ভিদিচের গোলের পর উল্লাস ম্যান ইউ শিবিরের।
ম্যান ইউনাইটেড-১ (ভিদিচ)
বায়ার্ন-১ (সোয়াইনস্টাইগার)
ঘরের মাঠে কোনও না কোনও ভাবে বায়ার্নকে আটকে দেওয়ার ছক ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বস ডেভিড মোয়েস যে নেবেন, নিজে একটুআধটু কোচিং করার সুবাদে তা জানতাম। রাত জেগে টিভিতে দেখলাম, ঠিক সেটাই হল। ম্যাচটা একইসঙ্গে আরও একটা সত্য ফের মনে করাল যে, বড় টিম বড় ম্যাচে ঠিক জ্বলে ওঠে। যতই তারা সেই সময় ব্যাকফুটে থাকুক না কেন। সাঁইত্রিশ বছর আগে পেলের কসমসের বিরুদ্ধে আমাদের মোহনবাগানও অনেকটা এ রকমই জ্বলে উঠেছিল!
যদিও এই নয় যে, গত রাতে গোটা ম্যাচ দুর্দান্ত খেলে রুনিরা নাস্তানাবুদ করেছে রবেন-রিবেরিদের। ঘরের মাঠেও ম্যাঞ্চেস্টারের পারফরম্যান্স সাদামাঠা। কিন্তু ওদের কোচ যেটা করতে চেয়েছিলেন সেটায় পুরোপুরি সফল। আসলে মোয়েস জানতেন বায়ার্ন মাঠে প্রচুর কার্যকরী পাস খেলবে। চার-পাঁচ টাচে চাইবে গোলের মুখ খুলে ফেলতে। কিন্তু বিপক্ষকে সেই কৌশল পকেট থেকে বার করতে দেওয়া চলবে না। মোয়েসের স্ট্র্যাটেজি ছিল—চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শেষ আটের প্রথম পর্বটাকে যেনতেন প্রকারে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাও। ফিরতি লড়াইয়ে যা হবে দেখা যাবে। এবং তার জন্য গুয়ার্দিওলাকে ধোঁকা দিতে কসুর করেননি মোয়েস।
সেটা কী রকম? বায়ার্নের ৪-২-৩-১ ছকের পাল্টা ম্যাঞ্চেস্টার দিল ৪-৩-৩। যেন শুরু থেকেই আক্রমণে যাবে মোয়েসের দল। কিন্তু ম্যাচের বয়স মাত্র পাঁচ মিনিট হতেই দেখলাম মোয়েসের ছক কার্যত বদলে হল ৪-৪-২। ভিদিচ, ফার্দিনান্দ, জোন্সদের সামনে বড়সড় চেহারা নিয়ে দাড়াচ্ছিলেন ফেলানি, ভ্যালেন্সিয়ারা। রুনি-ওয়েলবেকও দেখলাম নীচে নেমে এসে রক্ষণে শক্তি বাড়াচ্ছিল। মোয়েসের আসল উদ্দেশ্য ছিল, মিডল থার্ড আর ডিফেন্সিভ থার্ডে ট্র্যাফিক জ্যাম করে দাও। সে ক্ষেত্রে নিজেদের অর্ধে বিপক্ষ আক্রমণের সময় ভিড়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা হবে। বায়ার্ন ফুটবলাররা জায়গা পাবে না।
স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্টস বক্সে হাজির ছিলেন অ্যালেক্স ফার্গুসন। প্রবাদপ্রতিম পূর্বসুরির থেকে বর্তমান ম্যান ইউ বস এই মহাম্যাচের জন্য কিছু টিপস নিয়েছিলেন কী? আমার মনে হয়, না। মোয়েস মঙ্গল-রাতে যদি কারও কোচিং ধ্যানধারণার প্রয়োগ করে থাকেন তাঁর নাম মোরিনহো। সেটা কী? বায়ার্ন নিজেদের অর্ধে যত ইচ্ছে পাস খেলুক। তখন ট্যাকল করার দরকার নেই। কিন্তু ম্যান ইউ অর্ধে ঢুকলেই ট্যাকল করবে ভ্যালেন্সিয়া, ক্যারিক, ফেলানিরা যে যখন পারবে। এবং রক্ষণ সামলে সুযোগ বুঝে কাউন্টার অ্যাটাক। অর্থাৎ, সত্তর শতাংশ রক্ষণের সঙ্গে তিরিশ শতাংশ আক্রমণের মিলিজুলি কৌশল।
অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করে বায়ার্নকে স্বস্তি দিলেন সোয়াইনস্টাইগার।
এই থিওরিতেই ওয়েলবেক প্রথমার্ধে ওয়ান-টু-ওয়ান পেয়ে গিয়েছিল বায়ার্ন গোলকিপার ম্যানুয়েল ন্যয়ারকে। রবেন, রিবেরি বা মুলাররা ম্যান ইউ অর্ধে এক জন, দু’জনকে কাটালেও যেন মাটি ফুঁড়ে সামনে হাজির হয়ে যাচ্ছিল তৃতীয় ম্যান ইউ ফুটবলারটি। এক-এক সময় তো বায়ার্ন ফুটবলার বল ধরলে তার চার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ছিল ম্যান ইউয়ের প্রায় দশ জনই। তবে ভিদিচদের নিখুঁত ট্যাকল, ক্লিয়ারেন্স বার্য়ানের মতো দুর্ধর্ষ ফর্মে থাকা দলের সামনেও বন্ধ করে দিয়েছিল ম্যাঞ্চেস্টার গোলমুখ। এবং তার মধ্যেই প্রতি-আক্রমণে ম্যান ইউয়ের গোল। যদিও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ভিদিচের গোলটা খুব আহামরি লাগেনি আমার।
তবু ট্যাকটিক্সের সুবাদেই ছেষট্টি মিনিট পর্যন্ত এই গ্রহের অন্যতম সেরা টিমের বিরুদ্ধে মোয়েসকেই ব্যান্ডমাস্টার লাগছিল। কিন্তু পরের মিনিটেই ম্যান ইউয়ের গোলমালটা হয়ে গেল সোয়াইনস্টাইগারের দুর্দান্ত গোলটার সময়। ফেলানি দাঁড়িয়ে পড়ল। আর ফার্দিনান্দ জায়গায় পৌঁছতে পারল না। মান্ডজুকিচের কাছ থেকে ওভারহেড বলে একটা সুযোগ পেয়ে সেটাতেই সমতা ফিরিয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করে রাখার সুবাদে পরের ঘরের মাঠের লড়াইয়ে বায়ার্নকে সুবিধায় রাখল সোয়াইনস্টাইগার। বেচারা পুরো সময় মাঠে থাকতে পারেনি রুনিদের প্লে-অ্যাক্টিংয়ের জন্য। রেফারি যদি সোয়াইনস্টাইগারকে মার্চিং অর্ডার দিয়ে বায়ার্নকে শেষের কয়েক মিনিট দশ জন করে দিতে পারেন, তা হলে তারও আগে ম্যান ইউয়ের ভ্যালেন্সিয়াকে কেন একই শাস্তি দিলেন না, তা বুঝলাম না।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ১-১। পরের সপ্তাহে মিউনিখেও এই চালেই কিস্তিমাত করে মোয়েস শেষ চারের টিকিট পকেটে পুরতে পারবেন কি? পারলে অবাক হব! সোয়াইনস্টাইগারের সঙ্গে জাভি মার্টিনেজকেও কার্ড সমস্যায় গুয়ার্দিওলা পাবেন না মানছি। কিন্তু ডিফেন্সে ব্রাজিলিয়ান দাঁতে ফিরবে। ভিদিচ-ফার্দিনান্দ-জোন্সদের রক্ষণ ভাঙতে ঘরের মাঠে শুরু থেকেই মুলারের বদলে মান্ডজুকিচকে দেখলে অবাক হব না।
ছবি: এএফপি।
তিনের গেরোয় বায়ার্ন
ভিদিচের তেরোয় তেরো
মরসুমটা সে রকম ভাল যায়নি। চোট এবং বয়সটাও বড় সমস্যা। কিন্তু বায়ার্নের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতটা ছিল ভিদিচেরই। মোয়েসের ছকটাই ছিল ফাইনাল থার্ডে বায়ার্নকে খেলতে দাও, কিন্তু গোলের সামনে রুখতে হবে। আর এখানেই ভিদিচের সাফল্য। তেরোটার মধ্যে তেরোটাই নিখুঁত ক্লিয়ারেন্স। বিপক্ষের একটা পাস ধরে প্রতি আক্রমণ। শূন্যে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে সফল। তিনটে ট্যাকল করেছেন, দুটো জিতেছেন। ১৭টা পাসের মধ্যে ১৬টাই নিখুঁত। সব মিলিয়ে মোয়েসের স্ট্র্যাটেজির সফল রূপকার।
তিনের জবাবে চার
৭৪ শতাংশ বল পজেশন এবং ম্যাচটা মোটামুটি নিজেদের দখলে রেখেও বায়ার্নের জয় না পাওয়ার পিছনে গোলের মুখ খোলার ব্যর্থতা। পরিসংখ্যান বলছে, ম্যান ইউয়ের চেয়ে ৫০০ পাস বেশি খেলেছে বায়ার্ন। ম্যাঞ্চেস্টারের ৬৮ শতাংশ নিখুঁত পাস, বায়ার্নের ৯১ শতাংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি। ম্যান ইউ মাত্র ২৬ শতাংশ বল পজেশন রেখেও ছ’টার মধ্যে চারটে শট বায়ার্নের গোলে রেখেছে। বায়ার্নের ১৬ শটের মধ্যে নিখুঁত ছিল তিনটে। ক্রস পাস খেলাতেও এগিয়ে ম্যাঞ্চেস্টার (২৬ শতাংশ), বায়ার্ন (১৭ শতাংশ)।
রবেন পাঁচে এক
ম্যাচের আগে ধরা হচ্ছিল, ম্যান ইউয়ের আতঙ্ক হতে পারেন আর্জেন রবেন। বিশেষ করে মোয়েসের লেফট ব্যাক আলেকজান্ডার বাটনার কতটা কী করতে পারবেন, প্রশ্ন ছিল সেখানেও। বাটনার অসাধারণ ছিলেন না। কিন্তু রবেনও ভয়ঙ্কর হতে পারেননি। পাঁচবার ড্রিবল করে এগোনোর চেষ্টা করে রবেন মাত্র একবার সফল। চারটে ক্রসই আটকে যায় বিপক্ষ ডিফেন্সে। গোলমুখী ছ’টা শটের একটা মাত্র তেকাঠিতে। দু’বার রবেনের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন ম্যান ইউ ডিফেন্ডাররা। একবার রবেনই ভুল পাস করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy