বেশির ভাগ ঘাটেরই মুখ ঢেকেছে আবর্জনায়। —ফাইল চিত্র।
গঙ্গার দূষণ রুখতে এ রাজ্যের গঙ্গাতীরের পঞ্চায়েতগুলিতে শৌচাগার তৈরি এবং বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে ‘নির্মল গঙ্গা কর্ম পরিকল্পনা’ থেকে পারিবারিক শৌচালয় নির্মাণের সুবিধা পাবে এপিএল-বিপিএল নির্বিশেষে সব পরিবারই। গঙ্গা প্রবাহিত হয়েছে, রাজ্যের এমন ৭টি জেলার ২২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি পরিবার এর আওতায় আসছে।
গঙ্গাদূষণের এক প্রধান কারণ, গঙ্গাতীরের জনপদের বিপুল পরিমাণ মানব-বর্জ্য গঙ্গার জলে মিশে যাওয়া। সরকারি হিসেবে, প্রতিদিন ২৭০ কোটি লিটার মানব-বর্জ্য গঙ্গার জলে মেলে। নানা জায়গায় বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র বসানো হয়ে থাকলেও, তার ক্ষমতা অতটা নয়। পশ্চিমবঙ্গে খোলা মাঠে শৌচের কাজ করেন রাজ্যের সাড়ে তিন কোটি মানুষ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষ। এঁদের অধিকাংশই বাস করেন গ্রামীণ এলাকায়, বলছে ২০১১ সালের গৃহস্থালী জনগণনা।
সম্প্রতি ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার অধীনে গঙ্গার তীরবর্তী এলাকাগুলিতে শৌচাগার নির্মাণ, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ, নিকাশির সুষ্ঠু ব্যবস্থা প্রভৃতি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ রাজ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে ‘নির্মল গঙ্গা কর্ম পরিকল্পনা’- অধীনে এর কাজ হচ্ছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের (এনআরইজিএ) রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “এই পরিকল্পনার অধীনে পঞ্চায়েত এলাকার শৌচালয় না-থাকা পরিবারগুলিতে প্রায় বিনা খরচে শৌচালয় তৈরি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়াও ওই পঞ্চায়েত এলাকার স্কুল, মধ্যশিক্ষা কেন্দ্র, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও পুরোপুরি সরকারি খরচে শৌচালয় করে দেওয়া হবে।” তিনি জানান, প্রতিটি শৌচালয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা খরচ করবে সরকার, ৯০০ টাকা দিতে হবে উপভোক্তাকে। একশো দিনের কাজের প্রকল্প এবং নির্মল ভারত অভিযান প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে টাকা দেবে সরকার।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন দফতরের যুগ্ম সচিব সোনালী দত্তরায় জানান, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগের ‘নির্মল গঙ্গা কর্ম পরিকল্পনা’ ২০১৫ সালে ৩১ মার্চের মধ্যে রূপায়ণ করতে হবে। এই লক্ষ্যে ৮০ জন পড়ুয়া পিছু একটি শৌচালয় নির্মাণ করা হবে। ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথক শৌচালয় হবে। অঙ্গনওয়াড়ি ও শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ‘বেবি ফ্রেন্ডলি’ শৌচালয় গড়া হবে। এ ছাড়াও হাটে, গঞ্জে ও জনবহুল এলাকায় ‘গণ শৌচালয়’ গড়া হবে।
জেলার বিভিন্ন আধিকারিকদের এই প্রকল্পের বিষয়ে জানাতে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন দিব্যেন্দুবাবু ও সোনালীদেবী। গত সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাকক্ষে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার প্রশাসনিক কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন তাঁরা। বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়ার প্রশাসনিক কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আগেই বৈঠক হয়েছে কলকাতায়।
বৈঠকে জানানো হয়, গঙ্গা দূষণ রুখতে কেবল শৌচালয় নির্মাণই নয়, গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিটি গ্রাম সংসদে নির্দিষ্ট এলাকায় আবর্জনা ফেলার জায়গা তৈরি করা হবে। ময়লা ফেলার গাড়িতে করে গোটা গ্রামের আর্বজনা সংগ্রহ করে সেই নির্দিষ্ট জায়গায় আবর্জনা ফেলা হবে। ওই আর্বজনা থেকে জৈব সার তৈরি করার পর বস্তাবন্দি করে বাজারজাত করা হবে। সেই সব কাজে নিয়োগ করা হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের। প্রতি ৫০০ পরিবার-অধ্যুষিত এলাকায় আর্বজনা ফেলা ও সেই আর্বজনা থেকে জৈব সার তৈরি করার জন্য ২০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের সংস্থানও রয়েছে। এ ছাড়াও গ্রামের সব নলকূপের চাতাল ও বাসন মাজার জায়গা কংক্রিটের ঢালাই করা ও নিকাশি নালা নির্মাণ করে গঙ্গায় বর্জ্য যাওয়া আটকানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় বৈঠকে।
মাঠে-ঘাটে শৌচকার্য করার যুগ-যুগান্তের অভ্যাস কী ভাবে পাল্টানো যায় সেই নিদানও দেওয়া হয়েছে সরকারি বৈঠক থেকে। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, “গৃহস্থের বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে মানুষের অভ্যাসে বদল আনার জন্য সোমবারে বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিশনার ও রাজ্যের যুগ্ম সচিব নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েতের সদস্য ও সরকারি কর্মীদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy