Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Manabi News

মৃত সন্তানের সঙ্গেই দুই সপ্তাহ কাটালেন মা

হালকা গোলাপি রঙের ‘রেফ্রিজারেট বেবি-কট’। ফুল, মোমবাতি, ফ্রিল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। উষ্ণ ভালবাসায় মোড়া। কিন্তু ভিতরটা হাড় হিম করা ঠান্ডা। কনকনে শীতের চাদর জড়িয়ে সেখানেই শুইয়ে রাখা হয়েছিল পুতুল পুতুল মেয়েটাকে।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১২:৩৭
Share: Save:

হালকা গোলাপি রঙের ‘রেফ্রিজারেট বেবি-কট’। ফুল, মোমবাতি, ফ্রিল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। উষ্ণ ভালবাসায় মোড়া। কিন্তু ভিতরটা হাড় হিম করা ঠান্ডা। কনকনে শীতের চাদর জড়িয়ে সেখানেই শুইয়ে রাখা হয়েছিল পুতুল পুতুল মেয়েটাকে। বাবা-মার প্রথম সন্তান সে। অনেক প্রত্যাশা, অনেক ভালবাসায় ভর করে পৃথিবীতে এসেছিল। কিন্তু জন্মের পর চার সপ্তাহের বেশি পৃথিবীর আলো দেখেনি ইভলিন। বাবা-মার ছোঁয়া বুঝতে পারেনি খুব বেশি। তাই মৃত্যুর পরেও তাকে নিজেদের কাছে রেখে দিলেন ইংল্যান্ডের এই বাবা-মা।

ইংল্যান্ডের ইয়র্কের বাসিন্দা আটিলা জ্যাকেজের সঙ্গে শার্লটের বিয়ে হয়েছিল ২০১৫-তে। ২৮ বছরের আটিলা পেশায় ইঞ্জিনিয়র। অন্য দিকে শার্লট পেইন্ট টেকনিশিয়ান। শার্লটের ২১ বছরের জন্মদিনের দিন ২৯ এপ্রিলই সুখবরটা আসে। জানতে পারেন মা হতে চলেছেন তিনি।

শুরু হয় একটু নতুন ভাবে বাঁচা। একটু নতুন করে স্বপ্ন দেখা। কিন্তু ২০ সপ্তাহের স্ক্যান রিপোর্ট দেখে হঠাৎই চারপাশটা নিকষ অন্ধকার। চিকিৎসকরা জানান, ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিক মতো হচ্ছে না। দ্রুত শুরু হয় নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাটাই সত্যি হয়। অ্যামনিওটিক ফ্লুইড টেস্টে ধরা পড়ে বিরল ক্রোমোজোমাল বিকৃতি রয়েছে ইভলিনের দেহে। জানা যায়, এই ধরনের রোগে বাঁচার আশা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু তত দিনে পেরিয়ে গিয়েছে গর্ভপাতের নির্দিষ্ট সময়সীমা। ইভলিনকে জন্ম দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না শার্লট-আটিলার হাতে।

আরও পড়ুন: ক্যানসারকে হারিয়ে ১৭ বার মিসক্যারেজের পর চার সন্তানের মা হলেন ইনি

মানসিক ভাবে যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল তখনই। শারীরিক ভাবে শুরু হয় ১৩ ডিসেম্বর থেকে। ওই দিনই জন্ম হয় ছোট্ট ইভলিনের। অপরিণত মস্তিষ্ক, নাক, ফুসফুস নিয়ে জন্ম থেকেই ভেন্টিলেটরে জায়গা হল ইভলিনের। হাজার যন্ত্রপাতি, পাইপ, সূঁচের আশ্রয়ে কোনও মতে কৃত্রিম ভাবে তাকে বাঁচানোর চেষ্টাও হল। কিন্তু অবস্থার অবনতি হতে থাকে দ্রুত। চিকিৎসকরাও পরামর্শ দেন হাসপাতালে নয়, শেষ সময়টুকু ইভলিনকে নিজেদের কাছেই রাখুক শার্লট-আটিলা।

শার্লট জানান, ‘‘প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। ইভলিনের এই কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না। ফলে এক সপ্তাহ পর সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলাম। চাইনি আমাদের মিষ্টি মেয়েটা ভেন্টিলেশনের কষ্টের মধ্যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাক।’’

আটিলার মতে এটাই ছিল তাঁদের জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্ত। ইভলিনকে একটু ভাল রাখতে শেষ পর্যন্ত শান্ত-সুন্দর একটা হোমে যাওয়া স্থির করেন তাঁরা। তাকে ভেন্টিলেশনের বাইরে নিয়ে আসেন চিকিৎসকরা। এবং সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায় ইভলিন। কিন্তু পরিপূর্ণ ভালবাসায় তাকে আবার ‘বাঁচিয়ে’ তোলেন আটিলা-শার্লট।

শার্লট জানালেন, ‘‘মেয়েটাকে কখনও এত শান্ত, নিশ্চিন্ত দেখিনি। ভেন্টিলেশন থেকে বের করে আনার পর ইভলিনকে দেখে মনে হয়েছিল ও যেন নতুন করে বাঁচল।’’

আরও পড়ুন: ১৩ বছর ধরে ফ্রিজে রাখা জরায়ুর সাহায্যেই দিলেন সন্তানের জন্ম

তবে শুধু কয়েক মুহূর্তের জন্য নয়। ইভলিনকে চির বিদায় দেওয়ার আগে আরও কিছু সুন্দর মুহূর্ত তার সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলেন জ্যাকেজ দম্পতি। ১০ জানুয়ারি হোমে আসে ইভলিন। আড়াই কেজির ছোট্ট দেহটায় তখন প্রাণের কোনও লক্ষণ নেই। কিন্তু কখনও বাবা-মা’র কোলে, কখনও তার জন্য নির্দিষ্ট ‘রেফ্রিজারেটর কট’-এ ছোট্ট ইভলিনকে দেখে সে কথা বুঝবে কার সাধ্যি? সেলফি, গ্রুপফি, ‘কট’-এ চেপে বাগানে বেড়ানো সবটাই হল। ১০ দিন পর অবশেষে হোম থেকে নিজের বাড়িতে এল ইভলিন।

শার্লট বললেন, “বাড়িতে চার দিন ছিল ইভলিন। একটা সম্পূর্ণ পরিবারের মতো দিনগুলো কাটিয়েছি আমরা। ইভলিনকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম যাতে পরে আবার ও এই বাড়িতেই আসতে পারে।”

(ছবি: সংগৃহীত)

অন্য বিষয়গুলি:

York Dead Baby Refrigerated Cot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy