Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Breast Cancer

Breast Cancer: সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ট্রিপ্‌ল নেগেটিভ স্তন ক্যানসারও সারবে এ বার পুরোপুরি, পথ দেখাল গবেষণা

ট্রিপ্‌ল নেগেটিভ স্তন ক্যানসার এমন ভাবে সারানো সম্ভব যাতে প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলিকে আর ধোঁকা দিতে পারবে না টিউমার কোষগুলি।

ট্রিপ্‌ল নেগেটিভ স্তন ক্যানসারও এ বার সারানো যাবে। -প্রতীকী ছবি।

ট্রিপ্‌ল নেগেটিভ স্তন ক্যানসারও এ বার সারানো যাবে। -প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২২ ১২:৪১
Share: Save:

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্তন ক্যানসারও কি এ বার পুরোপুরি সারানো সম্ভব হবে? নিখুঁত ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে?

সেই সম্ভাবনাই জোরালো হল সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। যা দেখাল, ট্রিপ্‌ল নেগেটিভ স্তন ক্যানসার এমন ভাবে সারানো সম্ভব যাতে মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলিকে আর ধোঁকা দিতে পারবে না টিউমার কোষগুলি। প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলির কড়া নজর তারা আর এড়িয়ে যেতে পারবে না। ফলে, টিউমার কোষগুলিকে বেঁধে ফেলে নিকেশ করার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলির পক্ষে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষকদলের সহযোগিতায় গবেষণাটি চালিয়েছেন স্পেনের ‘আইএমআইএম হসপিটাল দেল মার মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর বিশেষজ্ঞ ক্যানসার চিকিৎসকরা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্যানসার চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার ক্যানসার’-এ। বৃহস্পতিবার।

স্তন ক্যানসার কতটা ভয়াবহ?

হার্ট অ্যাটাকের পরেই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মহিলার মৃত্যু হয় যে অসুখে, তা হল স্তন ক্যানসার। মহিলাদের মোটামুটি যে ৯ ধরনের ক্যানসারে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তার মধ্যে একেবারে শীর্ষে রয়েছে স্তন ক্যানসার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’)-র পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত বছর অতিমারির সময় বিশ্বে ২৩ লক্ষ মহিলা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যাও তার কাছাকাছি। বিশ্বে অন্যান্য ক্যানসারে মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার হার যেখানে ১.৬ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে, সেখানে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার গড়ে ৩০ শতাংশ। সাড়ে ৮ গুণেরও বেশি! ‘হু’-র পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, সবক’টি মহাদেশেই মহিলাদের মৃত্যুর সবচেয়ে গুরুতর কারণ যে সব রোগ, তার তালিকায় প্রথম তিনটি প্রাণঘাতী অসুখের একটি— স্তন ক্যানসার। ক্যানসারের টার্গেটেড বা প্রিসিশন থেরাপি ও কেমোথেরাপির যথেষ্ট উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও।

হু জানাচ্ছে, ভারতে প্রতি ১০ মিনিটে ১ জন মহিলার মৃত্যু হয় স্তন ক্যানসারে। আর প্রতি ৪ মিনিটে ১ জন মহিলা স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা করান। ২০১৮ সালে ভারতে বিভিন্ন ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের ২৭ শতাংশই ছিলেন স্তন ক্যানসারের রোগী। বাকি ৭/৮ রকমের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৫.২ শতাংশ মহিলা। এর মধ্যে রয়েছেন সব বয়সের মহিলাই। কলকাতায় যে ১০ রকমের ক্যানসারে মহিলাদের আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তার ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ স্তন ক্যানসারের রোগী।

স্তন ক্যানসার কত রকমের?

স্তন ক্যানসার মূলত ৪ ধরনের হয়। এক, ‘এস্ট্রোজেন রিসেপ্টর পজিটিভ (ইআর প্লাস)’ স্তন ক্যানসার। এ ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহে ক্যানসার কোষগুলির বাড়বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এস্ট্রোজেন হরমোন (প্রোটিন)। বিভিন্ন হরমোন থেরাপির মাধ্যমে এই ক্যানসার নিরাময় সম্ভব। দুই, ‘প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টর পজিটিভ' (পিআর প্লাস) স্তন ক্যানসার। এ ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহে ক্যানসার কোষগুলির বাড়বৃদ্ধিতে সাহায্য করে প্রোজেস্টেরন হরমোন। হরমোন থেরাপি করে এই ক্যানসারও সারানো যায়। তিন, ‘হিউম্যান এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর' (এইচইআর টু প্লাস) স্তন ক্যানসার। এই ক্যানসারের ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহে এইচইআর টু প্লাস প্রোটিন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর অ্যান্টিবডির মাধ্যমে এই ক্যানসারও সারানো যায়। চার, ট্রিপল নেগেটিভ স্তন ক্যানসার। প্রথম তিন ধরনের স্তন ক্যানসারই হয় তিনটি প্রোটিনের জন্য। এই সব ধরনের ক্যানসার সারিয়ে তোলা সম্ভব চিকিৎসায়। কিন্তু ট্রিপল নেগেটিভ স্তন ক্যানসারের রোগীর দেহে ওই তিনটি প্রোটিন থাকে না। তাই এর চিকিৎসা এক রকম অসম্ভবই। এই ক্যানসারই সবচেয়ে ভয়াবহ। রোগীকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করে স্তন বাদ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। তার পরেও রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে দীর্ঘ দিন ধরে কেমোথেরাপি চালিয়ে যেতে হয়। যার নানা রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। বহু ক্ষেত্রে সেই সব পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ারই শিকার হতে হয় রোগীদের।

গত বছরের একটি গবেষণা জানিয়েছে, ভারতে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলাদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই ট্রিপল নেগেটিভ স্তন ক্যানসারের শিকার। মানবদেহে কিছু জিন রয়েছে যাদের সক্রিয়তাই ক্যানসার কোষের বাড়-বৃদ্ধিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এদের নাম ‘অঙ্কোজিন’। আবার এমনও কয়েকটি জিন রয়েছে যেগুলি ক্যানসার কোষগুলির বাড়বৃদ্ধি রুখে দেয়। তাদের নাম ‘টিউমার সাপ্রেসর’।

ইমিউনোথেরাপি, সাফল্যের হার

ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির পর এখন যে পদ্ধতির বহুল ব্যবহার বিশ্বজুড়ে চলছে তার নাম— ইমিউনোথেরাপি। যেখানে ক্যানসার রোগীকে আর দীর্ঘ দিন ধরে কোনও বা কতগুলি ওষুধ দিয়ে যেতে হয় না। পরিবর্তে রোগীকে এমন কয়েকটি ওষুধ এক বার কি দু’বার দেওয়া হয়, যাতে তাঁর দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই টিউমার কোষগুলিকে চিনে ফেলতে পারে (ইমিউনোথেরাপি)। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে তাদের নিকেশ করতে পারে। কেমোথেরাপির চেয়ে এই ইমিউনোথেরাপি যে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, তা ওষুধ-নির্ভর হওয়ার পরিবর্তে প্রতিরোধ ব্যবস্থা-নির্ভর বলেই।

তবে সেই ইমিউনোথেরাপি-র সাফল্যের হারও বেশ কম। এই পদ্ধতিতেও পাঁচ থেকে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ট্রিপ্‌ল নেগেটিভ স্তন ক্যানসারের রোগীকে ইমিউনোথেরাপি করিয়েও সারিয়ে তোলা যায় না। রোগীর দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিউমার কোষগুলিকে চিনতে পারে না বলে। টিউমার কোষগুলির উপরে থাকা অ্যান্টিজেনগুলিকে দেখতে পায় না বলে। তার ফলে, টিউমার কোষকে আক্রমণ করতে গিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলি রোগীর দেহের সুস্থ, সবল কোষগুলিকেই আক্রমণ করে। তাতে সেগুলি মরে যায়। হিতে বিপরীত হয় রোগীর।

গবেষকদের কৃতিত্ব

এই গবেষণার কৃতিত্ব, প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলির সেই ভুল এ বার ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে সঠিক শত্রুকে চিনতে পারবে প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলি। ফলে, তাদের লক্ষ্যও নির্ভুল হবে। শত্রু নিকেশ হবে অব্যর্থ ভাবে। রোগীর দেহের যে জিনটি ততটা সক্রিয় নয় বলে টিউমার কোষগুলি ধোঁকা দিতে পারে প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষগুলিকে, সেই জিনটিকে বিশেষ ভাবে সক্রিয় করে তুলে গবেষকরা ১০০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছেন এই পদ্ধতিতে।

সেই জিনটির আরএনএ-কে টিউমার কোষগুলির মধ্যে সহজে ঢুকিয়ে দিলে (যে ভাবে কোভিডের এমআরএনএ টিকা বানানো হয়েছে) এই পদ্ধতি আরও নিখুঁত হয়ে উঠতে পারে, জানিয়েছেন গবেষকরা।

গবেষণাটি এখনও পর্যন্ত শুধুই ইঁদুরের উপর চালানো হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, এই গবেষণা পথপ্রদর্শক। আগামী দিনে এই পদ্ধতিতে শুধু স্তন ক্যানসারই নয়, প্রায় সব রকমের ক্যানসারই সারানো সম্ভব হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Breast Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy