হ্যামিল্টন উইকেটে ধোনিদের আত্মসমর্পণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলল। যেখানে ‘বাইশ গজে’ শ্রীনিবাসনদের প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম আইসিসি। অদ্ভুত এক সমীকরণ, যেখানে ভারতের পক্ষে এত দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া। বিপক্ষে এত দিনের বন্ধু পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা। আর তাদের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
হ্যামিল্টনে বুধবার হেরে যাওয়ায় ধোনিরা পয়লা নম্বর থেকে সিংহাসনচ্যুত ঠিকই, কিন্তু বোর্ড বনাম আইসিসি-র লড়াইয়ে শ্রীনিরা যে ভাবে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন, তাতে এ মুহূর্তে অ্যাডভান্টেজ ভারত। যুযুধান দু’পক্ষের অস্ত্র সংবরণ না হলে সঙ্কটে পড়ে যেতে পারে আইসিসি-র অস্তিত্বই। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার কাছে কী কী দাবি জানানো হবে এবং সেই দাবি মানা না হলে ‘প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ কী হবে, তা সমস্তই ঠিক করে ফেলা হল চেন্নাইয়ে এ দিন ক্রিকেট বোর্ডের ফিনান্স কমিটির বৈঠকে। আজ, বৃহস্পতিবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সেগুলোকেই চূড়ান্ত অনুমোদন করে ফেলা হবে। এত তাড়াহুড়ো করার কারণ, এ মাসেরই ২৮-২৯ তারিখ দুবাইয়ে আইসিসি-র এগজিকিউটিভ কমিটির বৈঠক হচ্ছে। সেখানেই হয়তো বিস্ফোরণ হবে।
আইসিসি-র কাছে ভারতীয় বোর্ড চার দফার যে দাবি পেশ করতে চলেছে তা এ রকম:
এক) গত পনেরো বছরের হিসেব ধরলে দেখা যাচ্ছে, আইসিসি-র আয় দিন দিন বাড়ছে। এবং সেটা সম্ভব হচ্ছে ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার জন্যই। মুখ্যত ভারতের জন্য। ২০০০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত যেখানে আইসিসি-র আয়ের পরিমাণ ছিল ৫৫০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা), সেখানে গত কয়েক বছরে অঙ্কটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৫ বিলিয়ন ডলার (ন’হাজার কোটি টাকার উপর)। আইসিসি-র আয় এত বেড়ে গেলেও ভারতীয় বোর্ডের শেয়ার কিছু বাড়েনি। আর পাঁচটা পূর্ণ সদস্য দেশ যা টাকা পায়, ভারতও তাই পায়। আরও পরিষ্কার করে বললে, আইসিসি থেকে জিম্বাবোয়ে-বাংলাদেশ যা টাকা পায়, ভারত-ইংল্যান্ডও তাই পায় মোট আয়ের শতকরা ২৫ শতাংশ। শ্রীনিবাসনদের দাবি, অবিলম্বে ভারতের লভ্যাংশ বাড়াতে হবে।
দুই) আইসিসি প্রেসিডেন্টের সমান্তরাল ভাবে একটা চেয়ারম্যান পদও তৈরি করতে হবে। চেয়ারম্যানের ক্ষমতা থাকবে প্রচুর। প্রায় প্রধানমন্ত্রীর মতো। আর আইসিসি প্রেসিডেন্ট, যে পদে ডালমিয়া বা পওয়াররা ছিলেন, সেটা হয়ে যাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদের মতো। আলঙ্কারিক। শ্রীনিবাসন চাইছেন, প্রথম চেয়ারম্যান পদে তিনিই বসবেন।
তিন) প্রতি তিন বছর অন্তর ভারতে কোনও আইসিসি টুর্নামেন্ট দিতে হবে। সেটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হতে পারে। পঞ্চাশ ওভারের এক দিনের বিশ্বকাপ হতে পারে। আবার টেস্ট ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপও হতে পারে।
চার) ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা দিতে হবে। আইসিসি-র ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম ঠিক করার সময় এই তিন দেশের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এই নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটমহলে তীব্র সঙ্ঘাত বেধেছে। প্রচণ্ড চটে গিয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, এই প্রস্তাব তারা মানবে না।
ভারতীয় বোর্ড তাতে বিন্দুমাত্র নরম নয়। বলেছে, প্রস্তাব না মানলে তারা আইসিসি থেকে বেরিয়ে আসবে। তিন দেশ পেলে গড়বে বিকল্প আইসিসি।
ক্রিকেটমহলে তীব্র চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে ভারত এমন চরমপন্থী অবস্থান নেওয়ায়। ভারতীয় বোর্ড এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট সংস্থা। তারা আরও অর্থের জন্য লোলুপ কেন? ওয়াকিবহাল মহলের খবর, এর পেছনে ক্রিকেটের রেটিং দিন দিন কমা। ভারতীয় দল ইদানীং যে ক’টা স্পনসরশিপ পেয়েছে, সব অতীতের চেয়ে কম টাকার। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সিরিজ স্পনসরশিপ শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কম টাকায় বিক্রি হয়েছে। সচিন তেন্ডুলকর অবসর নেওয়ার পর টেস্ট সিরিজের আকর্ষণ গিয়েছে আরও কমে। অর্থনৈতিক অবস্থা আরও বিপন্ন হতে পারে বিবেচনাতেই শ্রীনিবাসন এই নতুন চাল চেলেছেন। যে আইসিসি থেকে বাড়তি লভ্যাংশ পাওয়া গেলে এই ঘাটতিটা মেরামত করা যাবে। কারণ ঘাটতি হলে অনুমোদিত ক্রিকেট সংস্থাকে দেয় টাকা কমে যাবে। তখন আর নিজের ভোটারদের খুশি রাখা যাবে না। আর কে না জানে, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন স্বপক্ষে ভোট খুব ভালবাসেন!
যে চার দফা দাবি নিয়ে সঙ্ঘাত
১) আইসিসি-র আয় থেকে ভারতকে আরও বেশি ভাগ দিতে হবে।
২) আইসিসি প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের পদ তৈরি করতে হবে।
৩) তিন বছর অন্তর ভারতে কোনও আইসিসি টুর্নামেন্ট দিতে হবে।
৪) ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে অনেক বেশি ক্ষমতা দিতে হবে বাকিদের তুলনায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy