Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

মূত্র থেকে খাবার তৈরির চেষ্টায় নাসা

মানুষের মূত্র ‘রিসাইক্‌ল’ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস তৈরি করার চেষ্টা করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। যাতে মহাকাশে বিপদে পড়লে নভশ্চরেরা নিজেরাই তাঁদের মূত্রের অণু-পরমাণু বিশ্লেষণ করে তা থেকে এক দিকে খাবার ও অন্য দিকে গবেষণার প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরি করে নিতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

কিছুই যায় না ফেলা।

—চেনা শব্দগুলোই নতুন করে ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। মানুষের মূত্র ‘রিসাইক্‌ল’ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস তৈরি করার চেষ্টা করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। যাতে মহাকাশে বিপদে পড়লে নভশ্চরেরা নিজেরাই তাঁদের মূত্রের অণু-পরমাণু বিশ্লেষণ করে তা থেকে এক দিকে খাবার ও অন্য দিকে গবেষণার প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ তৈরি করে নিতে পারে।

আসলে লালগ্রহে ‘মিস কৌতূহল’-এর (নাসার মঙ্গলযান কিউরিওসিটি) যাত্রা সফল হওয়ার পর থেকেই মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনাটা ঘুরপাক খাচ্ছে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মাথায়। মঙ্গল ঘুরে আসতে যে লম্বা সময় লাগবে, তত দিন নভশ্চরদের ‘খাইয়ে-পরিয়ে’ রাখা নিয়েই সব চেয়ে চিন্তিত নাসা। মহাকাশযানে যথেষ্ট খাদ্যসামগ্রী নিয়েই পাড়ি দেবেন যাত্রী। কিন্তু যদি কোনও কারণে ভাঁড়ারে টান পড়ে! তা ছাড়া, নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি খাদ্যসামগ্রী মহাকাশযানে তোলাই তো দায়। সামান্য ওজনও যদি বেড়ে যায়, পৃথিবীর মায়া (পড়ুন অভিকর্ষ বল) কাটানোই কঠিন হয়ে পড়বে।

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনেও (আইএসএস) এ ধরনের গবেষণা চলছে। মার্কিন মহাকাশচারী স্কট কেলিই যেমন গবেষণাগারে ফুল ফুটিয়েছিলেন। পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকা মানুষের বসবাসযোগ্য এই কৃত্রিম উপগ্রহটিতে (আইএসএস) ছ’মাস অন্তর এক দল মহাকাশচারী যায়, আর এক দল ফিরে আসে। ফলে খাবার কখনও বাড়ন্ত হয় না।

কিন্তু লালগ্রহ অভিযানে বছরের পর বছর মহাকাশে কাটাতে হবে নভশ্চরকে। যথেষ্ট খাবার সঙ্গে থাকলেও বিপদের কথা বলা যায় না। ‘‘সেই পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে হলে, ‘রিইউস’ ও ‘রিসাইক্‌ল’ ছাড়া উপায় নেই,’’ বলছেন ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক এ ব্লেনার। তা ছাড়া, মহাকাশে বর্জ্য পদার্থ ফেলে দেওয়ার উপায়ও থাকে না। ফলে মানুষের মূত্রের অণু-পরমাণুকে যদি পলিয়েস্টার ও পুষ্টিকর উপাদানে বদলে ফেলা যায়, তা হলেই কেল্লা ফতে। কী ভাবে তা করা যায়, সেটা নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছে ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন:বঙ্গতনয়ার হাত ধরে ২৫ কোটির শৃঙ্গসরাস

ব্লেনার উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিভিন্ন ধরনের ইস্ট ফলানোর জন্য প্রয়োজন নাইট্রোজেন ও কার্বন। এখন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সরাসরি ‘ইউরিন’ (মূত্র)-এ উপস্থিত ইউরিয়া থেকেই নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে ইস্ট। আবার নভশ্চরদের শ্বাস-প্রশ্বাসে ছাড়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে কার্বন পেয়ে যাবে ইস্ট। তা ছাড়া, মঙ্গলের হাওয়া-বাতাসেও কার্বন-ডাই-অক্সাইড আছে। তবে সে ক্ষেত্রে এক জন ‘মধ্যস্থতাকারী’ প্রয়োজন, যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে কার্বন গ্রহণে সাহায্য করবে ইস্টকে। সেটি হল মহাকাশযাত্রীদের সঙ্গে থাকা সালোক সংশ্লেষকারী সায়ানোব্যাকটেরিয়া বা শৈবাল।

এক ধরনের ইস্ট আবার ‘ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড’ তৈরি করে। এটি হৃদযন্ত্র, চোখ ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল। আর এক ধরনের ইস্ট আবার পলিয়েস্টার পলিমার তৈরি করে। এই পলিমার ব্যবহার করেই মহাকাশচারীরা থ্রিডি-প্রিন্টারের সাহায্যে প্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের যন্ত্রাংশ তৈরি করে নিতে পারবেন।

তবে সবটাই এখনও পরীক্ষা-সাপেক্ষ। যেমন, ইস্টের সাহায্যে পলিমার তৈরি করা গেলেও তার পরিমাণ খুবই কম। সেই খামতিটা কমাতে এখন জোরদার গবেষণা চলছে পরীক্ষাগারে। মঙ্গলে যাতে কোনও অমঙ্গল না হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy