Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Telecommunication

১৪০০ কোটি বছরের সময় মাপতে সেকেন্ডেরও হেরফের হবে না! ঘড়ি বানাচ্ছেন বর্ধমানের শুভদীপ

বর্ধমানের শুভদীপের পরমাণু ঘড়ি ১৪০০ কোটি বছরের সময় মাপতে গিয়ে কোনও ভুলচুকই করে না।

ইনসেটে, অধ্যাপক শুভদীপ দে।

ইনসেটে, অধ্যাপক শুভদীপ দে।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৫৩
Share: Save:

অবাধ্যকে বাধ্য করতে চলেছেন শুভদীপ তাঁর নিজের শাসনে!

যেখানে সেখানে ছুটে বেড়াচ্ছে এমন একটা অসম্ভব দুরন্ত, ছটফটে ‘শিশু’কে বশ মানিয়ে একেবারে জড়বৎ, জবুথবু করে দেবেন বর্ধমানের শুভদীপ দে! পরমাণু ঘড়ি বানাতে গিয়ে। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ট্র্যাপিং অ্যান্ড কুলিং’।

ঘড়ি যে আদতে কোনও সময় মাপে না, মাপে পেন্ডুলাম বা কোয়ার্ৎজ কেলাসের দোলনের ফলে তৈরি হওয়া তরঙ্গের কম্পাঙ্ক, আমাদের মাথায় না থাকা সেই কথাটাও আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন শুভদীপ।

শুভদীপের ঘড়িই পরিত্রাতা হবে

শুভদীপ যে পারমাণবিক ঘড়ি বানাচ্ছেন, সেটা না থাকলে আগামী দিনে হ্যাকারদের হানাদারির হাত থেকে বাঁচিয়ে পুরোপুরি সুরক্ষিত ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই সম্ভব হবে না। তাতে যেমন অরক্ষিত থেকে যাবে প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্যাদি, নিখুঁত হবে না উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ, তেমনই রক্ষাকবচ থাকবে না টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে নানা ধরনের আর্থিক লেনদেন, ই-গভর্ন্যান্সেরও।

দেওয়াল ঘড়ি, হাতঘড়ি চলে যে ভাবে

এখনকার কোয়ার্ৎজ কেলাসে চলা হাতঘড়িই বলুন বা আমাদের দম দেওয়া টেবিল ক্লক বা দেওয়াল ঘড়ি, যতই সময় মিলিয়ে রাখুন, ছুটতে ছুটতে কিছুটা সময় পরে তা কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দম দিতে হয় দেওয়াল ঘড়িতে। তবে সেই পেন্ডুলামকে খুব জোরে বা খুব ধীরে দোলালে আবার বিপদ। সে সঠিক সময়ের সঙ্গে তাল না মেলাতে পেরে পিছিয়ে পড়ে উত্তরোত্তর।

পেন্ডুলামের মতোই ভোল্টেজের বাড়া-কমার ফলে আয়তনে বেড়ে-কমে তরঙ্গের জন্ম দিয়ে এখন হাতঘড়ি চালায় কোয়ার্ৎজ কেলাস। কিন্তু নিয়মিত চেহারায় বাড়া-কমা করতে করতে সেই কেলাসও হাঁফিয়ে ওঠে। তার একই ভাবে বাড়া-কমার শক্তি হারিয়ে ফেলে। তখন সেই হাতঘড়িও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। একটা সময়ে গিয়ে অচল হয়ে পড়ে।

শুভদীপের আশ্চর্য ঘড়ি

অথচ শুভদীপ যে পারমাণবিক ঘড়ি বানাচ্ছেন, তা প্রায় ১৪০০ কোটি বছরের ব্রহ্মাণ্ডের সময় মাপতে গিয়ে কোনও ভুলচুকই করে না। হাজার কোটি বছরের সময় মাপতে গিয়েও নির্ভুল এই ঘড়ি। সময়ের হেরফের হয় না বললেই চলে। হলেও, সেটা এক সেকেন্ডেরও কম সময়। তাই এই পারমাণবিক ঘড়ি পিছিয়ে পড়তেই জানে না।

বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ঘড়ির নাম- ‘অপটিক্যাল অ্যাটমিক ক্লক’। আগামী দিনে হ্যাকারদের হানাদারির হাত থেকে বাঁচিয়ে পুরোপুরি সুরক্ষিত কোয়ান্টাম টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এই পারমাণবিক ঘড়ি না হলে চলবে না। কারণ সুরক্ষার মূলমন্ত্রটির সাফল্য নির্ভর করে নির্ভুল সময়-রক্ষার (‘টাইম স্ট্যাম্পিং’) উপরেই।

চুপ্‌টি করে বসল অবাধ্য শিশু!

সেই পারমাণবিক ঘড়ি বানাতে গিয়ে খুব তেতে থাকা অসম্ভব শক্তিশালী আর খুব দুষ্টু শিশুর মতো অবাধ্য, দুরন্ত একটা কণাকে শুভদীপ একটা জায়গায় বেঁধেও ফেলতে পেরেছেন। যেন বাধ্য করেছেন তাকে এক জায়গায় চুপ্‌টি করে বসে থাকতে!

কিন্তু চুপ করে বসে থাকলে কি হবে, তার ভিতরের ছটফটে ভাবটা তো আর যায়নি। ‘রক্ত গরম’ বলে! তখনও যে তার গায়ের তাত কমেনি। কমেনি শক্তিও। শুধু যে দিকে ইচ্ছা সে দিকে ছুটোছুটি না করে শুভদীপের ‘শাসনে’ শুধুই চুপ করে বসতে বাধ্য হয়েছে।

কী ভাবে জড়বৎ হয়ে গেল সেই কণা?

তার পরেও ‘ভানুমতীর খেল’ দেখিয়েছেন শুভদীপ। ভিতরে ভিতরে ‘রাগে ফুঁসতে থাকা’ সেই কণাকে ঠাণ্ডা করেছেন। এতটাই যে, তার গায়ের তাপমাত্রা মহাকাশের হাড়জমানো ঠাণ্ডার ১০ হাজার ভাগেরও এক ভাগের কমে নেমে গিয়েছে। শুভদীপ এমন ভাবে ‘ঠাণ্ডা করে দিয়েছেন’ সেই শক্তিশালী কণাকে যাতে সেই দুরন্ত কণাও একেবারে জড়বৎ, জবুথবু হয়ে গিয়েছে। নড়াচড়ার শক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে। জব্দ হয়ে গিয়ে একেবারেই বশে এসে গিয়েছে শুভদীপের।

সূর্যঘড়ি। পুণেতে ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের সায়েন্স পার্কে।

সূর্যঘড়ি। পুণেতে ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের সায়েন্স পার্কে।

ভাগ্যিস! না হলে যে পারমাণবিক ঘড়িটাই বানানো সম্ভব হতো না শুভদীপের পক্ষে।

কোয়েস্টএবং পারমাণবিক ঘড়ি

দেশে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কমিউনিকেশন ও টেকনোলজির উন্নতিতে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের (ডিএসটি) অর্থানুকুল্যে যে ‘কোয়ান্টাম এনহ্যান্সড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (কোয়েস্ট)’ প্রকল্পের কাজ চলছে পুণের ‘ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (আয়ুকা)’-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শুভদীপের গবেষণা তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁর প্রকল্পের নাম- ‘অপটিক্যাল ক্লক বেস্‌ড অ্যাকিউরেট টাইম স্ট্যাম্পিং ইন কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন

পারমাণবিক ঘড়ি তৈরির কৌশল শেখাচ্ছেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডেভিড ভাইনল্যান্ড

বর্ধমান থেকে ব্রহ্মাণ্ডের সময় মাপার পরিক্রমায়

বর্ধমান শহরের কালিবাজারে বেড়ে ওঠা শুভদীপ স্থানীয় পৌর উচ্চবিদ্যালয় ও বিবেকানন্দ কলেজ থেকে পাশ করে পদার্থবিজ্ঞানে এম এসসি করতে যান খড়্গপুরের আইআইটি-তে। তার পর পিএইচডি করতে যান নেদারল্যান্ডসের গ্রনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। পোস্ট ডক্টরাল আমেরিকার জয়েন্ট কোয়ান্টাম ইনস্টিটিউটে। চাকরি শুরু করেন দিল্লির ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে। কয়েক মাস আগে যোগ দিয়েছেন পুণের আয়ুকা-য়।

শুভদীপের কাজের অভিনবত্ব

শুভদীপ কাজটা করেছেন একটি বিশেষ মৌলের আয়ন নিয়ে। ইটারবিয়ামের ধনাত্মক আয়নকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। কারণ ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্রই তার স্বভাব, চরিত্র একই রকম থাকে। ইটারবিয়াম পরমাণুর একেবারে বাইরের খোলকে থাকে দু’টি ইলেকট্রন। কোনও ভাবে বাইরের শক্তির মদতে উত্তেজিত হয়ে পড়লে যারা খোলক থেকে বেরিয়ে এসে ইটারবিয়াম পরমাণুকে ধনাত্মক আধানের আয়নে পরিণত করে।

যিনি দেখাচ্ছেন ভানুমতীর খেল! ‘আয়ুকা’-র অধ্যাপক শুভদীপ দে।

যিনি দেখাচ্ছেন ভানুমতীর খেল! ‘আয়ুকা’-র অধ্যাপক শুভদীপ দে।

শুভদীপ সেই দু’টি ইলেকট্রনের একটিকে বের করে এনেই দেখিয়েছেন ‘ভানুমতীর খেল’। সেটা করার জন্য খুব শক্তিশালী লেজার রশ্মির ‘বিম’ ফেলেছেন তিনি ইটারবিয়াম পরমাণুর উপর। তাতে ইটারবিয়াম আয়ন তৈরি হয়েছে।

যে ‘অ্যাটমিক আভেন’-এর মধ্যে এই সব কাণ্ডকারখানা ঘটিয়েছেন শুভদীপ, তার তাপমাত্রা ছিল ৫২৫ ডিগ্রি কেলভিন (শূন্যের নীচে ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই ‘কেলভিন’ (কে), যাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা বলা হয়)। ফলে সেই আয়ন তখন খুবই তেতে রয়েছে। শক্তিও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। আর তাতেই শুরু হয়ে গিয়েছে তার তুমুল দুরন্তপনা। এ দিকে সে দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। যেন খুব ডানপিটে অবাধ্য শিশু।

কিন্তু লেজার বিম খুব সরু হয়। খুব শক্তিশালী অবাধ্য ইটারবিয়াম আয়ন তখন এতই ছুটোছুটি করছে যে তাকে কিছুতেই সরু লেজার বিমে ধরা যাচ্ছে না।

তাই ‘আয়ন ট্র্যাপিং’-এর রাস্তায় হাঁটতেই হয়েছে শুভদীপকে। যাতে যেখানে সেখানে ছুটে বেড়ানো দুরন্ত শিশুকে চুপ্‌টি করে একটা জায়গায় এনে বসানো যায়। ওই লেজার বিম যতটা জায়গা জুড়ে পড়ছে ঠিক তার মধ্যেই। এটা করা হয়েছে এক বিশেষ ধরনের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে।

শুভদীপের ‘শাসনে’ সেই ইটারবিয়াম আয়ন এসে লেজার বিমের মাত্র ৩০ মাইক্রন পরিমাণের চৌহদ্দিতে বসে পড়ার পরেও তো তার গায়ের তাপমাত্রা কমেনি। কমেনি শক্তিও। দুরন্ত শিশুটি বাধ্য হয়ে চুপ্‌টি করে বসলেও তার ভিতরে তো রয়েছে ছুটে বেড়ানোরই তীব্র উন্মাদনা।

তাই শুভদীপকে এ বার অভিনব উপায়ে সেই আপাত ভাবে বশ মানা ইটারবিয়াম আয়নের গায়ের তাপমাত্রা কমাতে হয়েছে। ‘লেজার কুলিং’ পদ্ধতিতে। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ইটারবিয়াম আয়নের যা তাপমাত্রা, ‘লেজার কুলিং’ পদ্ধতিতে তা এক লক্ষ ভাগ কমানো হয়েছে।

যা মহাকাশের হাড়জমানো ঠাণ্ডারও বহু বহু গুণ বেশি। তাতে একেবারেই জবুথবু, জড়বৎ হয়ে গিয়েছে ইটারবিয়াম আয়ন। তার নড়াচড়ার শক্তি হারিয়েছে। খুব ঠাণ্ডায় আমরা যেমন নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলি।

শক্তিশালী ইটারবিয়াম আয়নকে ঠাণ্ডা করে তার শক্তি কমানোর ফলে তার কম্পাঙ্ক সঠিক ভাবে মাপা সম্ভব হয়। সেটাই তো শুভদীপের পারমাণবিক ঘড়ি চালানোর পেন্ডুলাম!

যেখানে বানানো হচ্ছে পারমাণবিক ঘড়ি। পুণের ‘আয়ুকা’।

যেখানে বানানো হচ্ছে পারমাণবিক ঘড়ি। পুণের ‘আয়ুকা’।

এখানেই, হাতঘড়ি বা দেওয়াল ঘড়ি যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে, ইটারবিয়াম আয়নের ধর্মগুলি বদলায় না বলে শুভদীপ যে পারমাণবিক ঘড়ি বানাচ্ছেন তার সময়ের নড়চড় হয় না বললেই চলে।

সহজে বোঝার জন্য, ১৪০০ কোটি বছরের ব্রহ্মাণ্ডের সময় মাপতে গিয়ে তা বড়জোর এক সেকেন্ড পিছিয়ে পড়তে পারে। যা ধর্তব্যের মধ্যেই নয়!

দেশের প্রতিরক্ষার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ

শুভদীপ ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানিয়েছেন, এমন নিখুঁত পারমাণবিক ঘড়ি বানানোর কাজটা খুবই জটিল। নানা ধরনের প্রযুক্তিতে এই ঘড়ি বানানো ও তাকে আরও নিখুঁত করে তোলার চেষ্টা বিশ্বজুড়ে চলছে প্রায় এক শতাব্দী ধরেই। ১৯৪৪ থেকে এখনও পর্যন্ত শুধু এই ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এক ডজন নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাঁদের এক জনের সঙ্গে তিনিও কাজ করেছেন আমেরিকায় থাকাকালীন। কাজটা কতটা জটিল, এতেই স্পষ্ট। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, ইটালি ও কানাডার মতো উন্নত দেশগুলি এই পারমাণবিক ঘড়ি বানাতে পেরেছে। চেষ্টা করছে চিন, রাশিয়া, তাইওয়ান, তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়াও। প্রতিরক্ষার জন্য ভারতেরও খুব প্রয়োজন একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তিতে এই পারমাণবিক ঘড়ি বানানো। ভারতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার, কোয়ান্টাম ইন্টারনেট ও কোয়ান্টাম টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যও পারমাণবিক ঘড়ির প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

দুরন্ত শিশুকে অভিনব উপায়ে ঠাণ্ডা করে হ্যাকারদের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে বড় বাজি ধরেছেন শুভদীপ। জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই।

ছবি- অধ্যাপক শুভদীপ দে-র সৌজন্যে।

ভিডিয়ো সৌজন্যে: আয়ুকা, পুণে।

অন্য বিষয়গুলি:

Quantum Mechanics Telecommunication Quantum Computer Quantum Entanglement Atomic Clock Rollover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy