Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

টোকিয়োকেই পাখির চোখ করছেন বক্সার

রিয়ো অলিম্পিক্সের উজ়বেকিস্তানের সোনাজয়ী বক্সার সাখোবিদিন জ়ইরভের কাছে কার্যত দাঁড়াতেই পারেননি হরিয়ানার বিস্ময় প্রতিভা।

অমিত পাঙ্ঘাল।—ছবি পিটিআই।

অমিত পাঙ্ঘাল।—ছবি পিটিআই।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৪
Share: Save:

বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিততে না পারায় আফসোস থাকলেও ভেঙে পড়ছেন না অমিত পাঙ্ঘাল। ফাইনালে হারের পরে রাশিয়ার একতারিনবার্গে শনিবার বেশি রাতে ফোনে ধরা হলে ভারতীয় বক্সিংয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা ছেলে বলে দিলেন, ‘‘সোনা না পাওয়ায় আফসোস থাকলেও আমি ভেঙে পড়ছি না। তবে যে প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছিলাম, তাতে ০-৫ হেরে যাব ভাবিনি। সেটাই খারাপ লাগছে। আমার যে প্রতিপক্ষ ছিল, সে যথেষ্ট শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞ। জানতাম লড়াইটা সহজ হবে না। তবে লড়াইটা ভালই দেব আশা করেছিলাম।’’

রিয়ো অলিম্পিক্সের উজ়বেকিস্তানের সোনাজয়ী বক্সার সাখোবিদিন জ়ইরভের কাছে কার্যত দাঁড়াতেই পারেননি হরিয়ানার বিস্ময় প্রতিভা। বলছিলেন, ‘‘প্রথম গেমে আমি একটু বেশি সময় নিয়েছিলাম বলে ব্যর্থ হয়েছি। কোচ আমাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে আরও আক্রমণাত্মক হতে বলেছিলেন। সেটা করার চেষ্টা করলেও জ়ইরভ আমাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ঘুসি মারার সুযোগ দেয়নি। দ্বিতীয় গেমে হেরে যাওয়ার পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। কোচ যে রণনীতি তৈরি করে দিয়েছিলেন, সেগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। ‘প্ল্যান বি’ বা ‘প্ল্যান সি’-ও কাজে লাগাতে পারিনি। আসলে আজ আমার দিন ছিল না। সব যুদ্ধে তো জেতা যায় না। তবে আমি তো জওয়ান, তাই পরের যুদ্ধে জেতার কথা এ বার ভাবতে হবে।’’

পদক প্রদান অনুষ্ঠানের পরে ছিল ডোপ টেস্ট। তারপর যখন তাঁকে কোচ সি এ কুটাপ্পার ফোনের মাধ্যমে ধরা হল, তখন হারের ধাক্কা প্রায় কাটিয়ে উঠেছেন অমিত। বলছিলেন, ‘‘আমার পরের লক্ষ্য টোকিয়ো অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করা। সে জন্য নভেম্বরে পাটিয়ালায় জাতীয় শিবির শুরু হবে। সেখানে যোগ দেওয়ার আগে যাব চিনে। ওখানে বিশ্ব সেনা গেমস আছে ১৯ থেকে ২৭ অক্টোবর। ওই প্রতিযোগিতা থেকে ফিরে জাতীয় শিবিরে যোগ দেব। আপাতত কয়েক দিন বিশ্রাম নেব।’’

জওয়ান বলেই সম্ভবত ইস্পাত কঠিন মানসিকতা হেরে যাওয়ার পরেও। অমিত বলে দেন, ‘‘আমার আগে তো ফাইনালে ভারতের কেউ উঠতে পারিনি। এখানে সোনা পাইনি ঠিকই, কিন্তু টোকিয়োতে সুযোগ পেলে দেশের জন্য পদক নিয়ে আসবই। ওটাই আমার এখন একমাত্র স্বপ্ন।’’ আরও বললেন, ‘‘উচ্চতায় আমি একটু খাটো বলে সমস্যা হয়। তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। এখনও পর্যন্ত ৬০-৭০ শতাংশ তৈরি হয়েছি।’’

যিনি গত দু’বছর ধরে অমিতকে তৈরি করেছেন, সেই ভারতীয় দলের চিফ কোচ কুটাপ্পা বলছিলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত টোকিয়োতে ও সুযোগ পেয়ে যাবে। এশীয় পর্যায়ে উজ়বেকিস্তানের দু’তিনজন বক্সার ছাড়া অমিতের আর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।’’ কিন্তু সুযোগ পেলেই কী ছাত্র পদক আনতে পারবে? কুটাপ্পার জবাব, ‘‘ওর জেদ ভয়ঙ্কর। দু’বছর আগে যখন সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল, তখন মাঝেমধ্যেই দু’দিন বাড়ি যাওয়ার নাম করে সাত দিন কাটিয়ে আসত। অমিতকে আমি বোঝাতাম কোনও জওয়ানের এত ছুটি কাটানো উচিত নয়। বোঝাতাম, ঠিকঠাক অনুশীলন করলে অলিম্পিক্স পদক পাবেই। ওটাই সর্বোচ্চ লক্ষ্য হওয়া উচিত। গত চার মাসে ও একদিনের বেশি সপ্তাহে ছুটি নেয়নি। ছুটির দিনেও আমার কাছে আসত বক্সিং নিয়ে আলোচনা করতে।’’ যে ঘটনার কথা শুনে হাসতে হাসতে অমিত বললেন, ‘‘সেটা ঠিক, তবে এখন কিন্তু আমি সকলে চলে যাওয়ার পরেও অনুশীলন করি। ছুটির দিনেও সেই নিয়ম বজায় থাকে। এখন বরং কোচেরাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন।’’ শনিবারের ফাইনাল নিয়ে কোচ কুটাপ্পার ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথম রাউন্ডে অমিত খারাপ করলেও আশা ছিল ঘুরে দাঁড়াবে। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী লড়লে সোনাটা হয়তো চলেই আসত। এই লড়াই নিয়ে তিন-চারদিন পরে আমি বিশ্লেষণ করব।’’

ফাইনালের আগে জ়ইরভের শেষ চারটি লড়াইয়ের ভিডিয়ো অমিতকে দেখিয়েছিলেন কুটাপ্পা। অমিত বলছিলেন, ‘‘উজ়বেক বক্সার নতুন রণনীতি তৈরি করে নেমেছিল। সেটা প্রথম গেমে ধরতে পারিনি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy