Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Team India

Team India: ভারতের এই পেস আক্রমণ এখন বিশ্বের এক নম্বর

১৯৮২ সালের কথা এখনও মনে আছে। লর্ডসে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম সে বার।

ফাইল চিত্র

অশোক মলহোত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ০৫:১৫
Share: Save:

বিদেশের মাটিতে খেলা মানেই ভারতীয় দলকে পরীক্ষায় ফেলা হবে ঘাসে ভরা পিচে। ভারতও তেমনই বিদেশি দলগুলোকে স্বাগত জানাত শুষ্ক ও ঘূর্ণি পিচে। সেই রীতি ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। বর্তমান ভারতীয় পেস বিভাগের আবির্ভাবের পর থেকে বিদেশেও বিপক্ষ দলগুলো আর সম্পূর্ণ ঘাসে ভরা পিচ রাখার সাহস পাচ্ছে না। কারণ, ভারতীয় দল পেয়ে গিয়েছে এমন কয়েক জন পেসারকে, যারা ব্যাটসম্যানদের রাতের ঘুম কেড়ে
নিতে পারে।

১৯৮২ সালের কথা এখনও মনে আছে। লর্ডসে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম সে বার। বিষাণ সিংহ বেদী অধিনায়ক। টস করার আগে পিচ পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন, আউটফিল্ডের সঙ্গে কোনও তফাত নেই। ড্রেসিংরুমে ফিরেই দল তৈরি করেন বেদী। ব্যাটসম্যান হিসেবে আমাকে নেওয়া হলেও অন্যতম কারণ ছিল বল করানো। আমি জোরের উপরে অফস্পিন করতে পারতাম। তাই ঘাসে ভরা পিচে সাহায্য পাওয়ার সুযোগ ছিল। দলে পেসার বলতে সেই কপিল দেব। মদন লালের বলে গতি তেমন ছিল না। মিডিয়াম পেসার হিসেবেই জায়গা পেত। সেটাই ছিল আমাদের পেস বিভাগ।

জাভাগাল শ্রীনাথই প্রথম ভারতীয় পেসার, যার গতিকে সমীহ করত ক্রিকেটবিশ্ব। তার পর থেকে আসতে শুরু করে অজিত আগরকর, জ়াহির খান, আশিস নেহরা, ইরফান পাঠান, শ্রীসন্থের মতো বোলার। সেই প্রজন্মের পেস বোলারদের দেখেই অনুপ্রাণিত হয় যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজরা। ইশান্ত শর্মাই একমাত্র যে গত প্রজন্মের পেসারদের সঙ্গেও খেলেছে। তাদের থেকে পাওয়া শিক্ষা বিলিয়ে দিতে পারে নতুন প্রজন্মের কাছে।

বর্তমান ভারতীয় পেস বিভাগের মোট উইকেটসংখ্যা ৭০০-র উপরে। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনও বোলিং বিভাগের ৭০০ উইকেট শেষ বার দেখা গিয়েছিল ১৯৭০-এর আশেপাশে। বিষাণ বেদী, ভগবত চন্দ্রশেখর, এরাপল্লি প্রসন্ন ও শ্রীনিবাস বেঙ্কটরাঘবনরাই তখন স্পিন বিভাগ দাপিয়ে বেড়াতেন। কেউ কি তখন ভাবতে পেরেছিলেন ভারত থেকেই উঠে আসবে এমন একটি প্রজন্ম, যারা বিশ্বসেরা পেস বিভাগ হিসেবে আলোচিত হবে?

কেন ভারতের এই পেস আক্রমণকে বিশ্বসেরা বলছি? বিরাট কোহালির দলে যে চার জনকে খেলানো হচ্ছে, তারা কেউ এক ধরনের বোলিং করে না। প্রত্যেকের গতিই ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটারের বেশি। প্রয়োজনে ক্রমাগত ১৪০-এর উপরেও বল করে যেতে পারে। বুমরার শক্তি ওর ইনসুইং। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েকটি বল বাইরের দিকে নিয়ে যায়। যা ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লেগে চলে যায় স্লিপে। ঠিক যে ভাবে লর্ডসে আউট হয়েছে জো রুট। ইশান্ত শর্মার মূল শক্তি ওর ইনসুইং। জনি বেয়ারস্টো ও হাসিব হামিদ পরাস্ত হয় অভিজ্ঞ পেসারের ভিতরের দিকে আসা বলে। সেই সঙ্গে হাতে আছে লেগকাটার। মহম্মদ শামির থেকে শেখা উচিত, কী ভাবে বলের সেলাই ব্যবহার করতে হয়। ওর মতো সোজা ‘সিম’ ফেলার শিল্প বিশ্বের কোনও পেসার রপ্ত করতে পারেনি। লর্ডসে দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনার ডম সিবলি যে ভঙ্গিতে আউট হয়েছে, তা দেখেই বোঝা গিয়েছে, সেলাইয়ে পড়েই নড়েছে বল। সব শেষে আসা যাক মহম্মদ সিরাজের কথায়। ওর মূল শক্তি অফুরন্ত দম, ধৈর্য ও দু’দিকে সুইং করানোর ক্ষমতা। রিজার্ভ বেঞ্চও বাদ যায় কী করে। সেখানে উমেশ যাদব, শার্দূল ঠাকুরের মতো পেসার বসে আছে। ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চও কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা অস্ট্রেলিয়া সফরেই দেখা গিয়েছে। কোনও দেশে এতটা বৈচিত্র নেই পেস বিভাগে। ইংল্যান্ড ভরসা করে থাকে জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রডের উপরে। অস্ট্রেলিয়ায় সেই মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। নিউজ়িল্যান্ডে ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি। দক্ষিণ আফ্রিকায় কাগিসো রাবাডা। ওরা কোনও ম্যাচের আগে চোট পেয়ে গেলে বিকল্প নেই সেই দেশের হাতে। ভারতে কিন্তু তা নয়। ২০০০ সালের অস্ট্রেলিয়ার মতো আমরাও অনায়াসে দু’টো দল নামিয়ে দিতে পারি।

ভারতীয় পেস বিভাগের উন্নতির নেপথ্যে কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে। প্রথমেই বলব ভারতীয় বোর্ডের ভূমিকা। এখন রঞ্জি ট্রফিতে ঘাসে ভরা উইকেট তৈরি করা হয়। প্রত্যেকটি রাজ্যে এক জন করে পেসার আছে, যাদের গতি ১৪০ কিলোমিটারের বেশি। আইপিএলে বিদেশি পেসারদের সংস্পর্শে এসে তাদের থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগও আছে এখন। শেষে বলতেই হচ্ছে অধিনায়ক বিরাট কোহালির কথা। একমাত্র অধিনায়ক যার নেতৃত্বে গতির বিপ্লব ঘটেছে ভারতীয় ক্রিকেটে। অধিনায়ক বিরাট, কোচ রবি শাস্ত্রীর ভরসা ও বিশ্বাসই ভারতীয় পেস বিভাগকে অন্য মাত্রায়
নিয়ে গিয়েছে। করেছে এক নম্বর।

অন্য বিষয়গুলি:

Team India Mohammed Shami Jasprit Bumrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy