রবীশ মলহোত্র ও রাকেশ শর্মা (বাঁ দিক থেকে)। ১৯৮৪-তে
ভারতের মাটি ছেড়ে চন্দ্রযান-২ যখন মহাশূন্যে পাড়ি দেবে, তখন তিনি বহু দূরে আমেরিকায়। কিন্তু রবিবার সকালে ফোনের ও-পারে থাকা কণ্ঠস্বরে দেশের প্রতি আবেগ অটুট রবীশ মলহোত্রের। বললেন, মনেপ্রাণে চাই, এই অভিযান সফল হোক। মহাকাশ গবেষণায় আরও উন্নতি করুক ভারত। এটাই কামনা করি।
৩৫ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ অভিযানের জন্য যে দু’জন ভারতীয় নির্বাচিত হয়েছিলেন, প্রাক্তন এই বায়ুসেনা আধিকারিক তাঁদের অন্যতম। সব প্রস্তুতি সারার পরেও শেষমেশ মহাকাশে পাড়ি দিতে পারেননি তিনি। ব্যাক-আপ টিমের সদস্য হিসেবে রয়ে গিয়েছিলেন। অধিকাংশ ভারতীয়ের স্মৃতি থেকেই কার্যত হারিয়েগিয়েছেন তিনি। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-রও কি মনে আছে? এ পর্যন্ত কোনও উৎক্ষেপণের সময়েই ইসরোর আমন্ত্রণ পাননি তিনি।
রবীশ তো দূর অস্ত্! প্রথম ভারতীয় হিসেবে সয়ুজ টি-১১-তে চেপে মহাকাশে পাড়ি দেওয়া রাকেশ শর্মাকেও কি মনে রেখেছে ইসরো? চন্দ্রযান-২ অভিযানের উৎক্ষেপণে ডাক পাননি তিনি। রবিবার রাতে তিনি বেঙ্গালুরুতেই থাকবেন। মঙ্গলযান অভিযানের উৎক্ষেপণ বা মঙ্গলের কক্ষপথে মঙ্গলযানের প্রবেশের অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা যায়নি। বস্তুত, প্রাক্তন বায়ুসেনা আধিকারিক রাকেশ এ নিয়ে তেমন কথাও বলতে চান না।
সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে ফোন করা হলে শুধু বলেছিলেন, “চন্দ্রযান তো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প। আমি ওই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নই। তাই কিছু বলতে চাই না।” এই মহাকাশ অভিযান নিয়ে দেশের মন্ত্রী-আমলারা নানান মন্তব্য করছেন। তিনি তো সোভিয়েত প্রকল্পে ‘রিসার্চ কসমোনট’ হিসেবে গিয়েছিলেন! তা-ও কিছু বলবেন না? প্রশ্ন শুনে সত্তর বছরের প্রাক্তন নভশ্চর শুধু বলেছিলেন, “না। বলব না।”
এই মন্তব্যে কোথাও যেন আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল। হাজার পীড়াপীড়িতে পুরনো দিনের স্মৃতিচারণেও নারাজ তিনি।
সুনীতা উইলিয়ামসের সঙ্গে রাকেশ শর্মা। ফাইল চিত্র
অনেকেই বলছেন, বিদেশ হলে প্রাক্তন নভশ্চরেরা যে সম্মান পান, এখানে সরকারি তরফে তার কিছুই মেলে না। রাকেশদের অভিযানের পরে সোভিয়েত রাশিয়া রাকেশকে ‘হিরো অব দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’ খেতাব দিয়েছিল। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার অশোক চক্র দিয়ে সম্মান জানিয়েছিল। রবীশ পেয়েছিলেন কীর্তি চক্র। কিন্তু সম্প্রতি মঙ্গলযানের মতো বড় মাপের অনুষ্ঠানে তাঁদের দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে ইসরোর মুখপাত্রেরাও সে ভাবে মুখ খুলতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, আমন্ত্রিত তালিকা তো মহাকাশ মন্ত্রক এবং শীর্ষকর্তারা ঠিক করেন। পরবর্তী কালে নিশ্চয় কোনও অনুষ্ঠানে ডাকা হতে পারে। আমরা তো গগনযান প্রকল্পে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।
রাকেশের থেকে পাঁচ বছরের বড় রবীশ তুলনায় বেশি খোলামেলা। ব্যক্তিগত কাজে আমেরিকা গিয়েছেন। অপরিচিত সাংবাদিকের এসএমএস পেয়ে নিজেই যোগাযোগ করলেন। নানান কথার ফাঁকে উঠে এল তাঁদের কৃতিত্বের কথা। রুশ মহাকাশ অভিযানে সামিল হওয়া, ভারতকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরা। এক সময় তো লোকের মুখে মুখে ফিরত তাঁদের কথা। এখন কি সে সব মনে পড়ে না?
ফোনের ও-পার থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসে। কোনও উত্তর মিলল না। প্রসঙ্গ পাল্টে চলে গেলেন গগনযানের ব্যাপারে। ২০২২ সালে ওই প্রকল্পেই ভারতীয় নভশ্চরেরা মহাকাশে পাড়ি দেবেন। ইসরোর সঙ্গে যুক্ত না-থাকলেও গগনযান প্রকল্পের খুঁটিনাটি খবর রাখেন রবীশ রাখেন। বললেন, গগনযান প্রকল্প এখন একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে তাঁর আশা, “গগনযান প্রকল্পের সময় হয় তো আমাকে বা রাকেশকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যোগ দিতে বলা হতে পারে।”
হয় তো!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy