চন্দ্রচূড় চক্রবর্তী।
একেই বলে গর্বের বেলুনে পিনের ফুটো!
ব্ল্যাক হোলের থেকে আলো নির্গত হয় না, তাই ব্ল্যাক হোলের ফটোও তোলা যায় না, এই মিথ বিজ্ঞানীরা ভেঙে দিয়েছিলেন ২০১৯ সালে। ছবি তুলেছিলেন এম৮৭ নামে এক গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ঘাপটি মেরে বসে থাকা এক ব্ল্যাক হোলের। ছবি তুলেছিল ইভেন্ট হরাইজ়ন টেলিস্কোপ (ইএইচটি), যা আসলে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক মানমন্দিরের সমাহার। ইএইচটি-র তোলা সেই ফটো জ্যোতির্বিজ্ঞানে এক যুগান্ত হিসেবে সূচিত হয়েছিল। ব্ল্যাক হোলের ফটো বলে কথা!
এখন একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলছেন, সেই ছবি নাকি ব্ল্যাক হোলের একপ্রকার রকমফেরের হতে পারে! সাধারণ ভাবে ব্ল্যাক হোল বলতে যা বোঝায়, তার ছবি নাকি ওটা নয়! আর, ওই বিজ্ঞানী দলের নেতৃত্বে আছেন এক জন বাঙালি— বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি)-র তরুণ গবেষক চন্দ্রচূড় চক্রবর্তী। চিনের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল অবজ়ারভেটরিজ়-এর দুই বিজ্ঞানী মাসাওমে খাসেমি-লোদেহি এবং ইউজুন লু এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে কাভলি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর কুইংজুয়ান উ-র লেখা এক পেপার সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য ইউরোপিয়ান ফিজিক্স জার্নাল’-এ। প্রবন্ধের শিরোনাম ‘ইনভেস্টিগেটিং দ্য এগজিসটেন্স অব গ্রাভিটোম্যাগনেটিক মোনোপোল ইন এম৮৭*’। এম৮৭* হল এম৮৭ গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থিত ব্ল্যাক হোল।
ব্ল্যাক হোল নক্ষত্রের প্রেত দশা। যে কোনও নক্ষত্রে চলে দুই বিপরীতমুখী ক্রিয়া। নক্ষত্রের অগ্নিকুণ্ড, যা লুচির মত ফোলাতে চায় তাকে। আর বিশাল পরিমাণ পদার্থের প্রচণ্ড গ্রাভিটি, যা সঙ্কুচিত করতে চায় তাকে। জীবনশেষে আগুন স্তব্ধ, তখন শুধু গ্রাভিটির চাপ। নক্ষত্র ভারী হলে, তখন তা পরিণত হয় ব্ল্যাক হোলে। চাপে নিষ্পেষিত একটি শাঁস, তার বাইরে বিস্তৃত একটা অদৃশ্য বলয়, যার মধ্যে কোনও কিছু— এমনকি আলোও— বাইরে বেরোতে পারে না। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ওই বলয়ের নাম ইভেন্ট হরাইজ়ন। এই হল ব্ল্যাক হোলের সাধারণ পরিচয়। আর যদি শাঁস ঘিরে বলয় বা ইভেন্ট হরাইজ়ন না থাকে? তখন শাঁস উলঙ্গ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় নাম নেকেড সিংগুলারিটি।
‘দ্য ইউরোপিয়ান ফিজিক্স জার্নাল’-এ প্রকাশিত পেপারে চন্দ্রচূড়, মাসাওমে, ইউজুন এবং কুইংজুয়ান দেখিয়েছেন, এম৮৭* আসলে এক নেকেড সিংগুলারিটি। সাধারণ অর্থে যাকে ব্ল্যাক হোল বলা হয়, তা ওটা নয়। এম৮৭*-এর ইভেন্ট হরাইজ়ন নেই।
আরও দাবি ওঁদের। ওঁরা বলেছেন, এম৮৭* ম্যাগনেটিক মোনোপোল দিয়ে গড়া। সাধারণ চুম্বকের থাকে দুই মেরু— উত্তর ও দক্ষিণ। কোনও চুম্বককে ভেঙে দু’টুকরো করলেও যে দু’টো চুম্বক পাওয়া যায়, তাতে প্রত্যেকটার দু’টো করে মেরুই থাকে। নোবেলজয়ী পদার্থবিদ পল অ্যাড্রিয়েন মরিস ডিরাক কল্পনা করেছিলেন এমন চুম্বকের, যার একটাই মেরু থাকবে। অবশ্য এখনও তেমন চুম্বক বাস্তবে মেলেনি। চন্দ্রচূড়রা দাবি করেছেন, এম৮৭* মোনোপোলের আখড়া।
আইআইএসসি-র বিজ্ঞানী চন্দ্রচূড় ফোনে বললেন, ইএইচটি-র বিজ্ঞানীরা এম৮৭* নেকেড সিংগুলারিটি হওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছিলেন। আমরা দেখিয়েছি, এম৮৭* এক নেকেড সিংগুলারিটিই। এম৮৭* নেকেড সিংগুলারিটি হলেও ওরকম ছবিই আসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy