Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Nobel Prize

Nobel Prize In Physics 2021: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণ খুঁজে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল ৩ জনের

মঙ্গলবার এই তিন পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণা করেছে ‘দ্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’।

পদার্থবিজ্ঞানে তিন নোবেলজয়ী। অধ্যাপক স্যুকোরো মানাবে (বাঁ দিক থেকে), অধ্যাপক ক্লস হাসেলম্যান ও অধ্যাপক জিওর্জিও পারিসি। ছবি- নোবেল কমিটির সৌজন্যে।

পদার্থবিজ্ঞানে তিন নোবেলজয়ী। অধ্যাপক স্যুকোরো মানাবে (বাঁ দিক থেকে), অধ্যাপক ক্লস হাসেলম্যান ও অধ্যাপক জিওর্জিও পারিসি। ছবি- নোবেল কমিটির সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২১ ১৮:১৫
Share: Save:

অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, যাবতীয় খামখেয়ালিপনা আর এলোমেলো আচরণের মধ্যে নিয়ম খুঁজে বার করা আর অনেক আগেভাগে তার প্রায় নিখুঁত পূর্বাভাসের পথ দেখানোর জন্য এ বার পদার্থবিজ্ঞানে তিন জনকে দেওয়া হল নোবেল পুরস্কার। পুরস্কৃত হলেন তিন দেশের নাগরিক।

আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যুকোরো মানাবে, জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর মেটিরিওলজির অধ্যাপক ক্লস হাসেলম্যান এবং ইটালির রোমের সাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিওর্জিও পারিসি। পদার্থবিজ্ঞানে এই তিন পুরস্কারজয়ীর নাম মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি।

‘দ্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর তরফে জানানো হয়েছে, এক কোটি ক্রোনার (সুইডিশ মুদ্রা) মূল্যের নোবেল পুরস্কারের অর্ধেক ভাগাভাগি করে নিয়েছেন স্যুকোরো মানাবে ও ক্লস হাসেলম্যান। বাকি অর্ধেক পেয়েছেন জিওর্জিও পারিসি।

বিশৃঙ্খলার মধ্যে শৃঙ্খলার হদিশ: কৃতিত্ব তিন জনেরই

আমাদের সামনে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, যাবতীয় খামখেয়ালিপনা আর এলোমেলো আচরণের সেরা দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আবহাওয়া। এখন জলবায়ুও। পৃথিবীর মতোই যাবতীয় জটিল ব্যবস্থার অন্তরে অন্দরে রয়েছে এই সব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, খামখেয়ালিপনা আর এলোমেলো আচরণ। তাদের মধ্যে নিয়ম খুঁজে বার করে অনেক আগেভাগে তাদের বুঝে ফেলার পথ প্রথম দেখিয়েছিলেন মানাবে, হাসেলম্যান এবং প্যারিসি। এঁদের মধ্যে মানাবে ও হাসেলম্যান এও দেখিয়েছিলেন, কী ভাবে মানুষ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি, পরিবেশের খামখেয়ালিপনা আর এলোমেলো আচরণকে। যার জন্য শীতকালেও জবজবে ঘামে ভিজতে হচ্ছে আমাদের। নিম্নচাপের দৌরাত্ম্য, ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন-টর্নেডোর তাণ্ডব বাড়ছে সমুদ্রোপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে।

অধ্যাপক মানাবের গবেষণাটি ছিল গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে। হাসেলম্যান তাঁর গবেষণাটি করেছিলেন সাতের দশকে। আর পারিসির গবেষণাটি ছিল আটের দশকের। নোবেল কমিটির তরফে বলা হয়েছে, ‘‘তিন জনের গবেষণাই বিজ্ঞানের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা।’’

প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা। -প্রতীকী ছবি।

প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা। -প্রতীকী ছবি।

‘তুমুল বৃষ্টি হবে’-র পূর্বাভাস বদলিয়ে যায় ঝকঝকে রোদে!

তা সে প্রকৃতি, পরিবেশই হোক বা যে কোনও ধরনের জটিল ব্যবস্থা (‘কমপ্লেক্স সিস্টেম্‌স’), সকলেরই অন্দরে রয়েছে এলোমেলো হয়ে পড়ার প্রবণতা। চূড়ান্ত খামখেয়ালিপনাই যেন তাদের নিয়ম। তাই আগেভাগে বলা খুব কঠিন হয়ে পড়ে ঠিক কত মিলিমিটার বৃষ্টি হবে আগামী ১০ জুলাই, কলকাতায়। আজ ভাল বৃষ্টি হয়েছে বলেই যে আগামী কালও ভালই বৃষ্টি হবে কলকাতায়, এমন পূর্বাভাসও নিখুঁত হয় না। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার পর প্রচণ্ড ঝড়ের পূর্বাভাসে গন্ডগোল হয়ে যায়। কলকাতার উপরে না এসে তা শেষ মুহূর্তে ওড়িশা বা বাংলাদেশের দিকে চলে যায়। বদলে যায় ঝড়ের গতিবেগ। গতিপথ। আবহাওয়ার খামখেয়ালে। আমরা অতশত না বুঝে দোষ দিই আবহাওয়া দফতর বা মৌসম ভবনকে! প্রকৃতির এমনই খামখেয়াল যে, প্রাথমিক অবস্থার সামান্য রদবদলই পূর্বাভাসকে আমূল বদলে দেয়। তার ফলে ‘তুমুল বৃষ্টি হবে’-র পূর্বাভাস বদলিয়ে যায় ঝকঝকে রোদে।

‘হাওয়াবদল’-এ মানুষের ভূমিকা

ছয়ের দশকে মানাবের দেওয়া গাণিতিক মডেলই প্রথম দেখিয়েছিল বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ে। দেখিয়েছিল, কেন ভূপৃষ্ঠ যতটা তেতে ওঠে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর ততটা তেতে ওঠে না কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়লে। তিনিই প্রথম দেখিয়েছিলেন, তার উপর আছড়ে পড়া সৌর বিকিরণের কতটা অংশ প্রতিফলিত হয় পৃথিবীর দৌলতে। ফিরে যায় মহাকাশে। দেখিয়েছিলেন, এক ঘণ্টায় পৃথিবীর এক বর্গ মিটার এলাকার উপর যদি ৩৪২ ওয়াটের ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিকিরণ আছড়ে পড়ে তা হলে তার মধ্যে প্রতি বর্গ মিটার এলাকায় ভূপৃষ্ঠ শুষে নেয় ২৩৫ ওয়াটের সৌর বিকিরণ। আর বাকি মাত্র ১০৭ ওয়াটের বিকিরণ মহাকাশে ফেরত পাঠায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। ফলে, ভূপৃষ্ঠ যতটা তাতে, ততটা গরম হয় না বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরগুলি। মানাবেই প্রথম দেখিয়েছিলেন, এই তারতম্যের সঙ্গে যথেষ্টই সম্পর্ক আছে বায়ুমণ্ডলের পরিচলনের। তাঁর এই মডেলই এখন জলবায়ুর পূর্বাভাসের মডেলগুলির প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠছে। এও দেখিয়েছিলেন, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে সভ্যতার ভূমিকা কতটা।

তাঁর কাজের ১০ বছর পরের গবেষণায় আবহাওয়া আর জলবায়ুর মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন হাসেলম্যান। আবহাওয়া প্রচণ্ড খামখেয়ালি হলেও কেন জলবায়ুর মন আগেভাগে পড়ে ফেলা যায়, তারও কারণ জানিয়েছিলেন হাসেলম্যান তাঁর গাণিতিক মডেলে। আবহাওয়া ও জলবায়ু বদলাতে মানুষের ভূমিকা কতটা, সেটাও দেখিয়েছিলেন তিনি।

খামখেয়ালেরও খেয়াল আছে!

আর পারিসির কৃতিত্ব, তিনি যে কোনও জটিল ব্যবস্থার মধ্যেই এই সব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, যাবতীয় খামখেয়ালিপনা আর এলোমেলো আচরণের মধ্যে শৃঙ্খলা খুঁজে বার করে তাদের মতিগতি আগেভাগে বুঝে ফেলার পথ দেখিয়েছিলেন তাঁর গাণিতিক মডেলে। যা পরে গণিতশাস্ত্র, জীববিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহৃত মেশিন লার্নিং পদ্ধতি নিয়ে গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে, আরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Nobel Prize
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy