মঙ্গলে খোঁড়াখুঁড়ির ‘মহাযজ্ঞে’ নামছে নাসা। আটাকামা মরুভূমিতে।
আর শুধুই গড়িয়ে চলা নয়। শুধুই আঁচড় কাটা নয়। প্রাণের হদিশ পাওয়ার আশায় এ বার আমাদের প্রতিবেশী ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করতে চলেছে নাসা। মঙ্গলের পিঠে সেই খোঁড়াখুঁড়ি করা হবে অন্তত এক থেকে দেড় ফুট গভীরতা পর্যন্ত।
এখনও মঙ্গলে অণুজীব রয়েছে কি না, থাকলে তা রয়েছে লাল গ্রহের মাটির কতটা গভীরে, সেই জীব কি অক্সিজেন বা কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপর নির্ভর করেই বাঁচে নাকি তাদের ভরসা করতে হয় মিথেন বা ইথেনের মতো কোনও হাইড্রোকার্বনের উপর, তা জানতে, বুঝতেই এই খোঁড়াখুঁড়ি। নাসার একটি সূত্র ‘আনন্দবাজার’কে এই খবর দিয়েছে।
নাসার ‘অ্যারাড্স’ প্রকল্প
সূত্রটি জানিয়েছে, মঙ্গলে সেই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করার আগে পৃথিবীতে সেই প্রযুক্তির একটা পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিতে চায় নাসা। তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে চিলির বিখ্যাত আটাকামা মরুভূমিকে। কারণ, আটাকামা মরুভূমির ভূত্বকের অনেকটাই মঙ্গলের রুখুসুখু পিঠের মতো। আটাকামায় সেই পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হচ্ছে এই সেপ্টেম্বরেই। আগামী সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে।
মঙ্গলে প্রাণের খোঁজে ওই পরীক্ষানিরীক্ষার প্রকল্পের নাম- ‘দ্য আটাকামা রোভার অ্যাস্ট্রোবায়োলজি ড্রিলিং স্টাডিজ’ (এআরএডিএস বা ‘অ্যারাড্স’)। মঙ্গল খোঁড়ার সেই প্রকল্পে নাসা প্রযুক্তিগত সহায়তা নিচ্ছে যে সংস্থার তার নাম- ‘হানিবি রোবোটিক্স’।
নাসার ‘এমস রিসার্চ সেন্টার’ থেকে রওনা হল মঙ্গলে খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্র
মঙ্গলে পাঠানো রোভারের মধ্যেই রাখা থাকবে খোঁড়াখুঁড়ির যাবতীয় সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি। যা খোঁড়াখুঁড়িতে তো কাজে লাগবেই। লাল গ্রহের মাটি খুঁড়ে যা যা পাওয়া গেল, সেগুলি পরীক্ষা করেও দেখতে পারবে। সেই সব পরীক্ষা করেই জানাতে পারবে, মঙ্গলের অন্তরে, অন্দরে এখনও অণুজীবের অস্তিত্ব রয়েছে কি না। থাকলে সেই অণুজীব কি একেবারে পৃথিবীর মতোই? নাকি অন্য ধরনের, অভিনব?
ট্রায়াল শুরু সেপ্টেম্বরেই
ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে নাসার এমস রিসার্চ সেন্টারে ‘অ্যারাডস’ প্রকল্পের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ব্রায়ান গ্রাস ‘আনন্দবাজার’-এর পাঠানো প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘‘মঙ্গলে প্রাণের খোঁজে খোঁড়াখুঁড়ি শুরুর চূড়ান্ত ট্রায়ালটা হচ্ছে চিলির আটাকামা মরুভূমিতেই। ‘মার্স-২০২০’ রোভারের পর আর যে যে রোভার পাঠানো হবে মঙ্গলে, খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রগুলি তাদের সঙ্গে পাঠানোর কথা ভাবা হয়েছে। তার জন্য যন্ত্রগুলিকে কতটা নিখুঁত করে তোলা দরকার, সেই জরুরি পরীক্ষাটাই করা হবে আটাকামা মরুভূমিতে। সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হল, সেই পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগটা আমরা পাচ্ছি পৃথিবীতেই।’’
আরও পড়ুন- বায়ুমণ্ডল ফুঁড়ে বেরোচ্ছে জলের ধোঁয়া! রয়েছে প্রাণ?
আরও পড়ুন- মিলে গেল বাঙালির পূর্বাভাস, ভিন মুলুকের বার্তা নিয়ে সৌরমণ্ডলে ঢুকল ‘পাগলা ঘোড়া’!
খোঁড়াখুঁড়ি চাঁদেও, সেটাই যে ল্যাবরেটরি!
পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) বিজ্ঞানী, ‘ইউরোপা মিশন’-এর সদস্য গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, চাঁদে আবার মানুষ পাঠানোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে নাসা। সেই প্রকল্পের নাম ‘আর্টেমিস’। ২০২৪/’২৫ সালের মধ্যেই ফের চাঁদের বুকে হবে সভ্যতার পদার্পণ।
রুখুসুখু ‘মঙ্গল’ চিলির আটাকামা মরুভূমি
গৌতমের কথায়, ‘‘কিন্তু চাঁদে তো আর পাকাপাকি ভাবে থাকার ভাবনা নিয়ে মানুষ পাঠানো হচ্ছে না। নাসার আদত ভাবনাটা মঙ্গল নিয়েই। সেই মঙ্গলের সঙ্গে যেহেতু পরিবেশ, গঠনের নিরিখে অনেকটাই মিল চাঁদের, তাই মঙ্গলে সভ্যতার ‘দ্বিতীয় উপনিবেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্য পূরণের অন্তরায় কী কী হতে পারে আর সেই বাধাগুলিকে কী ভাবে অতিক্রম করা যেতে পারে, মহাজাগতিক বস্তুগুলির মধ্যে আমাদের সবচেয়ে কাছে রয়েছে বলে চাঁদই সেই পরীক্ষানিরীক্ষাটা করার আদর্শ জায়গা। তাই ওই সব যন্ত্রপাতি দিয়ে চাঁদে খোঁড়াখুঁড়ি করে একটা ধাপ পরীক্ষানিরীক্ষা করে নেওয়া হবে।’’
বিভিন্ন সময়ের তথ্যাদি থেকে জানা গিয়েছে, কয়েকশো কোটি বছর আগে জলের বিশাল বিশাল মহাসাগর ছিল লাল গ্রহে। ছিল বেশ পুরু বায়ুমণ্ডলও। ফলে, সেই সময় মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল বলেই জোরালো বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।
কে বলবে ‘মঙ্গল’ নয়? চিলির আটাকামা মরুভূমি
গৌতম বলছেন, ‘‘অথচ আজ সেই মঙ্গলই ভীষণ রুখুসুখু। তার পিঠ খটখটে শুকনো। পৃথিবীর আটাকামা মরুভূমির যে অংশে সামান্য পরিমাণে জল রয়েছে, তার এক হাজার ভাগের এক ভাগ জলও এখন লাল গ্রহে নেই।’’
মঙ্গলের ঠান্ডায় অবশ হবে না তো খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রপাতি?
গ্লাস জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরেই আটাকামা মরুভূমির সেই ‘সবুজ’ অংশে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখার চেষ্টা করেছেন সেখানকার মরুভূমির নীচে কী ধরনের অণুজীব রয়েছে, তারা কী ভাবে বেঁচে রয়েছে। তাদের জীবনচক্রটা কেমন, তা-ও বোঝার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয়, মঙ্গলের তাপমাত্রাও পৃথিবীর চেয়ে অনেক ঠান্ডা। রাতে আরও ঠান্ডা। হাড়জমানোই বলা যায়।
‘‘সেই কনকনে ঠান্ডায় খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রপাতিগুলি ঠিকঠাক ভাবে কাজ করবে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হবে আটাকামা মরুভূমিতে। সে জন্য সেখানে বানানো হয়েছে একটি গবেষণাগার, যেখানে কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে মঙ্গলের পরিবেশ। তাপমাত্রাও’’, বলছেন গ্লাস।
ছবি সৌজন্যে: নাসা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy