Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
space

Sounds from Space: মহাবিশ্বের ও পার থেকে কী সঙ্গীত ভেসে আসে! নাসা শোনাল সেই সব অশ্রুত শব্দ

তারাদের জন্ম-মৃত্যু দৃশ্য, কোনও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের আশপাশের এলাকার দৃশ্য ধরা পড়েছে মহাকাশে থাকা নাসার দু’টি টেলিস্কোপে।

ব্রহ্মাণ্ডের এই সব এলাকার শব্দ তুলে এনেছে নাসা। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

ব্রহ্মাণ্ডের এই সব এলাকার শব্দ তুলে এনেছে নাসা। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:২৭
Share: Save:

ব্রহ্মাণ্ডের কোনও প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে গর্ভযন্ত্রণার সুতীব্র শব্দ! শোনা যাচ্ছে প্রাণস্পন্দনের ‘লাব-ডুব’! যা ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে অনন্ত, অতলান্ত ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় নৈঃশব্দ্যকে।

কোনও প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের শব্দ। কোনও ‘মৃত্যুপথযাত্রী’র গোঙানি!

আবার অতলান্ত ব্রহ্মাণ্ডের কোনও প্রান্তে চলছে কোনও মহারাক্ষসের ভুরিভোজ! হাড়-মাংস-অস্থি গোগ্রাসে খাওয়ার সময় ভেসে আসছে সেই মহারাক্ষসের শ্বাসের শব্দও!

তারাদের জন্ম-মৃত্যুর শব্দ, ব্ল্যাক হোলের রাক্ষুসি শ্বাস!

কোথাও কোনও গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রদের জন্ম দিতে গিয়ে খুব ঘন, জমাট বাঁধা মেঘের কুণ্ডলীকে সহ্য করতে হচ্ছে তীব্র গর্ভযন্ত্রণা। কোথাও কোনও নক্ষত্রের মৃত্যু-দৃশ্যে ঘটছে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘সুপারনোভা’। সেই বিস্ফোরণের শব্দ অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের সব নৈঃশব্দ্যকে চুরচুর করে ভেঙে দিচ্ছে। আবার কোথাও কোনও গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা মহারাক্ষস সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের সব কিছুকে গোগ্রাসে খাওয়ার সময় আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে তার সর্বগ্রাসী শ্বাসের শব্দ।

মহাবিশ্বের ও-পার থেকে কী সঙ্গীত ভেসে আসে…

মহাবিশ্বের ও-পার থেকে কী সঙ্গীত ভেসে আসে, অনন্ত, অতলান্ত ব্রহ্মাণ্ডের নানা প্রান্ত থেকে জোগাড় করা সেই তথ্যের ভিত্তিতে তিনটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে নাসা। ব্রহ্মাণ্ডের জমাট বাঁধা অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা ‘বজ্রনির্ঘোষ’-এর সেই সব শব্দ মানুষের শ্রবণযোগ্য নয় বলে সেগুলিকে শ্রবণযোগ্য করে তুলেছে নাসা একটি বিশেষ প্রযুক্তিতে। যার নাম-‘সোনিফিকেশন’।

তারাদের জন্ম-মৃত্যু দৃশ্য, কোনও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের আশপাশের এলাকার দৃশ্য ধরা পড়েছে মহাকাশে থাকা নাসার দু’টি অত্যন্ত শক্তিশালী টেলিস্কোপে। একটি ‘হাব্‌ল স্পেস টেলিস্কোপ’। অন্যটি ‘চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি’। সেই সব ছবি আর বিস্ফোরণের তীব্রতার ওঠা-নামাকে মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দে (সোনিফিকেশন) বদলে দেওয়ার কাজটি করেছে নাসার ইউনিভার্স অব লার্নিং প্রোগ্রাম। নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরির সহায়তায়।

সেই সব শব্দ ব্রহ্মাণ্ডের কোন কোন এলাকার?

নাসার প্রকাশ করা তিনটি ভিডিয়োয় তুলে আনা হয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের তিনটি এলাকার গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো শব্দ। কোনও গ্যালাক্সিতে তারাদের জন্ম-মুহূর্তে মেঘকুণ্ডলীর গর্ভযন্ত্রণার শব্দটি নেওয়া হয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের যে অংশ থেকে তার নাম-‘ওয়েস্টারলান্ড-২’।

সুতীব্র বিস্ফোরণে ফেটে যাওয়া নক্ষত্রের মৃত্যুশয্যায় চার পাশে ছিটকে ছড়িয়ে পড়া নক্ষত্রের রাশি রাশি উত্তপ্ত দেহাংশ (‘ডেব্রি’ বা ‘সুপারনোভা রেমন্যান্টস’)-এর ‘আর্তনাদ’, ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ‘যন্ত্রণা’-র শব্দ নাসা তুলে এনেছে ব্রহ্মাণ্ডের যে এলাকা থেকে সেখানে রয়েছে ‘টাইকো’ নামে একটি বিশাল নক্ষত্রের দেহাংশ।

আর যে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের আশপাশের এলাকার শব্দ তুলে আনা হয়েছে সেটি সেই সুপরিচিত কৃষ্ণগহ্বর। ‘মেসিয়ার-৮৭ (এম-৮৭)’। এখনও পর্যন্ত যে একমাত্র কৃষ্ণগহ্বরের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে, সেটি মেসিয়ার-৮৭ (এম-৮৭)। যা রয়েছে পৃথিবী থেকে সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। যার ভর সূর্যের ভরের সাড়ে ৬০০ কোটি গুণ।

শুনুন ওয়েস্টারলান্ড-২ থেকে ভেসে আসা শব্দ

এই গ্যালাক্সিতে রয়েছে বয়সে একেবারে তরুণ, তরতাজা তারা বা নক্ষত্রের ঝাঁক (‘ক্লাস্টার’)। এই নক্ষত্রদের বয়স খুব বেশি নয়। বড়জোর ১০ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ বছর। এরা পৃথিবী থেকে রয়েছে ২০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এই তারাদের জন্ম-মুহূর্তের গর্ভযন্ত্রণার শব্দ তুলেছে হাবল টেলিস্কোপ আর চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি।

যে এলাকায় নতুন নতুন তারার জন্ম হচ্ছে, হাবলের পাঠানো ছবিতে তা ধরা পড়েছে (ভিডিয়োয় সবুজ ও নীল রঙের এলাকাগুলি)। আর যে এলাকাগুলি থেকে তারাদের জন্মের সময় মেঘের কুণ্ডলী ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে এক্স-রে (ভিডিয়োয় বেগুনি রঙের এলাকাগুলি) তা ধরা পড়েছে চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরির চোখে।

ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, যে সব এলাকা থেকে বেশি উজ্জ্বল আলো বেরিয়ে আসছে সেখানকার শব্দও বেশি জোরালো। আলো উপরের দিকে গেলে শব্দ ক্রমশ কর্কশ হচ্ছে। ভিডিয়োয় হাবলের পাঠানো তথ্য তারযন্ত্রের শব্দে প্রকাশ করা হয়েছে, চন্দ্রের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে ঘণ্টাধ্বনি (বেল) দিয়ে।

ভিডিয়ো সৌজন্যে- চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি।

শুনুন 'টাইকো 'সুপারনোভার দেহাবশেষ থেকে ভেসে আসা শব্দ

চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরির পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে তারার মৃত্যুদৃশ্যে তার দেহাবশেষগুলির যন্ত্রণাধ্বনি ধরা পড়েছে। সেই সময় ছিন্নভিন্ন তারার দেহ থেকে কী কী মূল্যবান ধাতু ছিটকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশে ভিডিয়োয় তা বিভিন্ন রঙে ধরা পড়েছে। লোহা হলে লাল, সিলিকনে সবুজ, সালফার বা গন্ধক হলে নীল। লাল আলো বেশি দেখা গেলে সেখান থেকে শব্দ ভেসে আসছে নিচু স্বরে। আলো সবুজ বা নীল যে সব এলাকায়, সেখান থেকে ভেসে আসা শব্দ বেশ জোরালো।

তারাদের দেহাবশেষে কোথায় লোহা বা কোথায় সিলিকন বা গন্ধক কতটা কম বা বেশি পরিমাণে মহাকাশে ছিটকে ছড়িয়ে পড়ছে, তা বোঝা যাচ্ছে সেই সব এলাকা থেকে বেরিয়ে আসা শব্দের ওঠা-নামায়।

ভিডিয়ো সৌজন্যে- চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি।

শুনুন ব্ল্যাক হোল এম-৮৭ থেকে ভেসে আসা শব্দ

এই মুলুকের শব্দ তুলে আনা হয়েছে চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি (ভিডিয়োয় নীল রঙের এলাকা) ও ভেরি লার্জ অ্যারে (ভিডিয়োয় লাল ও গোলাপি রঙের এলাকা), এই দু’টি টেলিস্কোপের পাঠানো ছবি ও তথ্যের ভিত্তিতে।

ব্ল্যাক হোলের গোগ্রাসে খাওয়ার সময় খুব শক্তিশালী কিছু কণা ছিটকে বেরিয়ে আসে। সেগুলি গিয়ে ধাক্কা মারে আশপাশে থাকা অত্যন্ত উত্তপ্ত গ্যাসের মেঘকে। তার ফলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে এক্স রশ্মি ও রেডিয়ো তরঙ্গ।

ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে এগোলে আলো জোরালো হচ্ছে। শব্দও আরও জোরালো হয়ে উঠছে। আলো আর শব্দ দু’টিই জোরালো হয় এক্স রশ্মি নির্গত হলে। আর রেডিয়োতরঙ্গের ক্ষেত্রে আলো ও শব্দের তীব্রতা তুলনায় হয় কম।

ভিডিয়ো সৌজন্যে- চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি।

অন্য বিষয়গুলি:

space black hole Supernova
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy