সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাষ্ট্রনেত্রী নারীর অনেকেই এ বছর উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের গ্ল্যামারের তলায় আলোকিত দিভা! প্রতীকী ছবি।
শুরুর আগেই শুরু। জন্মদিনের আগেই শুভেচ্ছা আসার সময় এখন।
নারী দিবসের আগেই নারী নারী আহামরি! সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাষ্ট্রনেত্রী নারীর অনেকেই এ বছর উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের গ্ল্যামারের তলায় আলোকিত দিভা! তাঁদের গাড়িতে তুলে দেওয়া হচ্ছে শাড়ি, ট্রফি, আরও অনেক কিছু।
অন্য দিকে, নারীর অবস্থানকে আলোকিত করতে অজস্র কর্মশালা, অভিযান, চায়ের আড্ডায় তর্ক। খুব পেরেছি আমরা! নারীরা সমাজে বড় জায়গায় পৌঁছেছে। নারী বৈজ্ঞানিক। নারী পাইলট। এমনকী, নারী ট্যাক্সিচালক। বাহ!
আরও পড়ুন: মেয়েদের ঋতুস্রাব লুকিয়ে রাখার নয়, লজ্জারও কিছু নেই
কিন্তু মাঠের পাশের বিজলি কি এই নারী স্বাধীনতার আঁচ পেল? চোখের সামনে বিজলিকে শুয়ে থাকতে দেখি। বিজলি বছর কুড়ির এক আদিবাসী মেয়ে। এক জন আদিবাসী পুরুষ ওকে মাঠে ধর্ষণ করেছে। পুরুষের, যে কোনও স্তরের পুরুষের হিংস্রতা প্রকাশের মাধ্যম মেয়েদের শরীর। আমি আমার এক বান্ধবীর প্রেমিককে ঝগড়া করতে গিয়ে বলতে শুনেছিলাম, ‘‘আমার ওপর চিৎকার করছো? আমাকে অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছ? বাড়ি ঢুকে কেউ তোমায় রেপ করতে এলে ফোনটা তো আমাকেই করবে?’’ কি নিশ্চিত সিদ্ধান্ত পুরুষটির, মেয়ের ধর্ষণ শুধু মেয়েদের লজ্জার, অসহায়তার, সর্বনাশের দলিল। আর এই লজ্জা থেকে তাঁকে নাকি মুক্তি দেবে অপর পুরুষ! বলা যায় না, সে কোনও দিন বিছানায় তাঁর আদরিণীকে ধর্ষণ করতে পারে। আর মেয়েটি শিক্ষিত, তাই রাস্তায় নেমে নিজের সঙ্গে ঘরে ঘটে যাওয়া অপমানের কথা বলবে না! ছি! হাজার হোক সে কালের প্রেমিক এ কালের স্বামী! এ তো নিজের ঘরের ব্যাপার, বাইরে কেউ ছড়ায় না। এই মেয়েটি শিক্ষিত, সংসারে টাকা দেয়। নিজেরটা নিজে দেখে নেয়। সে বলে না...
আরও পড়ুন: নারীবাদীর প্রেম কেমন, দেখা বাকি
আর বিজলি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে করতে তাঁর শরীর ভেঙে, কুপিয়ে, খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করল যে বর্বর তাঁর সম্পর্কে নালিশ করে না। বলে, ‘‘ও আমায় সিঁদুর দিয়েছে। আমার স্বামী ওরে আমি শাস্তি দিতে চাই না। ওরে অনেক মেয়ে চায়। ও ভাল থাকুক।’’
কেঁপে উঠি। এ কি নির্লিপ্ততা না কি ভালবাসা!
ফিকে হয়ে যায় নারী দিবস!
আবদুলের হাত ধরে পালিয়ে এসেছিল লতা। লাল-নীল সব স্বপ্নের জন্য। শহর দেখাবে বলে রাতের অন্ধকারে লতাকে রেখে এল এক মাসির বাড়িতে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লতা বিক্রি হয়ে গেল। আবদুল আর লতার মা-বাবার পকেটে এল টাকা।
মনে পড়ে গেল হস্তিনাপুরের এক বধূর কথা।
পদ্মপলাশ চোখ তাঁর। দ্রৌপদী! তাঁর ধর্মনিষ্ঠ স্বামী তাঁকে পাশা খেলায় পণ রাখলেন। সভা ধিক্কার দিল। কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র বললেন, ‘‘কে কে জিতল?’’ কী আনন্দ তাঁর! দুর্যোধন বললেন, ‘‘প্রাতিকামী, দ্রৌপদী দাসীকে সভায় নিয়ে এসো।’’ পঞ্চ স্বামী তাঁর। বীর, পরাক্রমী যোদ্ধা তাঁরা। অথচ, কিছুই করতে পারলেন না! চুল ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলেন দুঃশাসন। সেই মেঘবর্ণা চুল যেখানে ফাল্গুন মুক্ত করেছিল আপনার চঞ্চলতা! সেই ফাল্গুন এত নিষ্ঠুর!
ইতিহাস সামনে এসে দাঁড়ায়। আজও পুরুষের নগ্ন নারীর লোভ। তবুও বাঁচে দুর্গা। গানের মাস্টার বুকে হাত দিলে কামড়ে দেয় তাঁকে। ক্লাসরুমে অধ্যাপক বা অফিসের বস বেশি নম্বর বা প্রমোশনের লোভ দেখালে মিডিয়ায় তার খবর দিয়ে তাঁকে শায়েস্তা করতে পিছ পা হন না।
বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল কমলাকে। কারণ, নিজের বিয়ের দিন বাড়িতে পুলিশ নিয়ে এসেছিল কমলা। সে ষোলো। কেনই বা বিয়ে করবে? বাবা-মা মেয়েকে বার করে দেয়। ভাবে খেতে না পেলে ঠিক বিয়ে করবে। কমলাকে নিজের বাবা আর মা-ই চিনতে পারেননি! কমলা কন্যাশ্রীর সাহায্যে হোমে থেকে নিজে রান্না করে স্কুলে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে জোট হয়ে এক বছরে আশিটা বিয়ে বন্ধ করেছে কমলা— আস্ত একটা দুর্গা যেন!
মলিন ইতিহাসের অন্তর ধুয়ে আলো ছড়াচ্ছে একশো কমলা। আমরা হাজার কমলাকে দেখব বলে স্বপ্ন দেখি।
স্বপ্ন দেখি, মেয়েরা নিজের জন্য লড়বে। ভয় পাবে না। নিজের কথা বলবে। লজ্জা পাবে না।
দিবস পালনের সময় নয় এখন। বরং মেয়েরা বুঝিয়ে দিক তাদের ফেলে এগনো যায় না। তাদের চুপ করে রাখা যায় না। তাদের গুমখুন করা যায় না। তাদের মাটি চাপা দেওয়া আর সম্ভব নয়। আড়মোড়া ভেঙে সে কবরের মধ্যে থেকে উঠে পড়বে। তাদের এক হাতে নন্দন কানন আর এক হাতে আগুন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy