Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Quantum

চারটি কোয়ান্টাম মিশন হাব, থাকবেন কলকাতার বিজ্ঞানীরা

‘প্রথম কোয়ান্টাম বিপ্লব’, একশো বছর আগের কথা। ১৯২৪ সাল। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাঁর একটি গবেষণাপত্র বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে পাঠিয়েছিলেন।

An image of quantum

—প্রতীকী চিত্র।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫০
Share: Save:

এই মুহূর্তে ‘দ্বিতীয় কোয়ান্টাম বিপ্লবের’ সাক্ষী সাধারণ মানুষ। পিছিয়ে নেই ভারতও। দেশ জুড়ে চারটি কোয়ান্টাম মিশন হাব তৈরি হবে এ বছরই। সূত্রের খবর, এই কোয়ান্টাম অভিযানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে চলেছেন কলকাতার বিজ্ঞানীরা। সোমবার কলকাতার ‘এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস’ আয়োজিত ‘বোস স্ট্যাটিসটিকস’-এর শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে জানা গেল এই তথ্য। অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারত সরকারের মুখ্য বিজ্ঞান উপদেষ্টা অজয়কুমার সুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সচিব অভয় কারান্দিকার। প্রসঙ্গত, গত বছর কোয়ান্টাম গবেষণায় ৬০০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার।

‘প্রথম কোয়ান্টাম বিপ্লব’, একশো বছর আগের কথা। ১৯২৪ সাল। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাঁর একটি গবেষণাপত্র বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে পাঠিয়েছিলেন। তা পড়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন আইনস্টাইন, তিনি নিজেই জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে তা প্রকাশ করেছিলেন। সঙ্গে একটি ছোট্ট নোটে তাঁর মুগ্ধতার কথাও জানিয়েছিলেন। এর এক-দু’বছরের মধ্যে প্রকাশ্যে আসে ‘হাইজেনবার্গ আনসারটেনটি প্রিন্সিপল’, ‘শ্রোডিংগারস ইকুয়েশন’। শুরু হয় প্রথম কোয়ান্টাম মেকানিক্সে বিপ্লব। একশো বছর আগের সেই ‘বিপ্লবকে’ সম্মান জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে কলকাতার ‘এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস’। সোমবার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন আমেরিকান বিজ্ঞানী তথা কোয়ান্টাম গবেষণার অন্যতম পুরোধা চার্লস এইচ বেনেটও।

গত বছরই কেন্দ্র ঘোষণা করেছিল, ২০২৩-২৪ থেকে ২০৩০-৩১, এই আট বছরে ‘ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশন’-এর লক্ষ্য মাঝারি মাপের কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি (৫০-১০০০ কিউবিট), কৃত্রিম উপগ্রহের উপর নির্ভর করে ২০০০ কিলোমিটারের মধ্যে নিরাপদ কোয়ান্টাম যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন। এ ছাড়া, ‘মাল্টি-নোড কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক’, ‘কোয়ান্টাম মেমোরিস’-এর মতো বিষয়ও রয়েছে।

এ দিন অজয়কুমার সুদ জানান, যে বিপুল পরিমাণ অর্থ আগামী কয়েক বছরে বিনিয়োগ করতে চলেছে ভারত সরকার, তাতে ইতিমধ্যে চারটি হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে কোয়ান্টাম গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন, কোয়ান্টাম সেন্সিং অ্যান্ড মেটেরিয়োলজি নিয়ে কাজ হবে। কোয়ান্টাম অ্যালগরিদম সংক্রান্ত গবেষণায় ভারতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন সুদ। তিনি বলেন, ‘‘আনন্দের বিষয় হল, যে বিজ্ঞান-তত্ত্ব সত্যেন্দ্রনাথ বসুর হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল, সেই বিজ্ঞানের প্রয়োগ আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’’

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই)-র কাজের ক্ষেত্রে বিপুল বদল আনবে কোয়ান্টাম যন্ত্র। আগেই প্রমাণিত হয়েছে, সুপার কম্পিউটার যে কাজ ১০ হাজার বছরেও করতে পারেনি, সেটাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার করে ফেলেছে মাত্র ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ডে।

কারান্দিকার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অসংখ্য স্টার্ট আপ তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১২ হাজার স্টার্ট আপকে সরাসরি অর্থসাহায্য দিচ্ছে সরকার। এদের কেউ কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কেউ আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স নিয়ে কাজ করছে।

‘এস এন বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস’-এর ডিরেক্টর তনুশ্রী সাহা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘যে চারটি মিশন হাবের কথা বলা হয়েছে, সেগুলি কনসর্শিয়ামের মতো কাজ করবে। অর্থাৎ বিভিন্ন ইনস্টিটিউট একত্রিত ভাবে এক ছাতার তলায় গবেষণা করবে। এই ভাগটা হবে কাজের থিমের উপর ভিত্তি করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের গবেষণা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। এর পর ‘ম্যাচ মেকিং’ হবে। এবং এই কোয়ান্টাম অভিযানে কলকাতার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বহু বিজ্ঞানী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy