চন্দ্রযান-২। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
বর্ষা তখন ঝমঝমিয়ে। ঘন মেঘে ঢাকা রাতে আমরা ডুবে থাকব গভীর ঘুমে। আর সেই সময়েই সে রওনা হয়ে যাবে চাঁদ মুলুকে। ওজনে যে ৮টা বড় হাতির সমান! এই প্রথম চাঁদে নামবে ভারত। চাঁদের দক্ষিণ মুলুকে। এখনও পর্যন্ত যে সাহস দেখাতে পারেনি কোনও দেশ। এই অংশেই অনেকটা জল রয়েছে বলে মনে করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
আগামী ১৫ জুলাই ভারতীয় সময় রাত ২টা ৫১ মিনিটে মহাকাশে পাড়ি জমাবে ইসরোর ‘চন্দ্রযান-২’। লক্ষ্য, ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকা আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী। পৃথিবীর ‘সবেধন নীলমণি’ উপগ্রহ। গত দেড় বছর ধরে বারতিনেক পিছিয়ে যাওয়ার পর শেষমেশ আমাদের এ বারের চন্দ্র-যাত্রার দিনক্ষণ জানিয়েছেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভন। বুধবার। জানিয়েছেন, প্রায় ৪ টন ওজনের চন্দ্রযান-২-কে মহাকাশে পাঠিয়ে দেবে ‘বাহুবলী’। ইসরোর সর্বাধুনিক, অত্যন্ত শক্তিশালী রকেট ‘জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (জিএসএলভি) মার্ক-৩’। সবকিছু ঠিকঠাক চললে রোভারকে বুকে নিয়ে ল্যান্ডার চাঁদের বুক ছোঁবে সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে।
চাঁদের পাড়ায় প্রথম ‘পা’ ১১ বছর আগে
১১ বছর আগে আমরা প্রথম পাড়ি জমিয়েছিলাম চাঁদ-মুলুকে। ২০০৮-এর ২২ সেপ্টেম্বর। সেটাই ছিল ইসরোর প্রথম চন্দ্র অভিযান। ‘চন্দ্রযান-১’। কিন্তু সে বার চাঁদের পাড়ায় ঢুকেও আমরা সাহস দেখাতে পারিনি আমাদের উপগ্রহকে ছুঁয়ে দেখার। ‘চাঁদ মামার কপালে টিপ’ দিতে পারিনি সে বার। চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথেই ঘুরেছে চন্দ্রযান-১। এখনও ঘুরে চলেছে। চাঁদের বুকে জলের অস্তিত্বের হদিশ প্রথম দিয়েছিল চন্দ্রযান-১।
পা ছোঁয়াবে ‘বিক্রম’, ঘুরে বেড়াবে ‘প্রজ্ঞান’
কিন্তু এ বার আমরা সেই ‘টিপ’ এঁকে দেব। কারণ, চন্দ্রযান-২-এর সঙ্গে থাকবে ‘বিক্রম’। ল্যান্ডার। চাঁদের কক্ষপথে গিয়ে চন্দ্রযান-২ ছুড়ে দেবে বিক্রমকে। চাঁদের দিকে। চন্দ্রযান-২ থেকে আলাদা হয়ে ল্যান্ডার বিক্রম নেমে পড়বে চাঁদের পিঠে। দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি। জল আর খনিজ পদার্থের সন্ধান করবে।
চাঁদের মুলুক বলে কথা, তাই আলাদা করতে চাইলেই যে চন্দ্রযান-২-এর শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাবে বিক্রম, তা নয়। সময় লাগবে ১৫ মিনিট। চন্দ্রযান-২-এর শরীর থেকে আলাদা হয়ে চাঁদের পিঠে এসে নামতে। কক্ষপথে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলবে চন্দ্রযান-২।
আরও পড়ুন- ফসল চাঁদের মাটিতে? রহস্যের জট খোলেনি, বলছেন নাসার বিজ্ঞানী
আরও পড়ুন- থরথরিয়ে কেঁপে উঠল মঙ্গল, এই প্রথম শোনা গেল গোঙানিও!
বিক্রমের শরীরের ভিতরে থাকবে ‘প্রজ্ঞান’। রোভার। চাঁদের পিঠে নামার পর যা বেরিয়ে আসবে বিক্রমের শরীর থেকে। রোভার প্রজ্ঞানের পায়ে রয়েছে চাকা। সেই চাকা গড়িয়ে গড়িয়ে প্রজ্ঞান ঢুঁড়ে বেড়াবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর দিকের পিঠ (সারফেস)।
রোভার ‘প্রজ্ঞান’
এখনও কি কাঁপে চাঁদ? খবর নেবে প্রজ্ঞান
ইসরো সূত্রের খবর, বিক্রম আর প্রজ্ঞান চাঁদের পিঠে নেমে কাজ চালাবে ১৪টি পার্থিব দিন ধরে (যার আয়ু ২৪ ঘণ্টা)। চাঁদের মুলুকে যা আদতে মাত্র একটি চান্দ্র দিন (লুনার ডে)। এখনও তার অন্তর-অন্দরের কম্পনে থরথর করে কেঁপে ওঠে কি না চাঁদ, ঘুরেঘুরে তা মাপার চেষ্টা চালাবে প্রজ্ঞান। তাকে চালাবে সৌরশক্তি। তার গায়ে থাকবে লম্বাটে সোলার প্যানেল।
ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভন বলছেন, ‘‘ল্যান্ডার বিক্রম নামবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে, যেখানে আর কোনও দেশ এর আগে নামার সাহস দেখাতে পারেনি। ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে। চাঁদের এতটা দক্ষিণে নামা সম্ভব হয়নি নাসা, ইএসএ (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি)-রও।’’
ইসরো সঙ্গে নিল নাসাকেও
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় যন্ত্রাংশ থাকবে চন্দ্রযান-২-এ। সংখ্যায় ১৩টি। থাকবে নাসার ‘লেজার’। যা পাঠানোর জন্য নাসার কাছ থেকে নেওয়া হয়নি কোনও অর্থ, জানিয়েছেন ইসরোর চেয়ারম্যান। তবে মহাকাশে তার যাত্রাপথ ও চাঁদের মুলুকে পা ছোঁয়ানোটা যাতে নিরাপদে নির্বিঘ্নে হয়, সিভন জানিয়েছেন, তার জন্য নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের সাহায্য নেওয়া হবে। আর তার জন্য নাসাকে দেওয়া হবে অর্থ।
ছবি: ইসরোর সৌজন্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy