—ফাইল চিত্র
করোনা-আতঙ্কে কাঁপছে গোটা দুনিয়া। কিন্তু মানুষের সভ্যতার ইতিহাসে এটাই প্রথম অতিমারি নয়। এর আগেও বহু বার ব্যাপক আকারে হানা দিয়েছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মতো আণুবীক্ষণিক শত্রু। পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে সেই সব রোগ। কিছু দিনের জন্য হারিয়ে গিয়ে ফের তারা ফিরে এসেছে ভয়াল চেহারায়। সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই নানা রোগ-কাহিনি।
আক্ষরিক অর্থেই অতিমারি নিয়ে বহু যুগ ধরে ‘ঘর করছে’ মানুষ। সেই সংক্রান্ত নানা তথ্য তুলে আনছে বিজ্ঞানেরই ভিন্ন একটি শাখা প্যালিওজিনোমিক্স। কার্যত বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞানের এই শাখাটি। মাটির তলা থেকে উদ্ধার হওয়া সাত পুরনো মাথার খুলি। সেই খুলির দাঁতে লুকিয়ে থাকা ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)-ই এখন মানবসভ্যতার রোগের ইতিহাস নতুন করে লিখছে। ১৬৫ খ্রিস্টাব্দে রোম সম্রাট অ্যান্টোনিয়াস পায়াসের আমলে মহামারির আকার নিয়েছিল প্লেগ। মৃত্যু হয়েছিল ৫০ লক্ষ মানুষের। ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব রোমের জাস্টিনিয়ান সম্রাটের আমলেও হানা দিয়েছিল প্লেগ। তার তাণ্ডব ছিল আরও ব্যাপক আকারের। প্লেগে সে সময় মৃত্যু হয়েছিল ৫ কোটি মানুষের। এ সব তথ্য-প্রমাণ দেখেই গবেষকদের ধারণা, মানুষের সঙ্গে মহামারির সম্পর্ক যতটা ভাবা হত তার থেকেও অনেক বেশি পুরনো। প্রাচীনতম মহামারি সম্পর্কে নতুন এই তথ্য গুলিই আরও ভাবাচ্ছে গবেষককুলকে
আমেরিকার অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক অ্যানে স্টোন বলছেন, ‘‘কোভিড ১৯-এর পিছনে রয়েছে করোনাভাইরাস। আমরা ঠিক এমন উদাহরণ গবেষণায় খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু তা ঠিক কোন সময়ের খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নৃতাত্ত্বিক জিনবিদ্যা নিয়ে গবেষণা চলছে। সেই গবেষণারই অংশীদার অ্যানে স্টোন। সভ্যতার অনেক না জানা হিসাব মিলিয়ে দিতে পারে প্যালিওজিনোমিক্স। সেই সম্ভাবনার কথাই তুলে ধরেছেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজিস্ট মারিয়া স্পিরু। তাঁর মতে, ‘‘অনেক সময় ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় না। সেই সময় কখনও কখনও ডিএনএ পরীক্ষা চমকপ্রদ ভাবে সেই ঘাটতি মিটিয়ে দিতে পারে।’’
আরও পড়ুন: প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোভিড আক্রান্ত ‘বেপাত্তা’, উদ্বেগে বেঙ্গালুরু
মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে হানা দিয়েছিল প্লেগ। সেই মহামারি ‘ব্ল্যাক ডেথ’নামেই কুখ্যাত। কিন্তু তার আগেও মানুষ যে প্লেগের শিকার হয়েছিল তা এখন মানেন বিজ্ঞানী এবং প্রত্নতত্ত্ববিদরা। প্রস্তর যুগেই হানা দিয়েছিল প্লেগ। তার প্রমাণ মিলেছে সেই সময়ের কঙ্কালের দাঁতের টুকরো থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ-তেই। বহু যুগ পরেও সেই প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়নি। তবে সেই সময়ের প্লেগ এবং মধ্যযুগের প্লেগের জিনে কিছুটা ফারাক ছিল। মাছির শরীর থেকে ওই রোগ মানুষের দেহে আসার জন্য যে জিন প্রয়োজন তা প্রাচীন যুগের ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ছিল না। ওই রোগ ছড়াতো অন্য কোনও প্রাণী। ২০১৮ সালে কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম জানায়, ইংল্যান্ডে প্লেগের হানার আগে প্রাচীন কালেও ওই রোগ দেখা দিয়েছিল। ওই গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছিল, সুইৎজারল্যান্ডের একটি বিরাট জনবসতি এলাকায় হানা দিয়েছিল মারণ প্লেগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই রোগই পৃথিবীর প্রথম অতিমারি।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ইউরেশীয় স্তেপ অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্যত্র চলে যাওয়া (মাইগ্রেশন)-র পিছনেও প্লেগের হাত রয়েছে। প্লেগ ছাড়া স্তেপ মাইগ্রেশন হত না বলেই মনে করেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, প্লেগ না হলে ইউরোপের বর্তমান বাসিন্দারা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতে কথাই বলতেন না। প্যালিওজিনোমিক্সের চর্চায় উঠে এসেছে নানা তথ্য। জানা গিয়েছে, শুধু প্লেগ নয়, নিওলিথিক বা নব্যপ্রস্তর যুগে ছিল হেপাটাইটিস বি এবং পার্ভোভাইরাস বি ১৯-এর মতো রোগও। গত ফেব্রুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র গবেষকরা জানিয়েছে সাড়ে ৬ হাজার বছর আগে হানা দিয়েছিল এখনকার সালমোনেলা টাইফিও।
আরও পড়ুন: ফ্রিজ থেকে কি করোনা ছড়ায়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নিন
মানুষের সঙ্গে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ‘সম্পর্ক’ বহু পুরনো। তাই তুলে ধরছে প্যালিওজিনোমিক্স। অ্যানে স্টোনের মত, ‘‘ভাইরাসের সঙ্গে মানুষের দীর্ঘ যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেছে প্যালিওজিনোমিক্স।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy