Advertisement
E-Paper

Giant Cavity in Milky Way Galaxy: পৃথিবীর নাগালেই মিলল এক দৈত্যাকার নেই রাজ্যের হদিশ! কী রয়েছে সেখানে

আপাদমস্তক রহস্যময় নেই রাজ্য সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।

মিলল নেই রাজ্যের হদিশ।

মিলল নেই রাজ্যের হদিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:১৬
Share
Save

এক অবাক করা ‘নেই রাজ্য’! আপাদমস্তক রহস্যময়। যেখানে জমাট বাঁধা নৈঃশব্দ্য ছাড়া আর কিছুই নেই। নেই বিন্দুমাত্র আলো। নেই একচিলতে কণাও।

তাই কণাদের মধ্যে কোনও ধাক্কাধাক্কিও হয় না সেখানে। খাঁ খাঁ করা ব্রহ্মাণ্ডের সেই মুলুকে তাই নেই কোনও নৈরাজ্যও! ১ কোটি বছর বা তারও বেশি সময় ধরে!

পৃথিবীর কাছেই সেই নেই রাজ্য-র মুলুক

কোটি কোটি মণিমাণিক্য, সোনা, প্ল্যাটিনামের মতো দুর্লভ, দুর্মূল্য পদার্থ প্রায় যত্রতত্রই ছড়িয়ে রয়েছে যেখানে, সেই ব্রহ্মাণ্ডেই মিলেছে এমন এক ‘নেই রাজ্য’-র হদিশ।

খুব দূরে নয়। ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ঠিকানা মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথেই। পৃথিবী থেকে মাত্র ৭০০ আলোকবর্ষ (আলোর গতিবেগে ছুটলে এক বছরে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করা যায়) দূরে।

সেই নেই রাজ্যের ত্রিমাত্রিক ছবি। সৌজন্যে- 'অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স'।

সেই নেই রাজ্যের ত্রিমাত্রিক ছবি। সৌজন্যে- 'অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স'।

‘কিছুই নেই’ মুলুক খুঁজে পেলেন হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা

কোন নিয়মে চলে ব্রহ্মাণ্ডের সেই নেই রাজ্য, বিজ্ঞানীদের জানা নেই। তাই সেই মুলুকের নিয়ম ভাঙার নৈরাজ্যও ধরা পড়েনি তাঁদের চোখে।

আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজরেই প্রথম ধরা পড়েছে ব্রহ্মাণ্ডের সেই রহস্যে মোড়া নেই রাজ্যের মুলুক। যার ব্যাসও মোটেই কম নয়। অন্তত ৫০০ আলোকবর্ষ। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-

ঠিক কোথায় রয়েছে সেই নেই রাজ্য?

অন্যতম গবেষক হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের তাত্ত্বিক জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী স্মুয়েল বায়ালি বলেছেন, “টরাস ও পারসিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জ দু’টির জৈব অণুর খুব জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘের কুণ্ডলীর মাঝখানে রয়েছে সেই নেই রাজ্যের মুলুক। আমরা সেই এলাকার ত্রিমাত্রিক ছবি পেয়েছি ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)’-র মহাকাশে থাকা অবজারভেটরি ‘গাইয়া’-র পাঠানো তথ্য থেকে। এই অবাক করা মুলুকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পার-টাউ শেল’। একেবারে নিখাদ একটি গোলকের মতো এলাকা। দৈত্যাকার। যার ব্যাস ৫০০ আলোকবর্ষ। বলা যেতে পারে দৈত্যাকার একটি বুদবুদ।”

মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির যে মুলুকে রয়েছে সেই নেই রাজ্য। ছবি সৌজন্যে- অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স।

মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির যে মুলুকে রয়েছে সেই নেই রাজ্য। ছবি সৌজন্যে- অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স।

বায়ালি এও জানিয়েছেন, সেই দৈত্যাকার নেই রাজ্যের পরিধির বাইরে থাকা টরাস ও পারসিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জের বিভিন্ন জৈব অণুর জমাট বাঁধা অত্যন্ত ঘন গ্যাসের মেঘের কুণ্ডলীর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য তারা। তৈরিও হচ্ছে অগণ্য নক্ষত্র। কিন্তু সেই নেই রাজ্যে কিছুই নেই বলে সেখানে শুধুই শ্মশানের নিঃস্তব্ধতা। ঘুটঘুটে অন্ধকার আর নৈঃশব্দ্য নিয়েই টিকে রয়েছে সেই নেই রাজ্য। ১ কোটি বছর বা তারও অনেক বেশি সময় ধরে।

কী ভাবে তৈরি হল সেই নেই রাজ্য?

গবেষকরা জানিয়েছেন, কোনও সুবিশাল নক্ষত্রের মৃত্যুর সময় যে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ (সুপারনোভা) হয় তার থেকে তৈরি হতে পারে এই নেই রাজ্য- পার-টাউ শেল। সেই বিস্ফোরণটি হয়েছিল হয়তো এই নেই রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে। ১ কোটি বছর বা তারও অনেক আগে। তার ফলে যে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়েছিল সেই চাপই ঠেলে ঘন গ্যাসের মেঘের কুণ্ডলীকে নেই রাজ্যের ত্রিসীমানার বাইরে বার করে দিয়েছিল। সেই মেঘের কুণ্ডলী থেকে পরে জন্ম হয়েছিল টরাস ও পারসিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জ। মাঝখানে থেকে গিয়েছিল এই নেই রাজ্য। আবার এও হতে পারে, কোনও একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সুপারনোভা না হয়ে পরপর অনেকগুলি সুপারনোভা হয়েছিল অনেকগুলি তারার মৃত্যুর সময়।

এতদিন কেন ধরা দেয়নি এই নেই রাজ্যের মুলুক?

তার কারণও জানিয়েছেন গবেষকরা। হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্যাথরিন ঝুকার বলেছেন, “টরাস ও পারসিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জের জৈব অণুর ঘন গ্যাসের মেঘকুণ্ডলীর হদিশ মিলেছিল কয়েক দশক আগেই। কিন্তু এত দিন আমরা সেই মেঘকুণ্ডলীর সঠিক আকার-আকৃতি, তার গভীরতা, সেগুলি কতটা পুরু তা জানতে পারিনি আমাদের হাতে সেগুলির ত্রিমাত্রিক ছবি ছিল না বলে। সেই গ্যাসের মেঘের কুণ্ডলীগুলি কতটা দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে তা-ও আমরা এত দিন জানতে পারিনি। মহাকাশে থাকা এসা-র গাইয়া অবজারভেটরি আমাদের সেই ত্রিমাত্রিক ছবি হাতে তুলে দিয়েছে। তার ফলেই মিলল এই নেই রাজ্যের হদিশ।”

১ কোটি বছরের নেই রাজ্য! অভিনবত্ব এটাই: অধ্যাপক সন্দীপ চক্রবর্তী

কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)’-র অধিকর্তা জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, “১৫৮২ সালে টাইকো ব্রাহে প্রথম যে সুপারনোভাটির হদিশ পেয়েছিলেন সেটি হয়েছিল এমনই একটি দৈত্যাকার নেই রাজ্য থেকেই। অথচ, এই সদ্য আবিষ্কৃত নেই রাজ্যে ১ কোটি বছর বা তারও বেশি সময় ধরে তেমন কোনও সুপারনোভা হয়নি। এটাই অভিনবত্ব। দ্বিতীয়ত, এই নেই রাজ্যটি রয়েছে পৃথিবীর অনেক কাছে। মাত্র ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে। টাইকো ব্রাহের দেখা সুপারনোভাটি যে নেই রাজ্যে তৈরি হয়েছিল সেটি ছিল পৃথিবী থেকে প্রায় ৮ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।”

সন্দীপ এও জানিয়েছেন, এই নেই রাজ্যে যদি সুদূর ভবিষ্যতে কোনও সুপারনোভা হয়, তা হলে আশা করা যায় তা টাইকো ব্রাহের দেখা সুপারনোভার মতোই উজ্জ্বল হবে। কারণ, সেই সুপারনোভার ফলে ছিটকে বেরিয়ে আসা কণা ও আলোকে কোনও বাধার মুখে পড়তে হবে না। নেই রাজ্যে আর কোনও কণা নেই বলে।

Milky Way Galaxy

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}