Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Breast Cancer

অনুভূতি ফেরাবে কৃত্রিম বক্ষযুগল

কী ভাবে কৃত্রিম অঙ্গে স্বাভাবিক অনুভূতি ফিরিয়ে আনা যায়, তাই নিয়ে চলছে স্টেসি ও তার দলের লড়াই। তাতে শামিল হয়েছেন স্নায়ুবিজ্ঞানী, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারেরা এবং আরও অনেকে।

An image of breast cancer

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:৫৫
Share: Save:

স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পারার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লিডাকে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁকে ম্যাসটেকটমি করাতে হবে। অর্থাৎ অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হবে স্তন দু’টি। ম্যাসটেকটমির পরে লিডার ক্যানসার হয়তো সেরেছিল। কিন্তু আগের স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারেননি তিনি। স্বামীর সঙ্গে তৈরি হয়েছিল শারীরিক দূরত্ব। তিন বছরের সন্তানকে বুকে টেনে নিয়েও শূন্যতা অনুভব করতেন তিনি।

এমনই মেয়েদের কথা নাড়া দিয়েছিল শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্টেসি টেসলার লিন্ডাওকে। স্টেসি বলছিলেন, অস্ত্রোপচারের পরে দেহে নকল স্তন প্রতিস্থাপন করলেও তাতে কোনও স্নায়বিক উদ্দীপনা থাকে না। থাকে না কোনও অনুভূতি। দেহের সঙ্গে জোড়া কৃত্রিম অঙ্গের মতোই অতিরিক্ত মনে হয়। কিন্তু মেয়েদের জীবনে স্তন শুধুমাত্র তো একটি অঙ্গ নয়। তাঁর মতে, বক্ষযুগল মেয়েদের যৌনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশও। স্টেসি জানান, আমেরিকায় স্তন ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা মহিলাদের অন্তত এক তৃতীয়াংশের ম্যাসটেকটমি করে একটি বা দু’টি স্তন বাদ দিতে হয়। দেখা গিয়েছে, অস্ত্রোপচারের পরে ৭৭ শতাংশ মহিলার স্বাভাবিক যৌন জীবন ব্যাহত হয়েছে। মানসিক অবসাদে ভোগেন অনেকেই।

ফলে কী ভাবে কৃত্রিম অঙ্গে স্বাভাবিক অনুভূতি ফিরিয়ে আনা যায়, তাই নিয়ে চলছে স্টেসি ও তার দলের লড়াই। তাতে শামিল হয়েছেন স্নায়ুবিজ্ঞানী, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারেরা এবং আরও অনেকে। দীর্ঘ গবেষণার শেষে তৈরি করা হয়েছে ‘বায়োনিক স্তন’। কী ভাবে তা কাজ করবে? স্টেসি জানিয়েছেন, ম্যাসটেকটমির সময়ে এই বায়োনিক স্তন প্রতিস্থাপনের প্রথম পর্বের কাজ শুরু হবে। বাহুমূলের তলায় স্নায়ুকলার সঙ্গে যুক্ত করা হবে একটি যন্ত্রকে। দ্বিতীয় পর্বে, সি-এফআইএনই নামে ওই যন্ত্র অঙ্গে তৈরি হওয়া উদ্দীপনা বৈদ্যুতিন সঙ্কেত হিসাবে মস্তিষ্কে পাঠাবে। ফলে স্বাভাবিক অঙ্গের মতোই বায়োনিক স্তনেও অনুভব করা যাবে স্পর্শের অনুভূতি। তবে পুরোটাই এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অপেক্ষায়।

আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে গবেষণা শুরু করেছিলেন স্টেসিরা। সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ৩৯.৯ লক্ষ ডলার অনুদান ছে। ফলে ক্লিনিক্ল্যাল ট্রায়ালের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত হচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে এই গবেষণায় যার কথা না বললেই নয়, তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম স্নায়ুবিজ্ঞানী স্লিম্যান বেনসমাইয়া। এ বছর অগস্টে তিনি মারা গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রস্থেটিক বা কৃত্রিম অঙ্গে স্নায়বিক সাড়া ফেরানো যায় কি না, সে বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন স্লিম্যান। ২০১৬ সালে তাঁর সঙ্গে গবেষণায় যোগ দেন স্টেসি ও তাঁর দলবল। স্টেসি জানালেন, ওঁর গবেষণা ছিল যে কোনও কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে। আর আমারটা মূলত স্তন নিয়েই গবেষণা।

কথা হচ্ছিল কলকাতার ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি
বললেন, ‘‘আজকাল আমরা চেষ্টা করি যাতে পুরো স্তন বাদ দিতে না হয়। অনেক সময় স্তন পুনর্গঠন বা ম্যামোপ্লাস্টি করানো হয়। তবে সে ক্ষেত্রেও স্পর্শের অনুভূতি থাকে না। কিন্তু কৃত্রিম স্তনে যদি অনুভূতি ফেরানো যায় তবে এটি একটি যুগান্তকারী গবেষণা হবে। সেরে ওঠার পরে মহিলারা তাদের আগের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Breast Cancer Artificial Breasts University of Chicago Gynecology Research
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy