Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

চিকিৎসার পথ খুঁজতে জিন-মানচিত্র বাঙালির

পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এশীয়দের জিনের গঠন বেশ জটিল। কমপক্ষে ১৪টি সুপ্রাচীন জনগোষ্ঠীর ডিএনএ মিশেছে এখানে।

পার্থপ্রতিম মজুমদার

পার্থপ্রতিম মজুমদার

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০৬
Share: Save:

কঠিন অসুখ। ওষুধও রয়েছে। কিন্তু প্রায় সবই এশিয়ার বাইরের বাসিন্দাদের জিন-তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা ওষুধ। কারণ, ভারত-সহ এশিয়ার মানুষের জিন-বৈচিত্রের বেশিটাই অধরা রয়ে গিয়েছে এত দিন। সেই অজানা ‘জিন-মানচিত্র’ তৈরি করল বিজ্ঞানীদের একটি দল এবং সেই দলে রয়েছেন কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিকস’-এর প্রতিষ্ঠাতা— অধ্যাপক পার্থপ্রতিম মজুমদার। বুধবার ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।

পার্থপ্রতিমবাবুর কথায়, ‘‘এত বড় জিনোমিক গবেষণা এশিয়ায় এই প্রথম। এশীয়দের জিনের পুরো মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু মানচিত্রের অনেকটাই এখন আমাদের হাতের মুঠোয়।’’ তিনি জানান, এশিয়ার ২১৯টি জনগোষ্ঠীর ১৭৩৯ জনের জিন-পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯৮ জন ভারতীয় (আদিবাসী ও অন্যান্য গোষ্ঠীর)। পশ্চিমবঙ্গ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখানে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় থেকে শুরু করে টোটো, লোধা-সহ বিভিন্ন জনজাতির জিনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এশীয়দের জিনের গঠন বেশ জটিল। কমপক্ষে ১৪টি সুপ্রাচীন জনগোষ্ঠীর ডিএনএ মিশেছে এখানে। অন্তত ২ লক্ষ নতুন ডিএনএ-র খোঁজ মিলেছে এশীয়দের শরীরে। ২৩ শতাংশ খারাপ প্রোটিন মিলেছে। রোগভোগের জন্য অন্যতম দায়ী এই খারাপ প্রোটিন।

আরও পড়ুন: ‘খোঁজ পেয়েছি আগেই’, বিক্রম-সন্ধানী ইঞ্জিনিয়ারের দাবি উপেক্ষা করে বললেন শিবন

বিজ্ঞানীদলের দাবি, ডায়াবিটিস থেকে থ্যালাসেমিয়া, স্তন ক্যানসারের মতো অসুখে ভবিষ্যতে সাহায্য করবে তাদের গবেষণা। তথ্যের অভাবে কঠিন অসুখে ভারত-সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা বহু সময়ে সীমিত হয়ে যায়। কারণ, এশিয়ার বাইরের মানুষের জিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে তৈরি হয় ওষুধ। তা ছাড়া, তথ্য না থাকায় এশিয়ায় মানব সভ্যতার বিবর্তন, জীব-প্রযুক্তি-সহ একাধিক গবেষণায় বাধার মুখে পড়তে হয় বিজ্ঞানীদের। খরচ-সাপেক্ষও হয়ে পড়ে গবেষণা।

পার্থপ্রতিমবাবু জানিয়েছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাওয়া মানুষের জিন-বৈচিত্রের যাবতীয় তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে মজুত থাকলেও তাতে এশীয়দের তথ্য ছিল ১০ শতাংশেরও কম। অথচ গোটা পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেকের বাস এশিয়ায়। তথ্যের এই অভাব মেটাতে ২০১৬ সালে তৈরি করা হয় ‘জিনোম এশিয়া ১০০কে কনসর্টিয়াম’। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘লেট’স ম্যাপ দ্য গ্যাপ ইন জিনোমিক ডেটা’। কনসর্টিয়ামে রয়েছে কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিকস’, সিঙ্গাপুরের ‘ন্যানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি’, সান ফ্রান্সিসকোর ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া’ এবং বায়োটেকনোলজি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু সংস্থা।

ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমরা প্রমাণের উপরে ভিত্তি করে ওষুধ দিয়ে থাকি। একে ‘এভিডেন্স বেসড মেডিসিন’ বলে। কিন্তু এই সব প্রমাণই বিদেশি। ফলে অনেক সময় চিকিৎসায় খামতি থেকে যায়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এখানকার মানুষের জেনেটিক তথ্য যদি মেলে, তা হলে আরও নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা যাবে।’’ এন্ডোক্রিনোলজিস্ট শুভঙ্কর চৌধুরীর কথায়, ‘‘বিদেশি তথ্যের উপর ভিত্তি করে ওষুধ তৈরি হলেও তা এ দেশের মানুষের উপরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে বাজারে আনা হয়। উপকার মিললে তবে তা দেওয়া হয় রোগীকে। কিন্তু নতুন গবেষণায় আরও উপকারী ওষুধ মিলবে।’’

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী মনে করিয়ে দেন, ‘‘সম্প্রতি একটি খবরে প্রকাশ্যে আসে, অ্যান্টি-ভেনোম দেওয়া সত্ত্বেও সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। পরে জানা যায়, অ্যান্টি-ভেনোমটি তাইল্যান্ডে তৈরি। হয়তো সেই কারণে এ দেশের মানুষের শরীরে তা কাজ করেনি। এ রকম আরও ঘটনা আছে। ভারতীয়দের জিনগত তথ্য পাওয়া গেলে আরও কার্যকরী ওষুধ তৈরি করা যাবে। যা চিকিৎসা ব্যবস্থায় হয়তো আমূল পরিবর্তন এনে দেবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Pratim Majumder Gene Asia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE