— প্রতীকী চিত্র।
জল, স্থলে ছিলই। এ বার অন্তরীক্ষেও ঘনাচ্ছে বর্জ্য-দূষণের বিপদ। ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়ে বায়ুমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার।
ইন্টারনেটের এই যুগে গোটা পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিভিন্ন স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ-নির্ভর। বিভিন্ন দেশ নিয়মিত পৃথিবী থেকে দূর কক্ষপথে পাঠিয়ে চলেছে একের পর এক উপগ্রহ। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে পৃথিবীর চারপাশে চক্কর কাটছে ১০ হাজারের বেশি সক্রিয় উপগ্রহ। ২০৩০ সালের মধ্যে এক লক্ষ ও পরবর্তী ১০ বছরে তা পাঁচ লক্ষ ছুঁতে চলেছে। কার্যকালের মেয়াদ শেষে উপগ্রহগুলি যখন দেহ রাখে, বায়ুমণ্ডলে তা জ্বলে-পুড়ে খাক হয়। তবে রেখে যায় ক্ষতিকর নানা বর্জ্য, যা বায়ুমণ্ডলের উচ্চস্তরগুলিকে অসুস্থ করার পক্ষে যথেষ্ট।
বিপদ কোথায়? ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬-২০ কিলোমিটার উচ্চতা জুড়ে থাকা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বিভিন্ন ধাতব কণার সঞ্চয় লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। যা এসেছে মূলত উপগ্রহের অবশেষ থেকে। ২০২৩-এ আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর কেমিক্যাল সায়েন্সেস ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল মার্ফি একটি রিপোর্ট দেন। তা অনুযায়ী, মেরুপ্রদেশের উপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অন্তত ২০ ধরনের ধাতব কণা মিলেছে। তার মধ্যে নায়োবিয়াম ও হ্যাফনিয়াম রয়েছে, যা উপগ্রহ বা মহাকাশযানে ব্যবহৃত সংকর ধাতু থেকে এসেছে। পাশাপাশি ওই স্তরে লিথিয়াম, সীসা, অ্যালুমিনিয়াম বা তামার ঘনত্ব প্রাকৃতিক সীমার অনেক বেশি। সঙ্গে, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইডও ২০২০ থেকে ২০২২-এর মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
দোষী শুধু উপগ্রহেরা নয়। উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠাতে রকেট উৎক্ষেপণ দিনে দিনে বাড়ছে। ২০২০-২২ পর্বে রকেটের জ্বালানির ব্যবহার ৩৮ হাজার টন থেকে বেড়ে ৬৭ হাজার টন হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎক্ষেপণ কালে নির্গত দূষকও। কী নেই দূষকের তালিকায়? কার্বন কণা, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড থেকে ক্লোরিনের বিভিন্ন গ্যাসও। মুশকিল হল, দূষক রাসায়নিকগুলি বায়ুস্তরের রাসায়নিক গঠন বদলের ক্ষমতা রাখে। তাতে সমস্যায় ওজ়োন স্তরও। ইউনিভার্সিটি অব সার্দান ক্যালিফোর্নিয়ার এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার জ় ফেরিরা বলেন, “উপগ্রহ বা মহাকাশযানে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়াম থেকে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড তৈরি হয়। এই অক্সাইড ওজ়োন স্তর ভাঙতে বেশ দড়। আর কে না জানে, সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি আটকাতে কতটা দরকারি ওজ়োন স্তর।”
কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তীও বলেন, “অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ওজ়োন স্তরের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ ছাড়া, ধাতব কণা বিশেষত লেডের কণা পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক।” এ ছাড়া, রকেট ইঞ্জিন থেকে বেরনো ধোঁয়া সৌরশক্তি শোষণ করে পরিবেশকে গরম করছে। প্রভাব পড়তে পারে মেঘ তৈরিতেও।
তবে উপায়? ফেরিরার মত, ইন্টারনেট-নির্ভর এই যুগে উপগ্রহ দরকারই। আপাতত ক্ষতিকর রাসায়নিক চিহ্নিত করে তার বিকল্প ব্যবহারে উদ্যোগী হতে হবে। কিছুটা অন্য সুরে মার্ফি বলেন, “সবেমাত্র বিপদের আঁচ মিলেছে। এত দ্রুত সমাধান পাওয়া মুশকিল। তা ছাড়া, এ সব উপগ্রহ তৈরিই এমন ভাবে হয়েছে যে, তা শেষমেশ ধ্বংস হবে। সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আগে ভাবা দরকার ছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy