ধোনির সঙ্গে অনন্ত সাহা।
প্রশ্ন: প্রথমেই জানতে চাইব ক্রিকেট কেন? ফুটবল, হাডুডু নয় কেন?
উত্তর: ফুটবল আমার প্রিয় খেলা। যেমন ক্রিকেটকে ভালবাসি তেমনই ফুটবলকে ভালবাসতাম। আমার বাড়িতে ক্রিকেট খেলার একটি প্রতি একটা ভালবাসা ছিল। আমি যখন খুব ছোটছিলাম বাবার পাশে বসেই খেলা দেখতাম। বাবা খুব ক্রিকেট ভালবাসতেন। তাঁর প্রিয় বোলার ছিলেন জাভাগাল শ্রীনাথ। বাবা বারবারই বলতেন, ‘‘তোকে শ্রীনাথের মতো বোলার হতে হবে। ভারতীয় ক্রিকেট দলে খেলতে হবে।’’ সেই থেকেই যেন ভিতরে ভিতরে একটা টান চলতে থাকে। সেই যে ক্রিকেট শুরু করি আর পিছনে ফিরে তাকাইনি।
প্রশ্ন: এ বারে অনূর্ধ্ব-২৩ ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়েছেন। কেমন লাগছে? এই সময় কাকে সব থেকে বেশি মনে পরছে?
উত্তর: আসলে এটা আমার কাছে একটা স্বপ্নের মতো। আজ আমি খুবই আনন্দিত এবং খুশি। সব থেকে বেশি মনে পড়ছে বাবাকে। বাবা চাইতেন আমি ভারতীয় দলে খেলি। সেই চাওয়ার কিছুটা আজ পূরণ হয়েছে। আজ বাবা বেঁচে নেই। তিনি বেঁচে থাকলে কী যে খুশি হতেন, তা অনুভব করতে পারি কিছুটা। তবে এখানেই থেমে থাকতেই চাই না। আমার লক্ষ্য আরও এগিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যে নিজেকে তৈরি করাই এখন আমার প্রধান কাজ।
প্রশ্ন: চিলাখানার মতো একটি গ্রাম থেকে আপনি ভারতীয় ক্রিকেট দলে। এটা কী করে সম্ভব হল? কখনও এমনটা ভেবেছিলেন?
উত্তর: চিলাখানা সত্যি একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। সেই গ্রামই আমার এগিয়ে যাওয়ার প্রথম প্রেরণা। গ্রামের মানুষেরা আমার পাশে ছিলেন। আমাকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়েছেন। যে কোনও প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তুফানগঞ্জ-কোচবিহার হয়ে কলকাতায় পৌঁছে যাই। এর পরে অনূর্ধব-২৩ বাংলা দলে সুযোগ পাই। নিজের সবটা উজার করে দিয়ে ভাল খেলার চেষ্টা করেছি। রঞ্জিতেও খেলেছি। এ বারে ভারতীয় ক্রিকেট দলে। বাবার আশীর্বাদ আর সবার ভালবাসা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনার পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। মানে ছোটবেলায় বল-ব্যাট কেনা নিয়েও প্রতিনিয়ত আপনাকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
উত্তর: আমরা দুই ভাই, তিন বোন আর মা-বাবা। এই আমাদের পরিবার। বাবা সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন। বাজারে ছোট্ট মুদির দোকান চালাতেন। তাতে আর কত আয় হয়? তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলত। প্রতিনিয়ত টানাটানি চলত। সেই অবস্থার মধ্যে আমাকে ব্যাট-বল বা খেলাধূলার সরঞ্জাম কিনে দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না বাবার। খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে। সেই সময় আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রতিবেশী উত্তম সাহা। আমি যাকে ‘পাপাই দা’ বলে ডাকতাম। সেই দিনগুলির কথা কখনও ভুলতে পারব না।
প্রশ্ন: ছোট্টবেলা থেকে কতটা সময় কাটিয়েছেন ক্রিকেটের সঙ্গে। মানে কতক্ষণ প্র্যাকটিস করতেন?
উত্তর: আমার তো ছোটবেলা থেকে বইয়ের থেকে মাঠের সঙ্গে সখ্যতা সবচেয়ে বেশি। সকাল থেকেই মাঠ আমাকে টানত। সকাল গড়িয়ে দুপুর, তারপর বিকেল, সন্ধ্যা। মাঠ ছেড়ে যেতে ভাল লাগত না। রাত হলেই অপেক্ষা করতাম আবার কতক্ষণে মাঠে ছুটে যাব। সারাদিন ব্যাট আর বল নিয়েই থাকতাম। গ্রামের আরও অনেকে একসঙ্গে খেলতে নামতাম। আমার বোলিং করতে খুব ভাল লাগত। তার উপরেই সব থেকে বেশি মনযোগ দিয়েছি।
প্রশ্ন: কলকাতায় কীভাবে পৌঁছলেন? কারা কারা সাহায্য করেছে?
উত্তর: গ্রাম থেকে তুফানগঞ্জ। তারপর কোচবিহার। পাপাইদা তো সবসময় পাশে ছিলেন। আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন সমীর চক্রবর্তী। তিনিও সবসময় পাশে ছিলেন। কলকাতায় আমাকে সবসময় গাইড করেছেন শিবশঙ্কর পাল (ম্যাকো)। তাঁর অ্যাকাডেমি থেকেই আমি প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। ম্যাকো’দার বাড়ি তুফানগঞ্জে। তিনি ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। আমি যাতে ভাল খেলতে পারি সে জন্য সবসময় গাইড করেছেন তিনি।
প্রশ্ন: আচ্ছা, শ্রীনাথের সঙ্গে কখনও দেখা হয়েছিল?
উত্তর: না এখনও জাভাগল শ্রীনাথের সঙ্গে দেখা হয়নি আমার। তবে আমার খুব ইচ্ছে আছে একদিন শ্রীনাথের সঙ্গে দেখা করার। সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছি। আমার সঙ্গে আশিস নেহেরা, জাহির খান, গ্লেন ম্যাকগ্রা’র দেখা হয়েছে। কথা হয়েচ্ছে। তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি ও শিখেছি আমি।
প্রশ্ন: দলের সঙ্গে কবে থেকে যোগ দিচ্ছেন? তা নিয়ে কতটা অপেক্ষায় রয়েছেন?
উত্তর: আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ছত্রিশগড়ে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা রয়েছে ভারতের। তার আগেই দলের সঙ্গে যোগ দেব।
প্রশ্ন: গত কয়েক বছর ধরেই পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা রেখেছেন আপনি। অনূর্ধব-২৩ বাংলা দলের হয়ে খেলেছেন। চলতি মরসুমে ধারাবাহিক সফলতা পেয়েছেন। পেয়েছেন ৬৫টি উইকেট। সিকে নাইডু ট্রফিতে সাফল্যের জন্য সিএবির বর্ষসেরা সম্মান পেয়েছেন। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন কীভাবে?
উত্তর: আসলে প্রতিটি দিন এবং প্রতিটি মুহূর্ত আমি নিজের খেলা নিয়ে ভাবি। কীভাবে আরও ভাল বল করা যায়, কোথায় খামতি রয়েছে সে সব জেনে বুঝে নিজেকে আরও পরিণত করার চেষ্টা করি। সেই সঙ্গে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। এই সব কিছু নিয়েই আমি ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করি। যা আগামীতেও করব।
প্রশ্ন: এখন তো নিয়মিত কলকাতায় থাকেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়? অনূর্ধব-২৩ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরে মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল?
উত্তর: মা-দাদা-দিদি সবাইকে নিয়েই আমার সংসার। মায়ের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে কথা হয়। তাঁর আশীর্বাদ সবসময় চাই। মা খুব খুশি হয়েছেন। আরও ভাল করে খেলার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যেই চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: ম্যাকো জাতীয় দলের সুযোগ পেয়েও প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। সেই আফশোস শুধু তুফানগঞ্জ নয়, গোটা কোচবিহারের মানুষের। আপনাকে নিয়ে কোচবিহারের প্রত্যেকটি মানুষ আশাবাদী। আপনি জাতীয় দলে সুযোগ পাবেন এই আশা অনেকের? আপনার লক্ষ্য কি?
উত্তর: শিবশঙ্কর পালের (ম্যাকো) প্রথম একাদশে সুযোগ না পাওয়ার বেদনা আমার মধ্যেও রয়েছে। তাঁকে দেখেই তো আরও এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেয়েছি। এটুকু বলতে পারি স্বপ্ন আমারও আছে, নিজের সবটা উজার করে সেই স্বপ্নের লক্ষ্যেই এগিয়ে যাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy