Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪

সমুদ্রগর্ভে এ বার চিনের প্রাচীর, মহাকাশ স্টেশন বানাচ্ছে বেজিং!

দক্ষিণ চিন সাগরের তলায় আরও একটা ‘গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’ বা চিনের প্রাচীর বানাচ্ছে বেজিং। বানানো হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৭০ কিলোমিটার ওপরে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এর ধাঁচে বানানো আরও একটি ‘মহাকাশ স্টেশন’- সমুদ্রের তলায়! দক্ষিণ চিন সাগরের তলার সেই ‘মহাকাশ স্টেশনে’ও থাকবেন, যাওয়া-আসা করবেন ‘মহাকাশচারী’রা! থুড়ি ‘জলচর’ মানুষরা!

দক্ষিণ চিন সাগরের তলায় বানানো হচ্ছে ‘গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’।

দক্ষিণ চিন সাগরের তলায় বানানো হচ্ছে ‘গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’।

গ্লেন ম্যাকডোনাল্ড
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ১৪:৩৫
Share: Save:

আকাশ থেকে পড়বেন না!

দক্ষিণ চিন সাগরের তলায় আরও একটা ‘গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’ বা চিনের প্রাচীর বানাচ্ছে বেজিং। বানানো হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৭০ কিলোমিটার ওপরে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এর ধাঁচে বানানো আরও একটি ‘মহাকাশ স্টেশন’- সমুদ্রের তলায়! দক্ষিণ চিন সাগরের তলার সেই ‘মহাকাশ স্টেশনে’ও থাকবেন, যাওয়া-আসা করবেন ‘মহাকাশচারী’রা! থুড়ি ‘জলচর’ মানুষরা!

শুনলে হয়তো চমকে যাবেন! কিন্তু এটা সত্যি, দক্ষিণ চিন সাগরের ৩ হাজার মিটার বা ৯ হাজার ৮০০ ফুট নীচে চিন বানাচ্ছে ওই ‘মহাকাশ স্টেশন’। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, দক্ষিণ চিন সাগরেই রোবট দিয়ে বানানো হচ্ছে এরও একটি ‘গ্রেট ওয়াল’। যার উচ্চতা ও বিস্তারটা হবে একেবারে মাথার ওপর উঁচিয়ে থাকা চিনের প্রাচীরের মতোই!


সমুদ্রের তলায় রোবটের ‘গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’র মডেল।

কিন্তু দক্ষিণ চিন সাগরের তলায় কেন ওই দু’টি ‘মেগা-স্ট্রাকচার’ বানাচ্ছে চিন?

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট আর মহাকাশ থেকে ‘নজরদার’ উপগ্রহগুলোর পাঠানো ছবি জানাচ্ছে, সমুদ্রের তলায় ওই ‘গ্রেট ওয়াল’ বানানো হচ্ছে রোবট আর ড্রোন দিয়ে। সমুদ্রের তলায় ঘাপ্‌টি মেরে লুকিয়ে থাকা শত্রু পক্ষের সাবমেরিনগুলোর অবস্থান আর গতিবিধির ওপর সব সময় নজর রাখার জন্যই বানানো হচ্ছে ওই দু’নম্বর ‘গ্রেট ওয়াল’। আর ওই সমুদ্রের তলাতেই যে ‘মহাকাশ স্টেশন’টি বানাচ্ছে চিন, তার কাজ হবে মূলত দু’টি। এক, সেটি ওই দু’নম্বর ‘গ্রেট ওয়াল’-এর নজরদারির কাজকর্মের ওপর নজর রাখবে। তাকে বেতার তরঙ্গে নির্দেশ পাঠাবে আর সমুদ্রের তলায় থাকা ওই ‘গ্রেট ওয়াল’ থেকে পাঠানো যাবতীয় তথ্য রেকর্ড করবে ও তা বিশ্লেষণ করবে। আর সেই সব গোপন তথ্য পাঠাবে চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আর ‘রেড আর্মি’র কাছে। নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ আর মহাকাশের সুদূরতম প্রান্তের সঙ্গে যে ভাবে যোগাযোগ রাখে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। আর তার দ্বিতীয় কাজটি হবে, সমুদ্রের তলায় লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সন্ধান করা।

আরও পড়ুন- কেন হয় ব্রেস্ট ক্যানসার? ‘চক্রী’দের হদিশ মিলল মহাকাশ গবেষণায়!

কেন সেটাকে ‘মহাকাশ স্টেশন’ বলা হচ্ছে?

কারণ, সমুদ্রের অতটা গভীরতায় ওই স্টেশনের ভেতরটাও বানানো হচ্ছে অবিকল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের আদলে। আর মহাকাশে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটিও যেমন কক্ষপথে ঘোরার সময় তার অবস্থান বদলায়, তেমনই দক্ষিণ চিন সাগরের তলায় চিন যে ‘মহাকাশ স্টেশন’টি বানাচ্ছে, সেটিও প্রয়োজনে তার অবস্থান বদলাতে পারবে, যখন-তখন। তা যতই ‘মেগা-স্ট্রাকচার’ হোক না কেন।

ঘটনা হল, কোনও সমুদ্রেরই এতটা গভীরতায় কোনও দেশই এখনও পর্যন্ত ‘মহাকাশ স্টেশন’ বা অত বড় প্রাচীর বানানোর সাহস দেখায়নি! যেটা আরও তাৎপর্যের, তা হল, ওই দু’টি ‘মেগা-স্ট্রাকচার’ বানানোর জন্য চিন যে জায়গাটিকে বেছে নিয়েছে, সেটি হল দক্ষিণ চিন সাগর। যে এলাকার দখলদারি নিয়ে জাপান, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে চিন। যার প্রেক্ষিতে আমেরিকাকেও রণতরী পাঠাতে হয়েছে দক্ষিণ চিন সাগরে। দিন কয়েক আগে ঘটা করে চিনের সামরিক কর্তারা প্রকাশ্যেই ওই রোবট আর ড্রোন বানানোর কথা ঘোষণা করেছেন। সাংবাদিকদের ডেকে দেখিয়েছেন ড্রোনগুলো। যেগুলো স্থলে ও জলে আর সমুদ্রের বিভিন্ন গভীরতায় সমান ভাবেই কর্মক্ষম। পারদর্শী। ওই ড্রোনগুলোতে সাবমেরিন-বিধ্বংসী পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রও থাকবে। থাকবে জল থেকে আকাশে ছোঁড়ার জন্য দূর পাল্লার আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইলও।

তবে শুধুই আশঙ্কা নয়। কিছু আশার কথাও রয়েছে চিনের ওই ‘বাহুবল’ দেখানোর মরিয়া চেষ্টায়। তা হল, সমুদ্রের তলায় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যেও তা জরুরি হয়ে পড়বে।

গ্লেন ম্যাকডোনাল্ড ‘ডিসকভারি নিউজ’-এর বিজ্ঞান সাংবাদিক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy