সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত, চাঁদের মাটিতে আর্মস্ট্রং।
চাঁদের মাটিতে পা রেখে বদলে দিয়েছিলেন মানব ইতিহাস। সেই ইতিহাসের স্রষ্টা মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রংয়ের স্পেসস্যুটই কিনা নাসার হাতছাড়া! আর এর জন্য দায়ী নাকি তাদেরই গা ছাড়া মনোভাব। দাবি সংস্থার অফিস ইন্সপেক্টর জেনারেলের দফতরের।
সম্প্রতি নীল আর্মস্ট্রংয়ের একটি স্পেসস্যুট নিলামে তুলেছে টেক্সাসের ‘হেরিটেজ অকশন’ সংস্থা। তাদের দাবি, মহাকাশচারী হিসাবে যাত্রা শুরুর সময়, প্রথম দিকে ওই স্যুটটিই গায়ে চড়াতেন আর্মস্ট্রং। এতদিন তাঁর পরিবারের দখলে ছিল সেটি। যা তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। অনলাইন নিলামে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত স্যুটটির দাম উঠেছে ১১ হাজার ডলার পর্যন্ত। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৮ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কোথায় সেটি বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে তা জানতই না নাসা।
শুধুমাত্র আর্মস্ট্রংয়ের স্পেসস্যুটই নয়, গত কয়েক বছরে নাসা একাধিক ঐতিহাসিক এবং মূল্যবান জিনিস হারিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাদের অফিস ইন্সপেক্টর জেনারেলের দফতর জানিয়েছে, ‘‘গত কয়েক দশক ধরে চেষ্টা সত্ত্বেও বেশ কিছু জিনিস হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে নাসার। যেগুলির অসীম ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। কিছু জিনিস হারিয়ে গিয়েছে। যথাস্থানে মিলছে না অনেক কিছু। কিছু আবার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন কর্মীরা। সংস্থার তরফে সময় মতো পদক্ষেপ না করায় ঠিকাদারদের হাতেও গিয়ে পৌঁছেছে অনেক জিনিস।’’\
আমস্ট্রংয়ের এই স্পেসস্যুটটি নিলামে উঠেছে।
আরও পড়ুন: কেন মহাকাশ স্টেশনে ভারতীয় পাঠাতে পারেনি ইসরো? প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের
হারিয়ে গিয়েছে, একটি চার চাকার ল্যুনার রোভার। চাঁদের মাটিতে এই ধরনের যান ব্যবহার করা হয়। দুই মহাকাশচারীকে বহন করতে সক্ষম এই যানের মাধ্যমে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২০০৪ সালে অ্যালাবামার ব্লাউন্টসভিলের জনবহুল এলাকায় ওই রকম একটি ল্যুনার রোভার খুঁজে পান এক ব্যক্তি। নাসার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। যানটি ফিরিয়ে দিতে চান। কিন্তু চার মাস কেটে গেলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নাসা। যার পর ওই ব্যক্তি রোভারটিকে কিলোদরে বেচে দেন। তখন টনক নড়ে নাসা কর্তৃপক্ষের। সেটি কেনার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু যে ব্যবসায়ীকে রোভারটি বেচেছিলেন ওই ব্যক্তি, তিনি জিনিসটির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই নাসাকে না দিয়ে রোভারটিকে নিলামে মোটা অঙ্কের টাকায় বেচে দেন।
১৯৬৯ সালে ‘অ্যাপলো ১১’-এ প্রথম চাঁদের মাটিতে পা রাখেন দুই মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং এবং এডুইন অলড্রিন। একটি ব্যাগে চাঁদের মাটি এবং পাথর ভরে এনেছিলেন তাঁরা। সেই ব্যাগটিও হারিয়ে ফেলে নাসা। ২০১৩ সালে সেটির খোঁজ মেলে। ২০১২ সালে মাত্র ৯৯৫ ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫ হাজার টাকার বিনিময়ে এক ব্যক্তিকে ওই ব্যাগটি বিক্রি করে দেয় মার্কিন মার্শাল বিভাগ। বিনা অনুমতিতে ব্যাগটি বিক্রি করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে নাসা। কিন্তু পরাজিত হয়। ২০১৭ সালের জুালাই মাসে নিলামে ওঠে ব্যাগটি। সেবার ১৮ লক্ষ মার্কিন ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ১৩ কোটি ৩১ লক্ষ টাকায় বিকোয় সেটি।
মহাকাশে ব্যবহারের জন্য বিশেষ ‘ওমেগা স্পিডমাস্টার প্রফেশনাল’ হাতঘড়ি বেছে নিয়েছিল নাসা। স্পেস শাটল মিশনের সময় ব্যবহার করা হয় সেটি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আচমকাই সেটি লন্ডনে নিলামে উঠছে বলে খবর মেলে। তবে সময় থাকতে খবর পেলেও কিছু করে উঠতে পারেনি নাসা। কারণ ওই ঘড়িটিকে মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিনা তাই নাকি মনে করতে পারেনি তারা। পরে একটি প্রদর্শনীতে ঘড়িটিকে রাখতে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয় মার্কিন সরকারকে।
কী কী জিনিস নিলামে উঠছে ফেসবুকে তার ভিডিয়ো পোস্ট করেছে ‘হেরিটেজ অকশন’ সংস্থা
আরও পড়ুন: এ বার মহাকাশেই জন্ম নেবে শিশু!
১৯৮৫ সালে ‘অ্যাপলো ১’ মহাকাশযান থেকে ৩টি হ্যান্ড কন্ট্রোলার ফেলে দিতে নির্দেশ দেন নাসার এক সুপারভাইজার। যার মধ্যে ভিডিও গেম জয়স্টিকও ছিল। তবে না ফেলে সেগুলিকে বাড়ি নিয়ে যান এক কর্মী। কয়েক বছর পর চড়া দামে বিক্রি করেন। তখন টনক নড়ে নাসার। ‘স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়াম’-এ সেগুলিকে রাখতে চেয়ে আর্জি জানায়। তবে টানা তিন বছর অনুরোধ জানিয়েও লাভ হয়নি। তাই শেষমেষ হাল ছেড়ে দেয় নাসা।
এতগুলি মূল্যবান জিনিস হাতছাড়া হওয়ায় এখন নড়েচড়ে বসেছে মার্কিন সরকার। শুরু হয়েছে তদন্ত। সংস্থার কর্মীদের একদফা জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তবে সকলেই নাকি দায় এড়িয়ে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy