Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

কোচের কেরামতিতে শেষ আটে ফরাসিরা

টিভিতে ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে পড়ে যাচ্ছিল সাতাত্তর সালের কথা। আমি তখন মোহনবাগানে। পেলের কসমস ম্যাচের আগে লিগে ইস্টবেঙ্গলের কাছে দু’গোলে হেরেছিলাম আমরা। কিন্তু পেলেদের বিরুদ্ধে ইডেনে এমন লড়েছিলাম যে, আজও তা ফুটবল-জনতার মুখে মুখে ফেরে। ওই ম্যাচে একাশি মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-২ ড্র করে ফিরি। কসমস ম্যাচের পরেই ছিল শিল্ড ফাইনাল। সামনে সেই ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সে দিন শ্যাম থাপার গোলে আমরা জিতেছিলাম ১-০।

গোলের পরে পোগবা। সোমবার ব্রাসিলিয়ায়। ছবি: এএফপি

গোলের পরে পোগবা। সোমবার ব্রাসিলিয়ায়। ছবি: এএফপি

প্রদীপ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৪
Share: Save:

ফ্রান্স-২ (পোগবা, গ্রিজমান)
নাইজিরিয়া-০

টিভিতে ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে পড়ে যাচ্ছিল সাতাত্তর সালের কথা।

আমি তখন মোহনবাগানে। পেলের কসমস ম্যাচের আগে লিগে ইস্টবেঙ্গলের কাছে দু’গোলে হেরেছিলাম আমরা। কিন্তু পেলেদের বিরুদ্ধে ইডেনে এমন লড়েছিলাম যে, আজও তা ফুটবল-জনতার মুখে মুখে ফেরে। ওই ম্যাচে একাশি মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-২ ড্র করে ফিরি। কসমস ম্যাচের পরেই ছিল শিল্ড ফাইনাল। সামনে সেই ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সে দিন শ্যাম থাপার গোলে আমরা জিতেছিলাম ১-০।

সাতাত্তরে কসমস ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে নামার আগে আমাদের কোচ প্রদীপদা বলেছিলেন, পেলেরা তোমাদের হারাতে পারেনি। আগের হারটা যে অঘটন সেটা বোঝাও। নাইজিরিয়ার কোচ স্টিফেন কেসি-ও কি এ দিন ওবি মিকেল, মুসাদের ড্রেসিংরুমে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন মেসির আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে ২-৩ হারলেও নাইজিরিয়ানদের মরণপণ লড়াইয়ের কথা? হয়তো সে কারণেই সোমবার নাইজিরিয়া ম্যাচটা তেড়েফুঁড়ে শুরু করেছিল।

তবে এই সময়টায় নাইজিরিয়ানদের আক্রমণের সামনে ফ্রান্সও যে কুঁকড়ে ছিল তা কিন্তু নয়। আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণে খেলাটা হচ্ছিল সমান তালে টাচলাইন টু টাচলাইন। ৪-৩-৩ ছকে ফ্রান্স আর ৪-২-৩-১ ছকে নাইজিরিয়া দু’দলের মিডফিল্ডেই ছিল বড় চেহারার বল কাড়ার ফুটবলার। নাইজিরিয়ানদের ওনাজি, ওবি মিকেল। ফরাসিদের কাবায়ে, পোগবা। তাই মিডল করিডরে খেলাটা হয়নি। দু’দলই আক্রমণ শানাচ্ছিল উইং দিয়ে।

নাইজিরিয়ার মুসা এবং মোজেস যেমন ফ্রান্সের দুই সাইড ব্যাক দেবুসি এবং এভ্রার ট্র্যাক-ব্যাকের সময় ভুল ভ্রান্তিগুলো কাজে লাগাচ্ছিল, তেমনই জিরু, ভালবুয়েনা-ও বেঞ্জিমার জন্য বেশ কয়েকটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু দু’দলই পেনিট্রেটিভ জোনে গিয়ে মিস পাস করায় গোল হয়নি প্রথমার্ধে।

ফ্রান্স কোচ দেশঁ নিজে আটানব্বই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক ছিলেন। জানেন, নাইজিরিয়ার মতো একবগ্গা ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলো দ্বিতীয়ার্ধে গতি ধরে রাখতে পারবে না। ঠিক ক্লান্তির শিকার হবে। আর হলও তাই। প্রথম গোলটা দুরন্ত পারফর্ম করা নাইজিরিয়া কিপার এনিয়েমার একটা মিসটাইমিংয়ের ভুলে। আর ইয়োবোর আত্মঘাতী গোলটা হল নাইজিরিয়া রক্ষণের ক্লান্তিতে। এর একটা বড় কারণ দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মাতৌদির সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ে ওনাজির বেরিয়ে যাওয়া। ফলে নাইজিরিয়ার মিডল থার্ড লকগেটের মতো খুলে গিয়েছিল বেঞ্জিমাদের কাছে।

এটাই দেশঁ-র মাস্টারস্ট্রোক। বিপক্ষকে আগে খেলতে দাও। তার পর নিজেদের উইং প্লে-র ঝাঁঝ বাড়িয়ে ভুলের অপেক্ষায় থাকো। যতই ফরাসিরা বেঞ্জিমাকে ‘দ্বিতীয় জিদান’ বলুক, ফ্রান্সের এই দলটার আসল লোক কিন্তু ওদের কোচ দিদিয়ের দেশ।ঁ রিবেরিহীন দলে ওঁর জন্যই এত আক্রমণ-বৈচিত্র। কসিয়েলনিদের রক্ষণের মতো কাবায়েদের মাঝমাঠটাও জমাট। গত বিশ্বকাপে তাই গ্রুপ লিগ থেকেই ছিটকে গেলেও এ বার শেষ আটে পৌঁছে গেল ওই দেশঁর স্ট্র্যাটেজিতেই। তবে দলটা বড্ড বেঞ্জিমা কেন্দ্রিক। প্রতিপক্ষ কোচেদের নোটবুকে আশা করি এটা উঠে গিয়েছে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy