দেশবিদেশের কুড়িটি কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে রওনা হল পিএসএলভি সি-৩৪। বুধবার শ্রীহরিকোটা থেকে। ছবি: পিটিআই।
এ যেন নিজের গাড়ি ‘শাটল’ হিসেবে খাটানো! তাতে নিজেও গন্তব্যে যাওয়া যায়। আবার যাত্রী তুলে দু’পয়সা আয়ও হয়।
পথেঘাটে ক’জন গাড়ি মালিক ঠিক এমন কায়দা বেছে নেন, তা বলা মুস্কিল। কিন্তু মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে রকেটে এমন ভাবেই ‘যাত্রী’ তোলাটা ভাল রকমই রপ্ত করে নিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইসরো নিজের ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট’ উপগ্রহের সঙ্গে ছ’টি বিদেশি
উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছিল।
বুধবার কার্টোস্যাট-২ নামে ভারতে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর সময় আরও ১৯ সহযাত্রীকে রকেটে চাপিয়েছিল তারা।
ইসরোর মুখপাত্র বি আর গুরুপ্রসাদ জানান, এ দিন সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ২০টি কৃত্রিম উপগ্রহ-সহ রকেটটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণের সা়ড়ে ২৬ মিনিটের মধ্যে সব ক’টি উপগ্রহকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। উৎক্ষেপণ সফল হওয়ার পর ইসরোর চেয়ারম্যান আলুরু সুলিন কিরণ কুমারের মন্তব্য, ‘‘সব ক’টি পাখিকে মহাকাশে উড়িয়ে দিলাম আমরা।’’
কার্টোস্যাট-২ উপগ্রহটি পুরো কাজ শুরু করলে ভারতের মানচিত্র ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এর ওজন ৭২৫.৫ কিলোগ্রাম। কিন্তু পিএসএলভি-৩৪ রকেটটি বইতে পারে এর চেয়ে ঢের বেশি ওজন। তাই শুধু কার্টোস্যাট-২ পাঠানোর জন্য একে ব্যবহার করতে চাননি ইসরো কর্তারা। আমেরিকার ১৩টি, কানা়ডার ২টি, জার্মানি ও ইন্দোনেশিয়ার ১টি করে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর পাশাপাশি চেন্নাইয়ের সত্যভামা বিশ্ববিদ্যালয় ও পুণের কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৈরি দু’টি খুদে উপগ্রহকেও রকেটে তুলে নিয়েছিল তারা। সব মিলিয়ে মোট ওজন দাঁড়ায় ১,২৮৮ কিলোগ্রাম। এর মধ্যে রয়েছে গুগলের একটি উপগ্রহও।
ইসরো সূত্রের খবর, একসঙ্গে এতগুলি উপগ্রহ কখনও উৎক্ষেপণ করেনি তারা। ২০০৮ সালে এক বারে ১০টি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। তবে বিশ্বের নিরিখে এ ব্যাপারে প্রথম স্থানে রয়েছে রাশিয়া। ২০১৪ সালে একসঙ্গে ৩৭টি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়েছিল তারা। ২০১৩ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা একবারে ২৯টি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠিয়েছিল।
এ দিনের সাফল্যের পরেই টুইটারে ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, ‘‘এক বারে ২০টি উপগ্রহ! ইসরো একের পর এক বাধা টপকাচ্ছে।’’
বিদেশের কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো অবশ্য ইসরোর কাছে নতুন কিছু নয়। এ সবের জন্য ‘অ্যানট্রিক্স’ নামে ইসরোর বাণিজ্যিক শাখাও রয়েছে। ইসরোর এক কর্তার ব্যাখ্যা, ছোট মাপের উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য রকেট পাঠানো অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক নয়। সে কারণেই ভিন্ দেশের উৎক্ষেপণের সময় সহযাত্রী হওয়ার কথা ভাবা হয়। যেহেতু ভারত অনেক কম খরচে উৎক্ষেপণ করতে পারে, তাই শিল্পোন্নত দেশগুলিও উৎক্ষেপণের বরাত ভারতকেই দেয়। এই দেশগুলির উপগ্রহ পাঠিয়ে ভারতেরও বিদেশি মুদ্রা লাভ হয়।
ইসরোর এই দক্ষতা নিয়েও টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন ‘‘আমরা বহু বছর ধরে অন্য দেশের মহাকাশ অভিযানে সাহায্য করার দক্ষতা তৈরি করেছি। এই কৃতিত্ব আমাদের বিজ্ঞানীদের।’’
ইসরো কর্তারা বলছেন, শুধু ব্যবসা নয়, এ দিন কার্টোস্যাট-২ নামে যে উপগ্রহটি পাঠানো হয়েছে, তার উপকার পাবে দেশবাসী। এই উপগ্রহে বসানো উন্নত মানের সাদা-কালো এবং রঙিন ক্যামেরা যে সব ছবি পাঠাবে তা দেশের মানচিত্র তৈরি, শহর ও গ্রামাঞ্চলে পরিকল্পনার কাজ, উপকূলের এলাকা উন্নয়নে এবং দেশের ভৌগোলিক পট পরিবর্তনের গবেষণায় কাজে লাগবে। যা নিয়ে টুইটারে মোদীর মন্তব্য, ‘‘আমাদের মহাকাশ কর্মসূচি বারবারই দেখিয়ে দিয়েছে, জনজীবনে বদল আনতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা কতটা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy