বক্সায় বাঘের প্রত্যাবর্তন? -ফাইল ছবি।
১৯৯৮ সালের পর থেকে টানা ২৩ বছর ধরে কেন বাঘের দেখা মেলেনি জলপাইগুড়ির বক্সা অভয়ারণ্যে? আড়াই দশক ধরে বক্সা থেকে বাঘের উধাও হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী কি অদূরবর্তী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র? সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এ বার সেই প্রশ্ন তুলে দিল। গবেষণাপত্রে ওঠা সেই প্রশ্নকে সমর্থনও করলেন রাজ্যের বন, পরিবেশ ও বাঘ বিশেষজ্ঞরা।
টানা তিন দশক বাঘ-শূন্য থাকার পর শুক্রবার রাতে বন দফতরের পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় বক্সার অভয়ারণ্যে হঠাৎই একটি বাঘের ছবি ধরা পড়ে। বক্সায় সত্যি সত্যিই বাঘ আছে কি না তা নিয়ে বহু দিন ধরেই সংশয় দানা বেঁধেছিল। প্রশ্ন তুলেছিল পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিও। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার বাঘের দেখা মেলার পর বন দফতরের কর্মীরা অভয়ারণ্যে গিয়েছেন। বাঘটিকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা চলছে। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক রবিবার বলেছেন, ‘‘আট দিন বন্ধ থাকবে জঙ্গল সাফারি।’’
গবেষণায় ওঠা প্রশ্ন, সংশয়ও
ঠিক এই সময়ই সামনে এল একটি আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল। যা প্রশ্ন তুলেছে, বক্সায় এত দিন বাঘ দেখতে না পাওয়ার জন্য কি দায়ী আধুনিক সভ্যতার উত্তরোত্তর বেড়ে চলা বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা? বক্সা অভয়ারণ্য থেকে ২৩ বছর ধরে বাঘের উধাও হয়ে যাওয়ার জন্য কি দায়ী ১০০ কিলোমিটারের সামান্য কিছু বেশি দূরত্বে থাকা কুমাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র? অভয়ারণ্য থেকে বাঘের হারিয়ে যাওয়ার পিছনে কি রয়েছে ৭৮ কিলোমিটার দূরে কালিম্পঙে জলঢাকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘অবদান’-ও?
এই প্রশ্নগুলি উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গেই গবেষণাটি উস্কে দিল কয়েকটি সংশয়ও। ২৩ বছর পর যে ব্যাঘ্র-দর্শনের বিরল সৌভাগ্য হয়েছে শুক্রবার জলপাইগুড়ির বক্সা অভয়ারণ্যে, কপালে তা সইবে কত দিন? বেঁচে থাকার মতো খাদ্য ও পরিবেশ না পেয়ে আর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে সেই বাঘ ফের উধাও হয়ে যাবে না তো বক্সা অভয়ারণ্য থেকে? মারা যাবে না তো বছরতিনেক পর?
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘কমিউনিকেশন্স বায়োলজি’-তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি বড়ই উদ্বেগের খবর দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চালানো সেই গবেষণা জানিয়েছে, কোথাও কোনও বড় বা মাঝারি আকারের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠার পরপরই তার ত্রিসীমানা থেকে উধাও হয়ে যায় বাঘ আর জাগুয়াররা। সেখানে তাদের বহু দিনের বসতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। খাদ্য, প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের অভাবে।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কতটা কেড়েছে বাঘ, জাগুয়ারের বসতি?
গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর যে সব দেশে বাঘ, জাগুয়ার বেশি দেখা যায় সেই সব দেশের বিভিন্ন এলাকায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠার জন্য পাহাড়ি নদীর উপরের দিকের (‘আপস্ট্রিম’) লাগোয়া বন-জঙ্গলগুলি ধ্বংস হয়ে যায়। সর্বনাশ হয় সেই সব এলাকার জলজ তো বটেই, সার্বিক বাস্তুতন্ত্রেরও। তার ফলে, পাহাড়ি নদীগুলির উপরের দিকে বাঘেরা হারিয়ে ফেলেছে প্রায় ১৩ হাজার ৭৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা তাদের বহু পুরনো বসতি। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য পাহাড়ি নদীগুলির স্বাভাবিক স্রোত বার বার বাধা পাচ্ছে। নদীগুলি আর ততটা খরস্রোতা থাকতে পারছে না নীচে নামতে নামতে। দু’পাশে নদীগুলির বিস্তার কমে আসছে। সেগুলি ক্রমশ সরু হয়ে পড়ছে পাহাড় থেকে নীচে নামতে নামতে। জলাভাবে সেগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে। তাতেও নদীর নীচে নেমে আসা দিকটির (‘ডাউনস্ট্রিম’) আশপাশের বন-জঙ্গলগুলি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জলাভাবে পরিবেশ রুক্ষতর হয়ে যাওয়ায়। তার ফলে, প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ওই সব এলাকার সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের। সেখানকার বন-জঙ্গলেও বাঘের পুরনো বসতি কমেছে ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে।
ক্ষয়ক্ষতি দ্বিগুণ হয়েছে জাগুয়ারদের। উত্তরোত্তর বেড়ে চলা জনসংখ্যার বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা মেটাতে দেশে দেশে বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ওঠার জন্য পাহাড়ি নদীগুলির উপরের দিকের অংশে ২৫ হাজার ৩৯৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা তাদের বহু দিনের বসতি হারিয়েছে জাগুয়াররাও। আর সেই নদীগুলির নীচের দিকের অংশে জাগুয়াররা হারিয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকা তাদের বহু দিনের বসতি।
গবেষকরা দেখেছেন, এর ফলে বিশ্বে যত বাঘ এখনও টিঁকে রয়েছে, তাদের ২০ শতাংশই পুরোপুরি বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে গত কয়েক দশক ধরে। একই কারণে বাস্তচ্যুত হয়ে পড়েছে ০.৫ শতাংশ জাগুয়ারও।
তবে জাগুয়ারদের জন্য যে আরও দুঃসহ দিন অপেক্ষা করছে, সে কথাও জানিয়ে দিয়েছেন গবেষকরা। চিনের সাদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির দুই অধ্যাপক অ্যানা ফিলিপ্পা পালমেইরিম ও লিউক গিবসন তাঁদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, বিশ্বে এখন যত জাগুয়ার টিঁকে রয়েছে, তাদের অর্ধেকই থাকে ব্রাজিলের বৃষ্টি অরণ্যে। যেখানে আগামী দিনে একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠতে চলেছে। ফলে, জাগুয়ারদের আরও বেশি করে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার দিন ঘনিয়ে এসেছে। তবে ভারতে জাগুয়ার দেখা যায় না। ভারতে পাওয়া যায় চিতাবাঘ। চিতাবাঘ কখনও গভীর অরণ্যেও থাকে না। তাই চিতাবাধকেই বেশি ঢুকে পড়তে দেখা যায় লোকালয়ে।
পুরনো বসতি কেন ছাড়তে হয়েছে বাঘ, জাগুয়ারদের?
এর কারণ কিছুটা জানিয়েছিল আগের গবেষণাগুলিই। দেখিয়েছিল, বাঘ আর জাগুয়াররা নিজেদের এলাকায় একটু ছড়িয়ে থাকতে ভালবাসে। অনেকটা জায়গা জুড়ে ‘রাজত্ব’ করতে চায় তারা। শিকার কতটা রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে একেকটি বাঘের রাজত্ব করার সেই এলাকা কতটা বড় হবে বা ছোট। শিকার বেশি থাকলে একেকটি বাঘের এলাকা ১০ কিলোমিটারের বেশি হয় না। কিন্তু শিকার কম থাকলে সেই এলাকা ১০০ কিলোমিটারও হয়ে যায়।
ছোট জায়গায় বেঁচে থাকার ‘বদভ্যাস’-এ এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি বাঘ, জাগুয়াররা। তাদের স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ানোর জন্য দরকার হয় বড়বড় ঘাসে ঢাকা মাইলের পর মাইল জমি। শিকার ধরার জন্য যাতে তারা আজ এখানে, তো কাল ওখানে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। লুকিয়ে, শিকারকে ধোঁকা দিতে। অন্য বাঘের সঙ্গে তারা যাতে এলাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতে পারে। যে যার নিজের এলাকায় ‘রাজা’। অন্যের এলাকায় ঢুকে শিকার ধরার ‘অধিকার’ থাকে না কারও।
আগের গবেষণাগুলি এ-ও জানিয়েছে, কোনও এলাকায় বড় বা মাঝারি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠলেই নদীর উপরের দিকের অংশে গড়ে ওঠা বিশাল বিশাল কৃত্রিম জলাধারগুলি (‘রিজার্ভার’) থেকে উপচে পড়া জলে ভেসে যায় ঘাসে ঢাকা মাইলের পর মাইল জমি। তখন ওই সব জায়গাকে আর বাসযোগ্য মনে করে না বাঘ, জাগুয়াররা। কারণ, ওই সব এলাকায় আর বড় বড় উঁচু উঁচু ঘাস থাকে না। থাকে না খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত তৃণভোজী প্রাণী (‘হার্বিভোরাস’)। যারা মূলত ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ খেয়েই বেঁচে থাকে। সেই তৃণভোজী প্রাণীদেরই তো মূলত শিকার করে বাঘ, জাগুয়াররা।
গবেষণা জানিয়েছে, বিশ্বের ৯৩ শতাংশ বাঘ ইতিমধ্যেই এই ভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন বনাঞ্চলে রয়েছে আর মাত্র ৩ হাজার ২০০টির সামান্য কিছু বেশি বাঘ।
প্রশ্ন উঠেছে— একই ঘটনা কি ঘটেছে জলপাইগুড়ির বক্সা অভয়ারণ্যের বাঘ গত আড়াই দশক ধরে উধাও হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও?
এই বাঘ বক্সার নয়, ভুটানের, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এ ব্যাপারে ‘আনন্দবাজার অনলাইন’-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছে দুই বন, পরিবেশ ও বাঘ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তাঁদের একজন অতনু রাহা। পশ্চিমবঙ্গের ইকো-ট্যুরিজম অ্যাডভাইসরি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল। অন্য জন বন, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ রক্ষায় গত ছয় দশক ধরে নিবেদিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ)’-এর সুন্দরবন এলাকার প্রধান অনুরাগ দণ্ড। দু’জনেই আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফলকে মেনে নিয়েছেন।
অতনুবাবু জানিয়েছেন, বক্সা অভয়ারাণ্য থেকে বাঘের হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ সেই অরণ্যের ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ ও সংশ্লিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের মূলোৎপাটন করে সেখানে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে শাল, সেগুন জাতীয় উদ্ভিদ ধারাবহিক ভাবে লাগিয়ে যাওয়া। আরও কারণের মধ্যে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত বাঘ শিকার। বাঘের চামড়া বিক্রির প্রয়োজনে। তবে অন্য কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হতে পারে খুব দূরে না থাকা দু’-দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
দুই বিশেষজ্ঞই নিশ্চিত, শুক্রবার বক্সার অভয়ারণ্যে বন দফতরের পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় যে বাঘটির ছবি ধরা পড়েছে তা বক্সার ‘নিজস্ব’ নয়। সেটি এসেছে ভুটানের দিক থেকে, পাহাড়ের উপরের দিকের অরণ্য থেকে। সেখানে কোনও কারণে রাজত্ব করার এলাকা হারিয়ে, নতুন জায়গায় শিকার খুঁজতে। কিন্তু বক্সায় সেই শিকার ও পরিবেশ বাঘটি পাবে না। ফলে, হয় সে আবার ফিরে যাবে ভুটানের অরণ্যে। না হলে বছর তিনেকের মধ্যে মারা যাবে।
অতনুবাবু ও অনুরাগবাবু দু’জনেই দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলেছেন, ‘‘এই বাঘটির হদিশ মেলায় বক্সার অভয়ারণ্যে আবার বাঘ ফিরে এল বলে উৎসাহিত হয়ে ওঠার কোনও কারণই নেই। সেই উৎসাহ হবে বালখিল্যসুলভ আচরণ। এটি একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা। বক্সায় বাঘের বেঁচে থাকা সম্ভব নয় বেশি দিন। থাকলে এই বাঘটিও বাঁচবে না বেশি দিন।’’
এই বাঘ কেন বেশি দিন বাঁচতে পারবে না বক্সায়?
অনুরাগবাবু জানিয়েছেন, এর একটি কারণ— বক্সা থেকে খুব দূরে না থাকা দু’-দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠলেই পাহড়ি নদীর উপরের দিক ও নীচের দিকে বিস্তীর্ণ এলাকার সার্বিক বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। শুধুই বক্সা নয়, গরুমারা-সহ লাগোয়া ৫টি অভয়ারণ্যের ক্ষেত্রেও তা না ঘটলেই অবাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটত। অতনুবাবু জানিয়েছেন দ্বিতীয় কারণ। তাঁর মতে, ব্রিটিশ আমলে বক্সা-সহ এলাকার পাঁচটি অরণ্যে নির্বিচারে ঘাস-সহ সেখানকার স্বাভাবিক উদ্ভিদের মূলোৎপাটন করে সেখানে শাল, সেগুন গাছ বসানো হয়েছিল। রেল লাইন পাতা-সহ অন্যান্য কাজে। অবহেলা করা হয়েছিল বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ঘাস-সহ অরণ্যগুলির অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উদ্ভিদগুলিকে। যাদের বলা হয়— ‘ইকোলজি-ফ্রেন্ডলি প্ল্যান্ট্স’। তার পরিবর্তে দেদার বসানো হয়েছিল শাল, সেগুনের মতো গাছগুলি। যাদের বলা হয়— ‘ইকনমি-ফ্রেন্ডলি প্ল্যান্ট্স’। স্বাধীনতার পর আটের দশক পর্যন্ত সেটিই রীতি হয়ে থেকেছে বক্সা-সহ ওই এলাকার পাঁচটি অরণ্যে। ফলে, তৃণভোজী পশুরাও আর বেঁচে থাকার রসদ পায়নি ওই সব এলাকায়। তাদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। তারই পরিণতিতে গত শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই বক্সা-সহ পাঁচটি অরণ্যে বাঘ হারিয়ে যেতে শুরু করে তাদের শিকার— তৃণভোজী প্রাণীর অভাবে।
অতনুবাবুর কথায়, ‘‘বাঘেরা সাধারণত ১৪/১৫ বছর বাঁচে। তিন-চার বছরের মধ্যেই তারা শুরু করে বংশবৃদ্ধি। কিন্তু ওরা খুবই দায়িত্বশীল। যদি বোঝে কোনও এলাকায় শিকারের সংখ্যা খুব উদ্বেগজনক ভাবে কমে গিয়েছে, তা হলে সেখানে তারা আর বংশবৃদ্ধি করে না। বাঘশাবকরা সেই এলাকায় শিকার পাবে না বলে। আটের দশক থেকে এই ভাবেই বক্সা-সহ এলাকার পাঁচটি অরণ্যে বাঘ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। যে বাঘটির হদিশ মিলেছে শুক্রবার, সেটিরও একই অবস্থা হবে। যখন বুঝতে পারবে, পর্যাপ্ত শিকার সেখানে নেই তখন অন্য জায়গা থেকে আর একটি বাঘ এনে দেওয়া হলেও তারা বংশবিস্তার করবে না। সে ক্ষেত্রে হয় একাকী হয়ে পড়ে বছর তিনেকের মধ্যে বাঘটি মারা যাবে। না হলে বাঘটি যেখান থেকে এসেছে ফিরে যাবে পাহাড়ের উপরের দিকে সেই ভুটানের অরণ্যেই।’’
বাঘেরা আন্তরিক ভাবেই চায়, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’!
সদ্য হদিশ পাওয়া বাঘটি যে আদতে বক্সার হতে পারে না, তা জানিয়ে অনুরাগবাবুর বক্তব্য, খুব দূরে না থাকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য পাহাড়ি নদীর উপরের দিক ও নীচের দিকে বিচরণের বিস্তীর্ণ জমি হারিয়েই বাঘ বক্সা-সহ এলাকার পাঁচটি অরণ্য ছেড়ে ভুটানে চলে যেতে শুরু করেছিল গত শতাব্দীর ছয়ের দশক থেকেই। সেটাই অনিবার্য ছিল। তার পর ১৯৯৮ থেকে যে টানা আড়াই দশক বক্সায় আর বাঘের দেখা মেলেনি, তা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
উৎসাহের শেষ হবে কি তীব্র হতাশায়!
কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ ছাড়াই বক্সার বাঘ নিয়ে অযথা উৎসাহিত হয়ে পড়ার ফলে হতাশাই শেষমেশ অনিবার্য পরিণতি হতে চলেছে আমাদের। বিশেষজ্ঞরা অন্তত তেমনটাই মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy