গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
ঠিক ৪০ দিনের দীর্ঘ যাত্রা শেষে বুধবার চাঁদে নামল চন্দ্রযান-৩। অবতরণ করল চাঁদের কঠিনতম অংশে। যে অংশে আমেরিকার মতো দেশের মহাকাশ গবেষকেরা চন্দ্রযান নামানোর ঝুঁকি নেননি। চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। খোদ ভারতই বিফল হয়েছে চার বছর আগে। তবু হাল ছাড়েনি ইসরো। চাঁদের আঁধারে ঘেরা ‘কুমেরু’তেই দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় লক্ষ্যভেদ করেছে। কিন্তু কিসের টানে? কেন বিপদে মোড়া চাঁদের এই দক্ষিণ মেরুতে এল ইসরো? কী আছে চাঁদের এই অংশে?
চন্দ্র অভিযানে ভারত নিতান্তই নবীন। ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ পাড়ি দিয়েছিল চাঁদে। তবে সেই অভিযানে চাঁদে অবতরণ করার কথা ছিল না। সেই চেষ্টা করেছিল চন্দ্রযান-২। আর প্রথমেই বেছে নিয়েছিল চাঁদের কঠিনতম এলাকাকে। ব্যর্থ হলেও সেই লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি ইসরো। দ্বিতীয় বারের চেষ্টাতেও অবতরণের একই স্থান নির্বাচন কর হয়েছে। যদিও আমেরিকা, রাশিয়ার মতো অভিজ্ঞ পূর্বসূরিরা আগে সেই ঝুঁকি নেয়নি। চাঁদের নিরক্ষরেখার আশপাশে সহজ জায়গায় ল্যান্ডার নামিয়েছিল তারা। অথচ চাঁদে অভিযাত্রী নামিয়েছে আমেরিকা। রাশিয়ার ল্যান্ডার চাঁদের মাটি সংগ্রহ করে ফিরে এসেছে দেশে। এরা কেন ভারতের আগে চেষ্টা করেনি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার?
কেন কুমেরু কঠিন ঠাঁই?
১। অন্ধকার: চাঁদের এই চত্বরে সর্বত্র পৌঁছয় না সূর্যের আলো। যেটুকু পৌঁছয়, তা কিছুটা তেরছা ভাবে। আলোর থেকে ছায়াই পড়ে বেশি।
২। অতিশীতল: সূর্যের আলো না পড়ায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের অনেক নীচে। মাইনাস ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নামতে পারে তাপমাত্রা।
৩। দুর্গম: গিরি এবং খাদ দুই আছে এই দক্ষিণ মেরুতে। চাঁদের অন্যান্য অংশের থেকে একটু বেশিই তার সংখ্যা। পদে পদে রয়েছে কয়েক হাজার কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি ব্যাসের গভীরতম খাদ। যেখানে আজ পর্যন্ত পৌঁছয়নি সূর্যের আলো। আবার আছে উঁচু পাহাড়ও। সূর্যের তেরছা আলো সেই পাহাড়ের মাথায় পড়ে দীর্ঘ ছায়া তৈরি করে চাঁদের মাটিতে। আছে ছোট-বড় কূপের মতো গর্ত। পাহাড়ে ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকে তারা।
কী এমন আছে দক্ষিণ মেরুতে?
১। আগামী দিনে পৃথিবীর বাইরে যদি কখনও মানুষের থাকার জায়গা তৈরি হয়, তবে সবার আগে দরকার হবে জল। তাই পৃথিবীর বাইরে এই একটি বস্তুই হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সেই জলের সন্ধান মিলতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
২। ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার চাঁদে হাইড্রক্সিল এবং জলের উপস্থিতির সন্ধান দিয়েছে।
৩। পরে বিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা করে দেখেছেন, চাঁদের এই সমস্ত এলাকায় অজস্র খাদের গভীরে যে হেতু কখনও সূর্যের আলো প্রবেশ করেনি, তাই সেখানে থাকতে পারে জলীয় বরফ। সেই বরফেরই সন্ধান করবে ভারতের চন্দ্রযান-৩।
৪। চাঁদের এই দক্ষিণ মেরুতে যে কূপের মতো গর্ত রয়েছে, তা থেকে আরও তথ্য পাওয়ার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের আগ্নেয়গিরি এমনকি, প্রাচীন সমুদ্রের উৎসেরও সন্ধান করবে তারা।
৫। চাঁদের এই এলাকায় চাঁদের অভিযাত্রী যান ‘প্রজ্ঞান’-এর ঘুরে বেড়ানোও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ মেরুর এই আঁধারে মোড়া এলাকায় প্রায়ই উল্কাপাত হয়। যখন-তখন ছিটকে আসে গ্রহাণুও। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চন্দ্রযান-৩কে বাঁচিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জও তো কম নয়।
বিজ্ঞানীরা কী বলছেন?
ইসরোরই প্রাক্তন অধিকর্তা সুরেশ নায়ক সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘ইসরো বরাবরই প্রত্যেক মহাকাশ অভিযানে নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। নতুন চ্যালেঞ্জ ছোঁয়ার চেষ্টা করে। চন্দ্রযান-২-এর সময়েও সেই চেষ্টা করেছিল ইসরো। প্রথম বার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় চ্যালেঞ্জ ছুঁয়ে দেখাল তারা। এ বার শুধু দেখার চাঁদের অভিযাত্রীযান প্রজ্ঞান, ওই আঁধারে মোড়া ‘কুমেরু’ থেকে কোন আলো উদ্ধার করে আনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy