মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা-বৃদ্ধির নিরিখে সভ্যতার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল ২০২০ সাল। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০১৯। -ফাইল ছবি।
সাড়ে ছয় দশকে রেকর্ড গড়ে ফেলল পৃথিবীর মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা।
উষ্ণায়ন ও দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে। গত বছর মহাসাগরগুলির সেই তাপমাত্রা-বৃদ্ধি সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে ফেলেছে।
মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা-বৃদ্ধির নিরিখে সভ্যতার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল ২০২০ সাল। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০১৯। বস্তুত গত ৬ বছর ধরেই মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা-বৃদ্ধি তার আগের বছরকে টপকে গিয়েছে।
আমেরিকার কলোরাডোয় ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমস্ফেরিক রিসার্চ’-এর সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক আবহবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যাডভান্সেস ইন অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্সেস’-এ।
গবেষণাটি চালানো হয়েছে মহাসাগরগুলির একেবারে উপরিতলের ২ হাজার মিটার এলাকার তাপমাত্রা নিয়ে। ১৯৫৫ সাল থেকেই এই তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা হচ্ছে। তাতে দেখা গিয়েছে, মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ২০২১ সালে। প্রশান্ত মহাসাগরের জল পর্যায়ক্রমে ঠান্ডা হওয়ার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ‘লা নিনা’ সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও।
গবেষণা জানিয়েছে, মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা ২০১৭ সালে ছিল ১৮৯ জেটাজুল্স। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৫ জেটাজুল্স। ২০১৯ এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছিল যথাক্রমে ২১০ এবং ২১১ জেটাজুল্স। আর গত বছরে তা বেড়ে হয়েছে ২২৭ জেটাজুল্স। (মহাসাগরগুলির তাপমাত্রা-বৃদ্ধির ফলে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় তা মাপার একক— ‘জুল্স’। একের পিঠে ২১টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি হয়, তাকে এক জুল্স দিয়ে গুণ করলে হয় এক জেটাজুল্স)।
মহাসাগরগুলির এই উত্তরোত্তর তাপমাত্রা-বৃদ্ধির কী কী প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর, গবেষণাপত্রে সেই সবেরও উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণা জানিয়েছে, দশকের পর দশক ধরে তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে আটলান্টিক মহাসাগরের জলের। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক ভাবে বাড়তে শুরু করেছে নব্বইয়ের দশক থেকে। আর ভূমধ্যসাগরের জলের তাপমাত্রা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে গত বছর।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আশঙ্কাজনক হারে মহাসাগরগুলির জলের তাপমাত্রা-বৃদ্ধির ফলে ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, টাইফুন, টর্নেডোগুলি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বেড়েছে অতিবৃষ্টির পরিমাণ। তা আগের চেয়ে অনেক বেশি ঘনঘন হতে শুরু করেছে পৃথিবীর সব প্রান্তেই। তার ফলে প্রলয়ঙ্কর বন্যার আশঙ্কা বেড়েছে।
এ ছাড়াও মহাসাগরগুলির জলের উত্তরোত্তর তাপমাত্রা-বৃদ্ধি গ্রিনল্যান্ড ও আন্টার্কটিকার বরফের পুরু চাঙড়গুলিকে খুব দ্রুত হারে গলিয়ে দিতে শুরু করেছে। এই ভাবে বছরে গ্রিনল্যান্ড ও আন্টার্কটিকার এক লক্ষ কোটি টন বরফ গলে যাচ্ছে। যার পরিণতিতে মহাসাগরগুলির জল-স্তর আশঙ্কাজনক ভাবে উপরে উঠে আসছে।
সভ্যতার নানা কর্মকাণ্ডে বাতাসে যে পরিমাণে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস মিশছে, তার এক-তৃতীয়াংশই মহাসাগরগুলি শুষে নিচ্ছে। তার ফলে, মহাসাগরগুলির জল আরও বেশি পরিমাণে লবণাক্ত হয়ে উঠছে। যার পরিণতিতে এক-চতুর্থাংশ সামুদ্রিক প্রাণীর বাসস্থান যেখানে সাগর, মহাসাগরের সেই প্রবাল প্রাচীরগুলি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির মাছের মৃত্যু হচ্ছে। এ ছাড়াও জীবাশ্ম-জ্বালানি পোড়ানো, বন কেটে বসত বানানোর উৎসাহে পরিবেশে যে বাড়তি তাপশক্তি নির্গত হয়েছে গত ৫০ বছরে তার ৯০ শতাংশই শুষে নিয়েছে সাগর, মহাসাগরগুলি।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শুধু গত বছরেই মহাসাগরগুলির উপরিতলের ২ হাজার মিটার এলাকা তার আগের বছরের চেয়ে ১৪ জেটাজুল্স বাড়তি তাপশক্তি পরিবেশ থেকে শুষে নিয়েছে। যা বিশ্বে সারা বছরে মোট যে পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তির উৎপাদন, তার ১৪৫ গুণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy