারের ম্যাচে দু’দলের দশ বিদেশির মধ্যে ন’জনই স্পেনের। একমাত্র রয় কৃষ্ণ ছিলেন ফিজির। দিনের শেষে তাঁর মাথাতেই ম্যাচ সেরার মুকুট। ১৩টা গোল করে ফেলেছেন অস্ট্রেলীয় লিগে খেলে আসা এই স্ট্রাইকার। ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা নেওয়ার সময় তাঁর নামের জয়ধ্বনিতে উঠল স্টেডিয়ামে। কৃষ্ণ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামেন, সেটাই এখন দেখার।
এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, ভিক্টর মঞ্জিল, সুমিত রাঠি, প্রবীর দাস, জাভি হার্নান্ডেজ, জয়েশ রানে (প্রণয় হালদার), সোসাইরাজ (আনাস এথানোডিকা), আর্মান্দো সেসা পেনা (ডেভিড উইলিয়ামস), এদু গার্সিয়া, রয় কৃষ্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy