Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
nasa

মঙ্গলের খাড়াই পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়বে না তো রোভার? গভীর উদ্বেগে বেঙ্গালুরুর স্বাতী

সাত মিনিটেই যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিছুই করার থাকবে না স্বাতীর।

আর ৯ দিন। যে ভাবে মঙ্গলে নামবে নাসার রোভার। ইনসেটে, বিজ্ঞানী স্বাতী মোহন। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

আর ৯ দিন। যে ভাবে মঙ্গলে নামবে নাসার রোভার। ইনসেটে, বিজ্ঞানী স্বাতী মোহন। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:০০
Share: Save:

‘‘মঙ্গলের খাড়াই পাহাড়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়বে না তো নাসার রোভার? আটকে যাবে না তো খুব উঁচু উঁচু পাহাড়গুলির খাঁজে? যার জন্য ২৭০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে, সেই স্বপ্নটা ভেঙে যাবে না তো চুরচুর করে?’’

সুদূর পাসাডেনা থেকেও ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-এর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কলে উত্তেজনায় স্পষ্টই থর থর করে কাঁপতে শোনা গেল স্বাতীর কণ্ঠস্বর। বেঙ্গালুরুর কন্যা স্বাতী মোহন এখন নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি (জেপিএল)-তে মঙ্গলে পাঠানো সর্বাধুনিক রোভার ‘পারসিভের‌্যান্স’-এর গাইডেন্স, নেভিগেশন ও কন্ট্রোলস অপারেশন্স (জিএনঅ্যান্ডসি)-এর প্রধান। স্বাতীর কথায়, ‘‘গাইডেন্স, নেভিগেশন আর কন্ট্রোলই যে কোনও মহাকাশযানের চোখ ও কান।’’

গত ৩০ জুলাই লাল গ্রহের উদ্দেশে পাড়ি জমানোর পর থেকেই মহাকাশে কোন পথ ধরে এগিয়ে যাবে নাসার মহাকাশযান, কোন পথ তুলনায় বেশি নিরাপদ, কম জটিল, লাগবে কিছুটা কম সময় সেই পথ বেছে রোভারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব ছিল স্বাতীরই কাঁধে। সাড়ে ৬ মাসে সেই গাইডেন্স আর নেভিগেশনের কাজে সফল বলেই নিরাপদে লাল গ্রহের দূরের কক্ষপথে ঢুকে যেতে পেরেছে নাসার মহাকাশযান।

ক’দিন পরেই অগ্নিপরীক্ষা স্বাতীর

আর ৯ দিনের মাথায় (১৮ ফেব্রুয়ারি) এ বার ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিতে হবে স্বাতীকে। বলছিলেন, ‘‘এখন থেকেই অসম্ভব টেনশনে আছি। ওই ভয়ঙ্কর সাত মিনিটের টেনশন। যাকে বলা হয়, ‘সেভেন মিনিটস অব টেরর’। এন্ট্রি, ডিসেন্ট আর ল্যান্ডিং। মঙ্গলের একেবারে ভিতরের কক্ষপথে ঢুকে পড়া (এন্ট্রি), ধীরে ধীরে লাল গ্রহের অভিকর্ষ বল যাতে আছড়ে ফেলতে না পারে তার জন্য মহাকাশযানের গতিবেগ কমিয়ে আনা (ডিসেন্ট) আর সবার শেষে নিরাপদে মঙ্গলের বুকে পা ছোঁয়ানো।’’

ওই সাত মিনিটেই যে কোনও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে কিছুই করার থাকবে না স্বাতী অথবা জেপিএল-এ তাঁর সহকর্মীদের। কারণ, সূদুর মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে সেই দুর্ঘটনার খবর এসে পৌঁছতেই সময় লাগবে কম করে ১১ মিনিট।

কেন দুর্ঘটনায় পড়তে পারে নাসার রোভার পারসিভের‌্যান্স?

স্বাতী জানালেন, মঙ্গলে যেখানে নামার কথা পারসিভের‌্যান্স-এর, সেই জায়গাটার নাম ‘জেজোরো ক্রেটার’। কোটি কোটি বছর আগে কোনও সুবিশাল আগ্নেয়গিরির জন্য ওই দৈত্যাকার গর্তটি (ক্রেটার) তৈরি হয়েছিল। এলাকাটা ২৮ মাইল জুড়ে। কিন্তু গোটা এলাকাটি ভর্তি খুব উঁচু উঁচু পাহাড়ে। সমতল সেখানে খুবই কম। ৩০০ কি ৪০০ মিটার অন্তর সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। তাই নামার আগে থেকে খুব নিখুঁত ভাবে জায়গাটাকে চিনতে বুঝতে না পারলে যে কোনও মুহূর্তে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে যেতে পারে চুরচুর করে। সুউচ্চ পাহাড়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়তে পারে নাসার ল্যান্ডার ও রোভার। এমনকি তা পাহাড়ের খাঁজে আটকেও অকেজো হয়ে যেতে পারে চিরতরে।

রোভার ‘পারসিভের‌্যান্স’। ছবি সৌজন্যে: নাসা।

রোভার ‘পারসিভের‌্যান্স’। ছবি সৌজন্যে: নাসা।

স্বাতীকে নাসা এ বার যে গুরুদায়িত্বগুলি দিয়েছে, তার অন্যতম- নিরাপদে পারসিভের‌্যান্সকে লাল গ্রহের জেজোরো ক্রেটারে নামানো। তাই এখন প্রচণ্ড টেনশনে স্বাতী।

রোভারের নিরাপদ অবতরণের জন্য স্বাতী কী করেছেন?

বেঙ্গালুরুর কন্যা বললেন, ‘‘আমরা একটি বিশেষ ধরনের ল্যান্ডার ভিশন সিস্টেম (এলভিএস) বানিয়েছি। যখনই মহাকাশযান থেকে প্যারাসুট খুলে গিয়ে মঙ্গলের মাটির দিকে নামতে শুরু করবে ল্যান্ডার ও রোভার, তখনই চালু হয়ে যাবে এলভিএস। এটা আসলে ল্যান্ডারের ‘চোখ’। এত দিন এই কাজটা করা হত মহাকাশযানে থাকা র‌্যাডারের মাধ্যমে। সেটা শুধু বলে দিত, কোন এলাকায় নামা যেতে পারে। কিন্তু এ বার আমরা যে ‘চোখ’ (এলভিএস) বানিয়েছি তা আগে থেকে জানিয়ে দেবে নামার জন্য যে যে এলাকা বাছা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ কোনটি। এও জানিয়ে দেবে, তার ২০০ মিটারের মধ্যে কোনও বড় পাথর বা সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আছে কি না। এই পদ্ধতির ভিতটা যে প্রযুক্তির, তার নাম ‘টেরেন-রিলেটিভ নেভিগেশন (টিআরএন)’।’’

বেঙ্গালুরু থেকে মঙ্গলে…

বেঙ্গালুরুতে জন্মের এক বছর পরেই মা, বাবার সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন স্বাতী। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে। ১৯৮৬-তে। তার পর বেড়ে ওঠা, পড়াশোনার পুরোটাই আমেরিকায়। বড় হয়েছেন উত্তর ভার্জিনিয়া ও ওয়াশিংটন ডিসি-তে। মেকানিক্যাল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বি এস) করার পর স্বাতী অ্যারোনটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনটিক্সে মার্স্টার্স অব সায়েন্স (এম এস) করেন ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে। সেখান থেকেই পিএইচ ডি।

এর আগে শনিতে পাঠানো নাসার মহাকাশযান ‘ক্যাসিনি’ এবং চাঁদে পাঠানো যান ‘গ্রেল’-এর অভিযানেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন স্বাতী।

শিশু চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে মঙ্গলে

স্বাতী জানালেন, বাবা চিকিৎসক বলেই ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন শিশু চিকিৎসক হওয়ার। ১৬ বছর বয়সে ‘স্টার ট্রেক’ দেখার পর থেক‌েই সেই স্বপ্নটা বদলে যায়। তখন থেকেই ব্রহ্মাণ্ড তাঁকে ভীষণ ভাবে টানতে শুরু করে।

‘‘তিন থেকে পাঁচ বছর অন্তর ভারতে যাই। বেঙ্গালুরুতে আমাদের এখনও একটা বাড়ি আছে। মা, বাবা প্রতি বছরই সেখানে গিয়ে কয়েকটা মাস কাটিয়ে আসেন। আমার মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও শিশু চিকিৎসক স্বামী সন্তোষেরও বাড়ি বেঙ্গালুরুতেই’’, বললেন দুই কন্যাসন্তানের জননী স্বাতী।

অন্য বিষয়গুলি:

nasa mars Mars Rover JET PROPULSION LABORATORY
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy