আমরা ‘অর্ধচন্দ্র’ দেওয়ার কথা শুনেছি। আধখানা চাঁদও দেখেছি। কিন্তু চাঁদের মতো অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীর চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। এতদিন এটা আমাদের জানা ছিল না।
সম্প্রতি জানা গেল, পৃথিবীর আরও একটি উপগ্রহ রয়েছে। যেটি চাঁদ নয়। তবে একটি গ্রহাণু(অ্যাস্টরয়েড)। চাঁদের মতো কোনও গ্রহাণুও যে পৃথিবীকে ঘিরে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে চক্কর মারছে তা আমাদের চোখে ধরা পড়েনি এত দিন। এই প্রথম জানা গেল, একটি গ্রহাণু পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে চক্কর মারছে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘নিয়ার আর্থ কম্পেনিয়ান’ বা পৃথিবীর কাছের বন্ধু। এদের আরেকটি নাম আছে। সেটি হল ‘কোয়াসি স্যাটেলাইট’। এই গ্রহাণুটির আদত নাম ‘২০১৬-এইচও-৩’।
আমাদের নতুন ‘চাঁদ’: দেখুন ভিডিও।
এ বছরের ২৭ এপ্রিল হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হালিয়াকালায় প্যান-স্টার্স-এক টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই গ্রহাণুটিকে প্রথম দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এটি চাঁদের মতোই পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে তা আন্তর্জাতিক ভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে ১৪ জানুয়ারি সান দিয়েগোর আমেরিকান অ্যাস্টোনমিক্যাল সোসাইটির বৈঠকে।
কত বছর আগে এই গ্রহাণুটি তৈরি হয়েছিল?
কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স(আইসিএসপি)-এর অধিকর্তা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘মঙ্গল আর বৃহস্পতির মধ্যে যে গ্রহাণুপুঞ্জ(অ্যাস্টরয়েড বেল্ট) রয়েছে সেখানে এই গ্রহাণুটির জন্ম হয়েছে। পৃথিবীর জন্মের প্রায় দশ কোটি বছর পর বা তারও বেশ কিছু পরে কৌণিক ভরবেগ খোয়ানোর ফলে এটি গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে বেরিয়ে ক্রমশই সূর্যের দিকে আসতে থাকে। প্রথমে তার সামনে পরে মঙ্গল গ্রহ। মঙ্গলের অভিকর্ষ বল তাকে কাছে টেনে রাখতে পারেনি। বরং ওই গ্রহাণুর শরীর থেকে কৌণিক ভরবেগ শুষে নিয়েছে। তার ফলে মঙ্গলের পাশ কাটিয়ে পৃথিবীর চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়তে পেরেছিল। আনুমানিক গত একশো থেকে দু’শো বছর ধরে এটা পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে।হয়তো আরও কয়েকশো বছর ধরেই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে।’’
কাকে বলে ‘কোয়াসি স্যাটেলাইট’। দেখুন ভিডিও।
‘‘এই গ্রহাণুটি পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে কোণে হেলে রয়েছে। তাই কখনও সে উপরে উঠে আসছে আবার কখনও নীচে নামছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ব্যাঙের মতো লাফালাফি করছে। আকারে খুব ছোট। লম্বায় বড় জোর ১২০ ফুট (৪০ মিটার) থেকে ৩০০ ফুট (১০০ মিটার) পর্যন্ত। এটা এমন ভাবেই পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের টানে ধরা রয়েছে, যাতে চাঁদ থেকে পৃথিবীর যা দূরত্ব তার ১০০ গুণের চেয়ে বেশি দূরে যেতে পারে না। আবার চাঁদের থেকে পৃথিবীর যা দূরত্ব তার ৩০ গুণের কম দূরত্বেও আসতে পারে না। এই গ্রহাণুটি সূর্যকেও পাক মারছে। একই ভাবে আজ থেকে দশ বছর আগে আরও একটি গ্রহাণু পৃথিবীর কাছে এসেছিল। তার নাম ‘২০০৩-ওয়াইএন-১০৭’। কিন্তু সেই গ্রহাণু আর আমাদের কাছে নেই অর্থাৎ পৃথিবী তাকেও আর টেনে রাখতে পারেনি।’’
কিন্তু সদ্য আবিষ্কৃত ‘অর্ধচন্দ্রটি’কে পৃথিবী তার ভালবাসার টানে আষ্টে-পিষ্টে বেঁধে রেখেছে। তা হলে এটিকে চাঁদের মতো পুরোদস্তুর উপগ্রহ বলা যাবে না কেন?
সন্দীপ বাবু জানাচ্ছেন, ‘‘পৃথিবী আর চাঁদ যে সময় তৈরি হয়েছিল, এই গ্রহাণুটি তার অনেক পরে জন্মেছে। আর এটি এসেছে গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে। এর ঘনত্ব চাঁদের চেয়ে অনেক কম।’’
কোন কোন খনিজ পদার্থ মিলতে পারে এই গ্রহাণুতে?
সন্দীপবাবু জানালেন, ‘‘লোহা ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে এতে থাকতে পারে। তবে জল থাকার কোনও সম্ভাবনা নেই।’’
আরও পড়ুন
আকাশে দুই সূর্য, কখনওই রাত নামে না যে গ্রহে!
ছবি ও ভিডিও সৌজন্য: নাসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy