—প্রতীকী চিত্র।
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হলেই ফুটে ওঠে এক অনির্বচনীয় আলোক বলয়। সেই বলয় আদতে, সূর্যের বহিঃমণ্ডলের প্রান্তিক অংশ। বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলা হয় ‘করোনা’। তবে গ্রহণ না হলে পৃথিবী থেকে তার দেখা মেলে না। করোনা-চরিত্র বিশ্লেষণে তাই পূর্ণগ্রাস গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন সৌর-পদার্থবিদেরা। এ বার অবশ্য মহাকাশে পাড়ি দিয়ে করোনা রহস্যের সন্ধান করতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। তারা জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের শুরুতে রওনা দেবে ভারতের সৌরযান আদিত্য-এল১। পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে নির্দিষ্ট একটি বিন্দুতে দাঁড়িয়ে সৌর-রহস্যের তথ্য আহরণ করবে সে। করোনা এবং ক্রোমোস্ফিয়ারের পর্যবেক্ষণের মাঝামাঝি একাধিক কোণ থেকে সৌরঝড়ের (সূর্য থেকে বেরিয়ে আসা তেজস্ক্রিয় কণার স্রোত) উপরেও নজরদারি চলবে।
ইসরো সূত্রের খবর, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে সৌর অভিযান একটি যুগসন্ধিক্ষণ হিসাবে চিহ্নিত হতে চলেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই অভিযানের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত আছেন অধ্যাপক দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুজ নন্দীর মতো একাধিক বঙ্গসন্তান।
আদিত্য সৌরযান আদতে মহাকাশে গিয়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে। ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, আদিত্যের সামনে একটি চাকতি (ডিস্ক) দিয়ে সূর্যকে আড়াল করা হবে। যেমন গ্রহণের সময় হয়। তার ফলে শুধু করোনা অংশটি বাইরে থাকবে। আদিত্যের যন্ত্র চোখে সেই করোনা থেকে নির্গত তরঙ্গ, চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে তিনি এই অভিযানের জটিলতার কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘চাকতি একেবারে ঠিকঠাক ভাবে বসাতে হবে। সামান্য নড়চড় হলে সূর্যের কেন্দ্র থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয়তায় পুরো সৌরযান বিগড়ে যেতে পারে।’’
আদিত্যকে পূথিবী এবং সূর্যের মাঝে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে বসাতে হবে। সেই অবস্থান বিন্দুকেই বিজ্ঞানের ভাষায় ‘এল-১ পয়েন্ট’ বলা হয়। পদার্থবিদেরা বলছেন, পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে তিনটি বল ক্রিয়াশীল। সূর্যের অভিকর্ষ বল, পৃথিবীর অভিকর্ষ বল এবং মহাকাশযানের কেন্দ্রাভিগ বল। এল-১ বিন্দু এমনই একটি অবস্থান যেখানে সৌরযান থাকলে তিনটি বলই পরস্পর বিপরীত ভাবে কাজ করবে এবং আদিত্য স্থির হয়ে থাকতে পারবে।
ইসরো জানিয়েছে, এই রহস্য সন্ধানে আদিত্যের শরীরে সাতটি যন্ত্র বসানো থাকছে। সেগুলি হল, ভিজ়িবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফ, সোলার আলট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ, সোলার লো-এনার্জি এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার, হাই-এনার্জি এল-১ অরবাইটিং এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার, আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকল এক্সপেরিমেন্ট, প্লাজ়মা অ্যানালাইজ়ার প্যাকেজ ফর আদিত্য, অ্যাডভান্স ট্রাই-অ্যাক্সিয়াল হাই রেজ়োলিউশন ডিজিটাল ম্যাগনেটোমিটার। ইসরো সূত্রের দাবি, সৌরঝড় এবং সূর্যের অন্যান্য রহস্য সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞানীদের অনেক কিছুই অজানা। তাই আদিত্য যে তথ্য দেবে তা আগামী দিনে রহস্য সমাধানে বিশেষ হাতিয়ার হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy