এ বারের মতো পুজো শেষ। বিসর্জনও শুরু হয়ে গিয়েছে শুক্রবার থেকেই। কিন্তু বিজয়ার আবহের মধ্যেই প্রতিবারের মতো এ বারও বিসর্জন ঘিরে দূষণের আশঙ্কা করছেন দুর্গাপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দামোদরের ঘাটে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পুরসভার তরফে চেষ্টা করা হলেও ইস্পাতনগরীর পুকুরগুলিতে সেই রকম কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না।
ইস্পাত নগরীর বিভিন্ন পুকুরে এখনও ভাসছে প্রতিমার কাঠামো, পুজোর উপাচার। এর জেরে দৈনন্দিন কাজ করতেও অসুবিধা হচ্ছে বলে জানান প্রতিমা আঁকুড়ে, বাদল মাজিরা। প্রতিমার রাসায়নিক রঙ জলে মিশে গিয়ে জল দূষণের আশঙ্কা বাড়ছে। আবার কাঠামোগুলি তোলা না হওয়ায় সেগুলির বেশির ভাগই জলে পচতে শুরু করেছে। ইস্পাতনগরীর ভাবা রোডের পাশে একটি পুকুরে গিয়ে দেখা গেল, পুকুরের একটি অংশ থেকে দড়ি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে পুজোর উপাচারগুলি পরিষ্কার করতে সুবিধা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয় নি। আবার মহিষকাপুর রোডের একটি পুকুরে দেখা গেল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিমার কাঠামোগুলি পড়েই রয়েছে। বাসিন্দারা আরও জানান, কাঠামোয় লেগে থাকা পেরেকে অনেকের পা কেটে গিয়ে বিপদ ঘটে। ওইসব পুকুরগুলি অবিলম্বে সাফাই করবার দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, খুব দ্রুত ইস্পাত শহরের পুকুরগুলি পরিস্কার করা হবে।
দামোদরের বীরভানপুর ঘাটেও চলছে প্রতিমা বির্সজন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য দূষণের অভিযোগ অনেকটাই কম। বিগত কয়েক বছর ধরেই দুর্গাপুর পুরসভার তরফে বিসর্জনের জন্য ঘাট নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বিসর্জনের সুবিধার জন্য ঘাটে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে জেনারেটারের ব্যবস্থা। ঘাটের পাশে একটি জায়গা জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। নদীর জলে মিশে গিয়ে যাতে দূষণ না ছড়ায়, সে জন্যই ওই জাল ঘেরা এলাকায় পুজোর যাবতীয় উপাচারগুলি ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলি সাফাই করার জন্য পুরসভার কয়েকজন কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিমা বিসর্জনের করার পর মাটি গলে গেলে কাঠামোটিকে নদী থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে। ওই কাজে যুক্ত কর্মী সুনীল বাউড়ি বলেন, “নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পুরসভার তরফে এই পদক্ষেপগুলি খুবই ইতিবাচক।” স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায় জানান, অন্য বারের তুলনায় এ বছর বিসর্জনের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হয়েছে।
দামোদর ঘাটে পুরসভার তরফে ব্যবস্থা করা হলেও এ দিকে দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জনেও সাবেকিয়ানা ধরে রাখল উখড়া, পাণ্ডবেশ্বরের পারিবারিক পুজোগুলি। রবিবার উখড়ার ধীবর বাড়ির পুজোর ভাসান হয়। এই পুজো এ বছর শতবর্ষে পড়ল। অন্য দিকে, পঞ্জিকা মতে শুক্রবারই দশমী মেনে সে দিন বেশ কয়েকটি বাড়ির পুজোর বিসর্জন হয়।
শুক্রবার উখড়ায় জমিদার পরিবার হান্ডা বাড়ির সঙ্গে ভট্টাচার্য, কর্মকার, দাস ও বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির প্রতিমার বির্সজন হয়। সাবেকি রীতি মেনে শুক্রবারই পাণ্ডবেশ্বরের জমিদার পরিবার চট্টোপাধ্যায়দের সরকারি পুজো (এই নামেই পরিচিত এই পুজো), রায় বাড়ির পুজো-সহ তিনটি পারিবারিক পুজোর ভাসান অনুষ্ঠিত হয়। শনিবারও বেশ কয়েকটি বাড়ির পুজোর ভাসান হয়। রানিগঞ্জের সিহারশোল গ্রামের চট্টোপাধ্যায়, কাঞ্জিলাল-সহ পাঁচটি এবং জামুড়িয়ার নন্ডিগ্রামের ভট্টাচার্য, নায়েক-সহ পাঁচটি পারিবারিক পুজোর বিসর্জন হয় শনিবার।
পাণ্ডবেশ্বরের জমিদারবাড়ির সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ও নন্ডীগ্রামের ভট্টাচার্য বাড়ির হারাধন ভট্টাচার্য জানান, এ বার একটু হলেও প্রথা ভাঙা হয়েছে। অতীতে দশমীর দিনে পুরোহিত দেবীমূর্তির প্রাণ বির্সজন মন্ত্র পড়ার পর সেই রাতেই জলাশয়ে প্রতিমা বির্সজন করতেই হত। কিন্তু এ বার পঞ্জিকা মতে শুক্রবার দশমী হলেও শনিবার বিসর্জন করা হয়েছে।
সোমনাথবাবুর কথায়, “চার দিনের পুজোর আনন্দ তিন দিনে শেষ করে দিতে পরিবারের নতুন প্রজন্মের আপত্তি ছিল। আমরা তাঁদের সেই দাবি মেনে শনিবারেই ভাসান দিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy