প্রশ্ন: অনেক দিন বাদে আপনার গলা শুনলাম। কেমন আছেন? এই জীবনটা কী রকম কাটছে?
শ্রীসন্ত: জীবন আমি সব সময় উপভোগ করি। স্ত্রী, দুই বাচ্চা পাশে আছে। মুভির প্রোমোশনের কাজ করছি। আশা করছি মুভিটা হিট হবে। তবে দিনের শেষে আমি একজন ক্রিকেটার। ক্রিকেটার হিসেবেই আমার পরিচিতি। আমি আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরতে চাই।
প্র: আপনি তো ফিল্মে নেমেছেন। শ্যুটিং, প্রোমোশন এ সব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে ক্রিকেটটা ম্যানেজ করছেন কী ভাবে?
শ্রীসন্ত: প্র্যাকটিসটা কিন্তু করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হল আমি এখন দারুণ ফিট। আগের চেয়ে আরও জোরে বল করছি। শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিংটাও ভাল করে চালিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি, দুটোতেই আগের চেয়ে অনেক ভাল জায়গায় আছি। কিন্তু শুধু প্র্যাকটিস করে গেলেই তো হবে না।
প্র: আর কী দরকার আপনার?
শ্রীসন্ত: কম্পিটিটিভ ক্রিকেট। তা হলে ঠিক মতো বুঝতে পারব আমি কতটা উন্নতি করেছি। ভাল ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বোলিং আর ভাল বোলারদের বিরুদ্ধে ব্যাটিং— এটাই এখন করতে চাই।
প্র: সেটা কী ভাবে সম্ভব? এখন আপনি প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট কী ভাবে খেলবেন?
শ্রীসন্ত: আমি নানা জায়গায় চিঠি লিখছি আমাকে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমি বোর্ডের নতুন প্রশাসক প্যানেলের প্রধান বিনোদ রাইয়ের কাছে লিখতে চাই, স্যার আমাকে খেলতে দিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দেখা গিয়েছে, দোষী ক্রিকেটাররা শাস্তি পাওয়ার পর আবার ফিরে এসেছে। তা হলে আমার ক্ষেত্রে নিয়মটা কেন আলাদা হবে? ক্রিকেট আমার সব কিছু। আমার জীবিকা। স্যার, আমি আবেদন করছি, আমাকে আবার খেলতে দিন।
প্র: আপনি কী আশা করছেন? বিসিসিআই আপনাকে আবার খেলতে দেবে?
শ্রীসন্ত: কেন নয়? আমার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে অতীতে। কিন্তু এখন বোর্ডে সংস্কার হচ্ছে। নতুন প্যানেল এসেছে। তারা নিশ্চয়ই আমার ব্যাপারটা দেখবে। আশা করছি, আমার উপর নিষেধাজ্ঞাটা তুলে নিয়ে আমাকে আবার খেলতে দেবে।
প্র: আপনার সামনে রোডম্যাপটা কী? কী ভাবে ফেরার রাস্তাটা ছকেছেন?
শ্রীসন্ত: দেখুন, মহামান্য আদালত তো আমাকে মুক্তি দিয়েছে। আমাকে প্রচুর লোক সাহায্য করছেন। ক্রিকেটপ্রেমীরা আমার সঙ্গে আছেন। আমি শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে চলেছি, যেন আবার খেলার সুযোগ পাই। আমার প্রথম লক্ষ্য কেরল রঞ্জি টিমে ফিরে আসা। সেখানে ভাল পারফর্ম করে জাতীয় দলে।
প্র: কেরল ক্রিকেট সংস্থার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং বোর্ডের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট টিসি ম্যাথু বলেছেন, আপনি দারুণ পরিশ্রম করছেন। রাহুল দ্রাবিড়ও নাকি আপনার বোলিং দেখে খুশি। ম্যাথুর বক্তব্য, আশিস নেহরা যদি ৩৭ বছর বয়সে কামব্যাক করতে পারেন, তা হলে শ্রীসন্ত কেন ৩৩ বছর বয়সে পারবেন না। আপনি কী বলবেন?
শ্রীসন্ত: ম্যাথুকে ধন্যবাদ আমার কথা বলার জন্য। উনি তো বিসিসিআইয়ের লোক। উনি নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। দেখুন, আপনাকে একটা কথা বলি। আমি যদি দোষী হতাম, তা হলে কি ফেরার জন্য এতটা মরিয়া হয়ে উঠতাম? আমি দেশকে কিছু দিতে চাই। আমার লক্ষ্য আবার জাতীয় দলে খেলা এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা।
প্র: আপনি কি সত্যিই আবার ভারতীয় দলে ফেরার আশা রাখেন?
শ্রীসন্ত: কেন রাখব না? তবে সব কিছু নির্ভর করছে আমার ফিটনেসের উপর। আমি কতটা জোরে বল করতে পারছি, কতটা ভাল ব্যাট করছি, তার উপর।
প্র: আপনি এত দিন ক্রিকেটের বাইরে রয়েছেন। আপনার সঙ্গে কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার বা বর্তমান ক্রিকেটারের যোগাযোগ রয়েছে? যাঁরা আপনার ফেরার লড়াইয়ে পাশে থাকছেন?
শ্রীসন্ত: হ্যাঁ কেন থাকবে না? অনেকেই আমার পাশে আছে। বীরু পা (বীরেন্দ্র সহবাগ) ভাজ্জি পা (হরভজন সিংহ) যুবরাজ, সুরেশ রায়না। ওরা সবাই বিশ্বাস করে আমি আবার মাঠে ফিরতে পারব। এ ছাড়া প্রচুর মানুযের ভালবাসা আছে আমার সঙ্গে। আমি নিশ্চয়ই ফিরব। সে জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছি।
প্র: আপনাকে এই প্রশ্নটা না করে উপায় নেই। সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলোয় কী হয়েছিল?
শ্রীসন্ত: সত্যিই দুঃস্বপ্নের দিন। আমার ওই ঘটনার পরে আমার বাবার দু’বার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছিল। ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। মা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল। পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু আমি লড়াই ছাড়িনি।
প্র: আপনি কি সত্যিই অপরাধ করেছিলেন? না হলে শাস্তি হবে কেন?
শ্রীসন্ত: আবার বলছি, আমি দোষ করলে কি ফিরে আসার জন্য এমন লড়াই লড়তাম? আমি জানি না আমাকে কে ফাঁসিয়েছে। আমি কারও নাম করতে চাই না। শুধু বলব, কারও বিরুদ্ধে এ রকম মারাত্মক অভিযোগ আনার আগে সব সময় জেনে নেওয়া উচিত অভিযোগের মধ্যে কোনও সত্যতা আছে কি না। ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই অভিযোগ করা কিন্তু চরম অন্যায়।
প্র: আপনার পাশে যেমন অনেকে আছেন, আবার আপনার বিরুদ্ধেও তো অনেকে আছেন। যাঁরা বলছেন, আপনি আর ফিরতে পারবেন না।
শ্রীসন্ত: আমি জানি তাদের কথা। এক জন কমেন্টেটর আছে, যার নাম আমি নিতে চাই না, সে বলেছে আমি ফিরতে পারব না। আমি তাকে বলছি, আমার জায়গায় যদি থাকতে, আমি যে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, সেটা যদি তোমাকে করতে হতো, তা হলে দু’দিনও টিকে থাকতে পারতে না।
প্র: আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে ইচ্ছাকৃত ভাবে রান দেওয়ার।
শ্রীসন্ত: আমি গোটা বিশ্বকে বলব, ওই বিশেষ ওভারটার কথা একবার ভাবুন। ১৪ রান হয়েছিল ওই ওভারটায়। আমার প্রথম চার বলে পাঁচ রান হয়েছিল। এ বার বলুন, বিশ্বে কোন ব্যাটসম্যান আছে যে ইচ্ছামতো শেষ দু’বলে ৯-১০ রান তুলতে পারবে? আমি ওই ওভারটা ১৩০-১৩৫ গতিতে বল করছিলাম। কোনও ওয়াইড, নো করিনি। ফিক্সিং করলে কেন শেষ দু’বলে ৯-১০ রান দেওয়ার ঝুঁকি নেব? রান দেওয়ার অনেক রাস্তা থাকে। কিন্তু ওভারটা দেখলেই বুঝবেন, আমি নিজের সেরাটাই দিয়েছিলাম।
প্র: আর কোমরে সাদা তোয়ালে গুঁজে রাখার অভিযোগটা? বলা হয়, আপনি ওই তোয়ালে রেখে বুকিদের সিগন্যাল দিয়েছিলেন?
শ্রীসন্ত: ওহ মাই গড! (সামান্য সময় ফোনের ওপারে স্তব্ধতা) ওটা নিছকই কাকতালীয় ব্যাপার। কেউ কেউ বলতে পারে, ওটা কুসংস্কার। অনেক ক্রিকেটার এ রকম রেখে থাকে। কিন্তু আমি সে সব বলব না। সেটা একটা অজুহাত হবে। আমি সত্যি কথাটাই বলব। ওটা নিছকই একটা দুর্ঘটনা। আমি যদি জানতাম, এ রকম হবে, তা হলে ওটা রাখতামই না। আমি প্রায়ই হেডব্যান্ড পরে খেলি, রিস্ট ব্যান্ড পরে খেলি। তা হলে কি সব কিছুর মধ্যে দিয়েই সিগন্যাল পাঠাই?
প্র: শেষ প্রশ্ন। সুনীল গাওস্কর এক বার বলেছিলেন, কপিল দেবের পর এতো ভাল আইটসুইং আর কারও হাতে দেখেননি। শ্রীসন্তের সেই আউটসুইং কি আবার দেখা যাবে?
শ্রীসন্ত: কেন নয়। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখছি। মানুষের ভালবাসায় বিশ্বাস রাখছি। আমি কিন্তু লড়াই ছাড়ব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy