Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

বিস্ময়মুগ্ধতার সঙ্গেই সেরে নিলাম পরীক্ষা

একেই বলে সূর্যের বলয়গ্রাস গ্রহণ! মিনিট তিনেকের এই দৃশ্যের জন্যই এত প্রতীক্ষা।

উটি থেকে তোলা লেখকের বলয় গ্রাসের ছবি।

উটি থেকে তোলা লেখকের বলয় গ্রাসের ছবি।

সন্দীপ চক্রবর্তী, ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স-এর অধিকর্তা
উটি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৭
Share: Save:

স্থানীয় সময় সকাল ৮টা। নীল আকাশে উজ্জ্বল সূর্যের গা ঘেঁষে দেখা দিল চাঁদ। কালো ছায়ার মতো ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে সে। আধ ঘণ্টার মধ্যেই সূর্যকে ‘গিলে’ ফেলল অনেকটা। ঘণ্টাখানেক পরে দেখা গেল সেই অসাধারণ দৃশ্য! সূর্যের বুকের উপরে কালো ছায়ার মতো চাঁদ। চার পাশ থেকে উজ্জ্বল বলয়ের মতো বেরিয়ে রয়েছে সূর্যের অনাবৃত অংশ। গাণিতিক হিসেবে উটিতে সূর্যের ৯৩% ঢেকে দেয় চাঁদ। সূর্যের অনাবৃত ৭% বলয়ের মতো দেখা গিয়েছে।

একেই বলে সূর্যের বলয়গ্রাস গ্রহণ! মিনিট তিনেকের এই দৃশ্যের জন্যই এত প্রতীক্ষা।

বলয়গ্রাস গ্রহণের পথ এ বার দক্ষিণ ভারতের একাংশের উপর দিয়ে গিয়েছে। তারই অন্যতম উটি। কলকাতায় আংশিক গ্রহণ দেখা যেত। খবর পেলাম, ওখানে মেঘ ছিল। তাই গ্রহণ কার্যত দেখা যায়নি বললেই চলে। তবে পাহাড়ি শহর উটির আকাশ ছিল ঝলমলে নীল। তাই মন ভরে সূর্যগ্রহণ দেখেছি।

শুধু সূর্যগ্রহণ দেখতে কলকাতা থেকে দক্ষিণের পাহাড়ি শহরে ছুটে এসেছি বললে সত্যের অপলাপ হবে। আসলে সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে আয়নোস্ফিয়ার এবং রেডিয়ো তরঙ্গের একটি পরীক্ষাই ছিল উদ্দেশ্য। কারণ, সূর্যগ্রহণ একটি মহাজাগতিক ঘটনা, আগে থেকে হিসেব কষে যার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা যায় এবং তার ফলে প্রস্তুত হয়ে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। সূর্য ও সূর্যগ্রহণের প্রভাব পড়ে বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারের উপরে। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স’-এর ১৪ জন গবেষক দেশের ১৪ প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলাম। সোমবার শুরু হয় পরীক্ষা। এই কাজে সহযোগী ছিল তামিলনাড়ুর তিরুনেলবেল্লিতে নৌসেনার রেডিয়ো স্টেশনটিও। নেপাল এবং নাইজ়িরিয়াতেও বিদেশি বন্ধু-গবেষকেরা ছিলেন।

‘আয়নোস্ফিয়ার’ রয়েছে ভূপৃষ্ঠের ৬০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার উপরে। সূর্যরশ্মির প্রভাবে সেখানে তড়িদাহত কণা তৈরি হয়। দিনের বেলা ন্যূনতম ৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় এই তড়িদাহত কণা মেলে। সূর্য ডুবলে তা ন্যূনতম ৯০ কিলোমিটার উপরে উঠে যায়। ৬০ থেকে ৯০ কিলোমিটার, এই স্তরটিকে আমরা বলি ‘ডি-লেভেল’। রাতের বেলা বা সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে ‘ডি-লেভেল’ উধাও হয়ে যায়। এই আয়নোস্ফিয়ারকে কাজে লাগিয়ে রেডিয়ো তরঙ্গ প্রতিফলিত করে বার্তা লেনদেন করা হয়। যাকে ‘শর্ট ওয়েভ’ বলে এবং এর সাহায্যে ‘অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ’ (ভিএলএফ) ব্যবহার করা সম্ভব। আয়নোস্ফিয়ার গবেষণায় বেলুন, বিমান, রকেট বা কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করা যায় না। পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময় সূর্য পুরো ঢাকা পড়লেও এই ‘ডি-লেভেল’ সাময়িক ভাবে উধাও হয়ে যায়। বলয়গ্রাসের সময় তা পুরো উধাও না-হলেও আয়নোস্ফিয়ারে বদল লক্ষ করা যায়। তাই এমন ঘটনা চলাকালীন ‘অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ’ পাঠিয়ে আয়নোস্ফিয়ার সংক্রান্ত গবেষণা সম্ভব। শত কোটি টাকা খরচ করলেও কৃত্রিম ভাবে এই পরীক্ষা সম্ভব নয়।

খুব শীঘ্র পূর্ণগ্রাস বা বলয়গ্রাস গ্রহণ ভারত থেকে না-ও দেখা যেতে পারে। তাই বিজ্ঞানীদের কাছে এ বারের গ্রহণ বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মেঘলা আকাশ হলেও আমাদের গবেষণায় তার প্রভাব পড়বে না। কারণ, দৃশ্যমানতার সঙ্গে এই পরীক্ষার সম্পর্ক নেই। প্রায় সব জায়গাতেই আমাদের পরীক্ষা ভাল ভাবে হয়েছে এবং গ্রহণের সময় আয়নোস্ফিয়ার সংক্রান্ত বিচ্যুতিও ধরা পড়েছে। আগামী দু’দিনও এই পরীক্ষা চলবে। আশা করছি, তার পরে তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন তথ্য মিলতেই পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Solar Eclipse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy