Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

Covid-19: ক্ষয়হীন বিষাক্ত রাসায়নিক জল, পরিবেশ, দেহে থাকলে কোভিড গুরুতর হয়ে ওঠে, জানাল গবেষণা

চারটি গবেষণাপত্রেরই উল্লেখ করা হয়েছে আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ-এর ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন-এর ওয়েবসাইটে।

জল, মাটির শিল্প-বিষে কোভিড আরও ভয়াবহ হয়। -ফাইল ছবি।

জল, মাটির শিল্প-বিষে কোভিড আরও ভয়াবহ হয়। -ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২২ ১৩:১৯
Share: Save:

বছরের পর বছরেও ক্ষয় হয় না এমন বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ বাড়ির আশপাশে, মাটিতে, জলে, প্রকৃতি, পরিবেশে বেশি পরিমাণে থাকলে কোভিড গুরুতর হয়ে ওঠার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বাড়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে ২৭ শতাংশ।

সাম্প্রতিক চারটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রগুলি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায়। চারটি গবেষণাপত্রেরই উল্লেখ রয়েছে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ' (এনআইএইচ)-এর ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন’-এর ওয়েবসাইটে।

বেশির ভাগ রাসায়নিক যৌগেরই ক্ষয় হয়, সেগুলি অন্য পদার্থে পরিণত হয় মাটিতে মিশে গিয়ে বা জলে দ্রবীভূত হয়ে। কিন্তু নয় হাজারেরও বেশি রাসায়নিক যৌগ রয়েছে, যাদের কোনও ক্ষয় হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা অন্য পদার্থে বদলেও যায় না। মানবশরীরে ঢুকলে সেগুলি সেখানেই থেকে যায় আমৃত্যু অথবা বহু বছর।

এই বিশেষ শ্রেণির রাসায়নিক পদার্থগুলির নাম— ‘পার অ্যান্ড পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্ট্যান্সেস' (পিএফএএস বা পিফাস)। কোনও ক্ষয় নেই বলে এদের ‘ফরএভার কেমিক্যাল্‌স’ বা ‘মৃত্যুহীন রাসায়নিক’ও বলা হয়। এদের ক্ষয় হয় না জলে, কোনও স্টেনে এমনকি তাপেও। এই শ্রেণিতে থাকা নয় হাজার রাসায়নিকই অত্যন্ত বিষাক্ত। যা মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে দেয়। বাইরের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূল হাতিয়ারগুলিকে তৈরিই হতে দেয় না। মাটি, জল বা পরিবেশ থেকে এগুলি মানবশরীরে ঢোকার পর অন্ত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যায় না বলে খুব ক্ষতি করে যকৃৎ, কিডনির। বহু ধরনের ক্যানসারের কারণ হয়ে ওঠে। শিশুর জন্মকালীন মানসিক ও শারীরিক সুস্থতারও অন্তরায় হয়ে ওঠে। যা সেই শিশুর সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকে। আমেরিকার ৯৭ শতাংশ নাগরিকের রক্তেই প্রচুর পরিমাণে রয়েছে পিফাস-গুলি। এমন কোনও দেশ নেই যেখানে পিফাস-এর অস্তিত্ব নেই। এদের হদিশ মিলেছে এমনকি, আর্কটিকেও। এরা তৈরি হয় শিল্প-বর্জ্যতে, বর্জ্য থেকেই।

ক্ষয়হীন, অত্যন্ত বিষাক্ত পিফাস-গুলি মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয় বলে কোভিড সংক্রমণ ভয়াবহ হয়ে ওঠা, টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও এদের বড় ভূমিকা থাকতে পারে বলে আগের কয়েকটি গবেষণায় সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু সত্যি সত্যিই কোভিড সংক্রমণকে ভয়াবহ হয়ে উঠতে পিফাস-গুলি সাহায্য করে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়নি। এই প্রথম চারটি পৃথক গবেষণায় সেই সংশয়ের পালেই জোরালো বাতাস লাগল সুনির্দিষ্ট তথ্যাদি মেলায়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল হেল্থ বিভাগের অধ্যাপক ফিলিপ গ্র্যান্ডজিন বলেছেন, ‘‘এই ক্ষয়হীন বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগগুলি মানবদেহে সেই সব কোষের গড়ে ওঠায় বাধা দেয় যে কোষগুলি পরে প্লাজমা কোষে পরিবর্তিত হতে পারে। প্লাজমা কোষগুলিই তৈরি করে অ্যান্টিবডি। যা সব ধরনের সংক্রমণ রোখার এক ও একমাত্র হাতিয়ার মানবদেহে।’’

চারটি গবেষণাপত্রের একটি জানিয়েছে, এই পিফাস-গুলির মধ্যে আর একটি রাসায়নিক যৌগ আরও মারাত্মক। তার নাম— ‘পিএফবিএ’। যে সব রোগীর ক্ষেত্রে কোভিড ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে, পরে কোভিডে তাঁদের মৃত্যুও হয়েছে, গবেষকরা তাঁদের রক্তের প্লাজমায় প্রচুর পরিমাণে পেয়েছেন এই রাসায়নিক যৌগ পিএফবিএ-কে। তাঁরা এ-ও দেখেছেন, বেশির ভাগ পিফাস যেখানে রক্তে জমা হয়, থাকে বহু বছর, সেখানে পিএফবিএ-র মতো রাসায়নিক যৌগ বছরের পর বছর থেকে যায় ফুসফুসে। কোভিড গুরুতর হয়ে উঠলে রোগীদের ফুসফুস খুব দুর্বল হয়ে যায়। এর অন্যতম কারণ হতে পারে ফুসফুসে এই রাসায়নিক যৌগটির উপস্থিতি, জানিয়েছেন গবেষকরা।

আর একটি গবেষণাপত্র জানিয়েছে, পিফাস-এর মাত্রা দেহে বাড়লে অস্বাভাবিক স্থূলত্ব ও ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বহু গুণ বেড়ে যায়। আগের গবেষণা জানিয়েছে, এই দু’টির সঙ্গে কোভিড গুরুতর হয়ে ওঠার সম্পর্ক রয়েছে। এ-ও দেখা গিয়েছে, কোভিড যাঁদের গুরুতর হয়ে উঠেছে বা মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মূত্রে প্রচুর পরিমাণে ছিল পিফাস-গুলি। ছিল ‘পিফোস’ বা ‘পিফোয়া’-র মতো ক্ষয়হীন বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগগুলিও।

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy