সফল মুখ: সোনাজয়ী অভিনব।
চব্বিশ ঘণ্টা আগে টুইট করেছিলেন, “কাল পঞ্চম ও শেষ কমনওয়েলথ গেমসে নামছি। আশা করি মজা হবে। আসাধারণ এই যাত্রা শুরু হয় পনেরো বছর বয়সে কুয়ালা লামপুরে, জীবনের প্রথম কমনওয়েলথ গেমস দিয়ে। বন্ধুরা আমার জন্য প্রার্থনা করুন, ভাগ্য যেন পাশে থাকে।”
চব্বিশ ঘণ্টা পরে দশ মিটার এয়ার রাইফেলে সোনা জিতে সফল স্বর্ণমৃগয়ার স্পটলাইটে দাঁড়িয়েই কমনওয়েলথ কেরিয়ারে যবনিকা টেনে দিলেন অভিনব বিন্দ্রা!
প্রিয় ইভেন্টে ২০৫.৩ পয়েন্ট-সহ নতুন গেমস রেকর্ড গড়ে সোনা নিশ্চিত করেন একত্রিশ বছরের তারকা। বেজিং অলিম্পিকে এই ইভেন্টেই সোনা জিতে ইতিহাস গড়েছিলেন। জীবনের শেষ কমনওয়েলথ গেমসে নিজের প্রথম ব্যক্তিগত কমনওয়েলথ সোনাটাও তাতেই জিতলেন।
“এই শেষ। পাঁচটা কমনওয়েলথ গেমসে ন’টা পদকে সন্তুষ্ট আমি,” বলেছেন তৃপ্ত বিন্দ্রা। তার পরে যোগ করেছেন, “এই পদকটা অর্জন করতে অনেক খেটেছি। যা চেয়েছিলাম সেটাই হল দেখে ভাল লাগছে।” রিওয় অলিম্পিকের মঞ্চকেও কি বিদায় জানাবেন? জবাবে সহাস্য বিন্দ্রা সাংবাদিকদের পাল্টা দিয়ে বলেন, “একবারে একটা জিনিসই করতে চাই। অলিম্পিক নিয়ে পরে ভাবব। তবে সাংবাদিকতা সহজ পেশা। শ্যুটিং ছাড়ার পর এটাই করব।” আপাতত ক’টা দিন বিশ্রামে কাটিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নিয়ে পড়তে চান।
শুক্রবার অবশ্য ব্যারি বাডন শ্যুটিং সেন্টারে ভারতকে দিনের প্রথম পদকটা দেন এক অখ্যাত ষোড়শী। ১৯৯৮-এ পনেরো বছরের বিন্দ্রা যখন কুয়ালা লামপুর গেমসে নামেন, মালাইকা গোয়েল ছিলেন মাত্র কয়েক মাসের শিশু। সেই মেয়ে এ দিন কমনওয়েলথ অভিষেকেই ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে রুপো জিতলেন। নিজের আদর্শ, বিশ্বের চার নম্বর হিনা সিন্ধুকে পিছনে ফেলে। কোয়ালিফাইংয়ে এক নম্বরে থাকা টুর্নামেন্টের ফেভারিট হিনা ফাইনালে হতাশ করেন সপ্তম হয়ে। তবে দিল্লি গেমসের রুপো জয়ী ব্যর্থ হলেও এই ইভেন্টের রুপো দেশেই ফিরিয়ে আনলেন লুধিয়ানার মালাইকা। ইস্পাত-কঠিন স্নায়ু আর নির্ভুল নিশানায় ১৯৭.১ স্কোর করে রুপো নিশ্চিত করে অবশ্য বললেন, “টাইমিং নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। তাই ফাইনালে দারুণ শুরু করা সত্ত্বেও খুব নার্ভাস ছিলাম। হাত কাঁপছিল। সম্ভবত সে জন্যই সোনাটা এল না।” ১৯৮.৬ পয়েন্ট-সহ সোনা জিতলেন সিঙ্গাপুরের শুন জেই তিও-র।
সফল মুখ: রুপো জিতে মালাইকা
বিন্দ্রার সংগ্রহে এর আগে অলিম্পিকের ব্যক্তিগত সোনা থাকলেও কমনওয়েলথ গেমসের ব্যক্তিগত সোনা ছিল না। শুক্রবারের আগে কমনওয়েলথে তাঁর আটটি পদকের মধ্যে চারটি সোনা ছিল দশ মিটার এয়ার রাইফেল ও পঞ্চাশ মিটার রাইফেল থ্রি পজিশনে গগন নারাংয়ের সঙ্গে জুটিতে। এ দিন কোয়ালিফাইংয়ে ইংল্যান্ডের দুই বন্দুকবাজের থেকে এক পয়েন্টেরও বেশি পিছিয়ে ৬২২.২ নিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। বিন্দ্রার ঠিক পরেই ছিলেন ভারতের রবি কুমার। ফাইনালে অবশ্য প্রথম বারো শট পর্যন্ত লড়াইটা চলে বিন্দ্রা বনাম রবি। তেরো নম্বর শট থেকে বিন্দ্রা এগোতে থাকেন। এবং আর ফিরে তাকাননি। রুপো জয়ী বাংলাদেশের আব্দুল্লা বাকির (২০২.১) থেকে তিন পয়েন্টেরও বেশি তুলে দাপটে জেতেন। রুপোর শ্যুট অফে বাকির সঙ্গে ছিলেন ইংল্যান্ডের ড্যানিয়েল রিভার্স এবং রবি। ভারতীয়কে হারিয়ে ব্রোঞ্জ নেন রিভার্স (১৮২.৪)।
শ্যুটিং রেঞ্জের পাশে দিনের তৃতীয় পদক এল ভারোত্তোলনে। গতকাল সঞ্জিতা চানু এবং বাংলার সুখেন দের জোড়া সোনা-সহ চার পদকের সংখ্যাটা এ দিন বাড়িয়ে পাঁচ করলেন অন্ধ্রপ্রদেশের কুড়ি বছরের সন্তোষী মাতসা। পাঁচ ফুট এক ইঞ্চির ছোট্টখাট্ট মেয়ে ১৮৮ কেজি তুলে ব্রোঞ্জ জিতলেন ৫৩ কিলোগ্রাম বিভাগে। তিনটি সোনা চারটি রুপো ও তিনটি ব্রোঞ্জ জিতে ভারতের পদকের সংখ্যা দাঁড়াল দশ।
এ দিকে, হকিতে ওয়েলসকে ৩-১ হারিয়ে অভিযান শুরু করলেন ভারতের ছেলেরা। গোল করেন রঘুনাথ, রুপিন্দার পাল সিংহ এবং গিরবিন্দর সিংহ চণ্ডী। তবু ওয়েলসের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষের সামনেও প্রথমার্ধে সর্দার সিংহদের ১-১ আটকে যাওয়া নিয়ে ম্যাচের শেষে অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হল ভারতীয় কোচ টেরি ওয়ালশকে। দ্বিতীয়ার্ধে ভারত কিছু কৌশলগত পরিবর্তন করে ম্যাচে ফিরে আসে মনে করিয়ে ওয়ালশ বলেন, “আমরা প্রতি ম্যাচে উন্নতি করতে চাই। সেমিফাইনালে ওঠা প্রথম লক্ষ্য।” কাল ভারতের পরের ম্যাচ আয়োজক দেশ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ভারতের গ্রুপে রয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াও।
ব্যাডমিন্টনের মিক্সড ইভেন্টে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের ৫-০ জয়ে চমক ছিল মেয়েদের ডাবলসে জ্বালা গাট্টার সঙ্গে পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধুর জুটি বেঁধে নামা। টেবল টেনিসেও কোনও ম্যাচ না হেরে এগোলো ভারত। অচান্ত শরৎ কমল, সৌম্যজিৎ ঘোষরা গায়ানাকে হারালেন ৩-০। মেয়েদের বিভাগেও কেনিয়ার বিরুদ্ধে একই ব্যবধানে জেতে ভারত। তবে স্কোয়াশে বিশ্বের চার নম্বর, নিউজিল্যান্ডের জোয়েল কিংয়ের কাছে ১-৩ হেরে মেয়েদের সিঙ্গলস থেকে ছিটকে গেলেন জ্যোৎস্না চিনাপ্পা।
সাঁতারের পুলে প্রথম ভারতীয় হিসাবে ১০০ ব্রেস্টস্ট্রোকে সেমিফাইনালে পৌঁছোন সন্দীপ সেজওয়াল। ৩৪ সাঁতারুর মধ্যে বারো নম্বরে শেষ করেন তিনি। অন্য দিকে, প্রথম দিন জুডো থেকে দু’টি পদক এলেও এ দিন অলিম্পিয়ান গরিমা চৌধুরী-সহ জুডোকারা হতাশ করলেন।
বিন্দ্রার সোনা সত্ত্বেও পদক তালিকায় কানাডার পিছনে পাঁচে নেমে গেল ভারত।
ছবি: এপি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy